আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী মিশনে কাজ করেছেন দুই দফায়। আয় করেছেন প্রায় ৮৪ হাজার ডলার। এই টাকায় তিনি স্থায়ী আমানত, সঞ্চয়পত্র কিনে রাখেন। বেতন-ভাতার পাশাপাশি আমানত ও সঞ্চয়পত্রের আয়ের টাকা দিয়েই চলত পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমানের সংসার। মিশনে প্রথম দফায় কসোভোতে ১ বছর ৯ মাস ২৮ দিন এবং দ্বিতীয় দফায় ছিলেন একই দেশে ১৩ মাস।
বুধবার রাজধানীর চামেলীবাগে ভাড়া ফ্ল্যাটে সস্ত্রীক খুন হন মেধাবী এই পুলিশ কর্মকর্তা। এমন চাঞ্চল্যকর হত্যার পর একমাত্র কন্যা ঐশী খুনের ‘দায়’ স্বীকার করায় দেশব্যাপী ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়। এরপর ঐশীর ‘বখে’ যাওয়া জীবনচিত্র ও ‘বিলাসবহুল’ ফ্ল্যাটে বসবাসসহ তাদের সাংসারিক জীবনের ব্যয় নিয়ে অনেকেই ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা প্রশ্ন তোলেন। কেমন ছিলেন মাহফুজুর রহমান? সৎ, নাকি অসৎ। বেতন-ভাতার বাইরে কী ছিল তার আয়ের উৎস। ফেসবুকসহ অন্যান্য মাধ্যমে ওঠা এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে এসব তথ্য জানা যায়। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, বেতন-ভাতা ও স্থায়ী আমানত থেকে তার মাসিক আয় ছিল ৬০ হাজার টাকার মতো। ছেলেমেয়ের লেখাপড়া আর সংসারের খরচ বাবদ ব্যয় হতো ৫০ হাজার টাকা। এর মধ্যে বাসা ভাড়া ১৮ হাজার ৪শ’ টাকা।
পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, পরিদর্শক পদমর্যাদার এই কর্মকর্তা বেতন-ভাতা বাবদ ২৫ হাজার টাকার মতো পেতেন। চাঞ্চল্যকর এই হত্যার পর মাহফুজুর রহমানের সার্ভিস রেকর্ড ও তার আয়-ব্যয়ের খোঁজ নেওয়া হয়। মাহফুজুর রহমানের সহকর্মী ও পরিবারের সদস্যরা জানান, মাহফুজুর রহমান নিজে মিতব্যয়ী ছিলেন। তবে সন্তানের লেখাপড়া ছিল সর্বাগ্রে। ঐশীকে ২০১০ সালে অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে অষ্টম শ্রেণীতে ভর্তি করান। এরপর রেজাল্ট খারাপ হওয়ায় সে ড্রপ-আউট হয়ে পড়ে। ২০১১ সাল থেকে ঐশী অক্সফোর্ডের ছাত্রী ছিল না। এরপর তাকে ব্যাচে পড়ানো হয়।
রাজধানীর ২, চামেলীবাগের ৫/বি নম্বর ফ্ল্যাটেই ছিল পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক মাহফুজুর রহমানের ‘সাজানো সংসার’ সদস্য সংখ্যা ছিল চারজন। স্বামী-স্ত্রী ছাড়াও তাদের সংসারে ছিল ‘ও’ লেভেল পড়ূয়া কন্যা ঐশী আর ৮ বছরের ছেলে ওহী। এর বাইরে ছিল গৃহকর্মী সুমি। ২৩ বছর পুলিশের চাকরি জীবনে ২৭টি পুরস্কার পেয়েছেন মাহফুজুর। পুরো চাকরি জীবনে তিনি বড় ধরনের কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থার মুখোমুখি হননি। জানা গেছে, মাহফুজুর চামেলীবাগের তিন রুমের যে ফ্ল্যাটে থাকতেন তার ভাড়া ছিল ১৪ হাজার টাকা। আর মাসে সার্ভিস চার্জ ছিল ৪ হাজার টাকা। এর বাইরে তাকে মাসে ৪শ’ টাকা গ্যাস বিল পরিশোধ করতে হতো।
পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, পরিদর্শক হিসেবে মাহফুজুর পুলিশে যোগদান করেন ১৯৯০ সালের ২৭ মার্চ। পদোন্নতি পান ২০০৪ সালের ৪ এপ্রিল। ১৯৯৭ সালের ২৪ আগস্ট থেকে ২০০০ সালের ১৩ আগস্ট পর্যন্ত এসবিতে চাকরি করেন তিনি। ২০০০ সালের ১৪ আগস্ট থেকে ২০১২ সালের ১২ জুলাই পর্যন্ত কসোভোতে শান্তিরক্ষী মিশনে কাজ করেন। দেশে ফিরে আবারও এসবিতে যোগ দেন। ফের ২০০৭ সালের ২৫ জুন থেকে ২০০৮ সালের ১৬ জুলাই পর্যন্ত কসোভো শান্তি মিশনে কাজ করেন। আর পুরো চাকরি জীবনে সার্ক সম্মেলনে নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য জিএস মার্ক (গুড সার্ভিস মার্ক), প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে পুরস্কারসহ ২৭টি পুরস্কার পান। ফের মিশনে যেতে পরীক্ষা দেন মাহফুজুর। সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ায় মিশনে যাওয়ার তালিকায় তার নামও ছিল। মাহফুজুর রহমান ভালো ইংরেজি জানতেন। তিনি এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন।
প্রচলিত ধারণা, পুলিশের অপেক্ষাকৃত ‘অসৎ’ কর্মকর্তারা থানায় দায়িত্ব পালন করতে চান। পরিদর্শক হয়েও মাহফুজ ছিলেন ব্যতিক্রম। তিনি বেশিরভাগ সময় এসবিতে থাকতে চেয়েছেন। ২০০০ সালের পর ২০০৪ সালের অল্প কিছু দিন ফরিদপুরে থানায় কাজ করেছেন। সমকাল ।
চাঁদপুর নিউজ সংবাদ