পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের টানা তিনদিনের কর্মবিরতির কারণে জনগণের ভোগান্তি চরম পর্যায়ে গিয়ে পেঁৗছেছে। শুধুমাত্র পানি সরবরাহ ছাড়া অন্য সকল সেবা বন্ধ রাখায় নানাবিধ সমস্যায় পড়েছে পৌর নাগরিকগণ। এর মধ্যে প্রধানতম হচ্ছে পুরো শহর জুড়ে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ এবং রাতে স্ট্রিট লাইট অর্থাৎ খামে বাতি না জ্বালানোয় অন্ধকারাচ্ছন্ন অবস্থায় থাকে শহর। শহরের গলিপথ সন্ধ্যার পর থেকেই অন্ধকারে পরিণত হয়ে যায়। আর রাত ১০টা কি ১১টার পর যখন সকল মার্কেট ও দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায় তখন পুরো শহর যেনো ভুতুড়ে পরিবেশে আক্রান্ত হয়। শহরের প্রধান সড়ক ও অলিগলি সর্বত্র যেনো ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়। মার্কেট-দোকানের সামনে ও রাস্তার পাশ জুড়ে শুধু আবর্জনা আর আবর্জনা। চাঁদপুর শহরের মাতৃপীঠ স্কুলের মোড় তথা অনন্যা সুপার মার্কেটের বিপরীত পাশে শহরের সবচেয়ে বড় যে ডাস্টবিনটি রয়েছে, সেটির সীমানা পেরিয়ে রাস্তার পাশে অনেক অংশ জুড়ে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। এর পাশ দিয়ে এখন মানুষের আসা-যাওয়া করাটাই কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। শহরের অন্যান্য ডাস্টবিনের অবস্থাও একই। অর্থাৎ তিনদিনের ময়লা-আবর্জনা জমে যা অবস্থা হওয়ার তা-ই হয়েছে। এখন এ আন্দোলন যদি অনির্দিষ্টকালের দিকে চলে যায়, তাহলে জনভোগান্তি কোন্ পর্যায়ে গিয়ে পেঁৗছে সেটিই জনগণকে ভাবিয়ে তুলেছে। তিনদিনের এ কর্মবিরতির শেষদিন ছিলো গতকাল মঙ্গলবার।
এদিকে পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এ আন্দোলন এবং এর ফলে জনগণের ভোগান্তির বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র নাছির উদ্দিন আহমেদ। তিনি আন্দোলনের নামে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করাকে অনাচার বলে উল্লেখ করেছেন।
রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে মাসিক বেতন-ভাতা এবং চাকুরি শেষে পেনশন পাওয়ার দাবিতে সারা বাংলাদেশের পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আন্দোলন করে আসছে অনেকদিন যাবৎ। বিগত দিনে অর্ধদিবস বা পূর্ণদিবস (একদিন) পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মবিরতি পালন করলেও টানা তিনদিন এই প্রথম। গত ২৮ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে গতকাল ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত ছিলো এই তিনদিনের কর্মবিরতির সময়সীমা। কিন্তু গতকাল দুপুরে আন্দোলনকারীরা জানালেন আজ (গতকাল) যদি সরকার থেকে তারা কোনো সদুত্তর না পান তাহলে পরবর্তীতে আন্দোলন লাগাতার শুরু হবে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে চাঁদপুর পৌরসভার সচিব এবং বাংলাদেশ পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারী সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের চট্টগ্রাম বিভাগীয় ও চাঁদপুর জেলা সভাপতি আবুল কালাম ভূঁইয়ার সাথে মুঠোফোনে আলাপকালে তিনি জানান, এটি আমাদের ন্যায্য দাবি। স্থানীয় সরকারের অধীনে তৃণমূল পর্যায়ের সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান হচ্ছে পৌরসভা। সরকারি অন্যান্য সার্ভিস প্রতিষ্ঠানের ন্যায় আমরা নাগরিকদের সেবক হয়ে কাজ করে আসছি। অথচ আমরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছি। আমাদের যে দাবি সেটা আমাদের মৌলিক অধিকার। এ দাবি আদায়ে আমরা ক্রমান্বয়ে কঠোর আন্দোলনের দিকে যাচ্ছি। সরকার আজকের (গতকাল) মধ্যে আমাদের দাবি মানার ব্যাপারে যদি কোনো সদুত্তর না দেয় তাহলে আমাদের এই আন্দোলন ভবিষ্যতে লাগাতার আন্দোলনে রূপ নেবে। আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি শনিবার কেন্দ্রীয় সভাপতি পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা দিবেন। সচিব আবুল কালাম ভূঞা শহরের ময়লা-আবর্জনার বিষয়ে বলেছেন, আজ সব পরিচ্ছন্ন কর্মী নামিয়ে শহর পরিষ্কার করা হবে এবং তিনি নিজে এ কাজ মনিটরিং করবেন।
এদিকে গতকাল দুপুরে এ আন্দোলনের বিষয়ে কথা হয় পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব নাছির উদ্দিন আহমেদের সাথে। তিনি এতে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, লাগাতার আন্দোলনের হুমকি অযৌক্তিক। এটি সরকারের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করার শামিল ছাড়া আর কিছুই নয়। তারা (পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা) এ থেকে সরে না আসলে আমরা বিকল্প চিন্তা করবো। অন্য লোক দিয়ে ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করাসহ অন্য জরুরি নাগরিক সেবা চালিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করতে বাধ্য হবো। কারণ, দাবি আদায়ের নামে জনগণকে ভোগান্তিতে ফেলে তাদেরকে কষ্ট দিতে পারি না।
গতকাল মঙ্গলবার কর্মবিরতির তৃতীয় দিনেও চাঁদপুর পৌরসভা প্রাঙ্গণে সমাবেশ করেছে পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী পৌর ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে সমাবেশ করে এবং কর্মবিরতি পালন করে। চাঁদপুর শহরের দৃশ্যের ন্যায় জেলার সাতটি পৌর এলাকারও। দেশের মোট ৩শ’ ২৬টি পৌরসভায় তিনদিনের এ কর্মবিরতি পালিত হয়।