চাঁদপুর : সুন্দর সৌন্দর্য নজরকাড়ে ফুল প্রেমিক ও জনসাধারণের তাঁর সাথে সৌন্দর্য বারে কৃষি মাঠের। বলছি সূর্যমুখীর কথা। মাঠ জুড়ে হলুদ ফুলের সমারোহে চোখ জুড়াতে আসছেন দর্শনার্থীরা। আর এ দৃশ্যের দেখা মিলছে চাঁদপুরের কচুয়ায় উপজেলায় ডুমুরিয়া, কালঁচো, সাচার, পালাখাল, রহিমানগরহ বিভিন্ন এলাকায়। যেখানে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে সূর্যমুখী চাষ। কম সময় আর স্বল্প খরচে ভালো লাভ পাওয়ায় চাষীরাও বেশ খুশি। ফুল প্রেমিকদের ধারনা এই ফুল সকলে সূর্যের দিকে তাক করে থাকে অস্ত যাওয়া পর্যন্ত। তবে শুধু কচুয়াতেই নয়, সূর্যমূখী ফুলের চাষ হয়েছে হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদ সংলগ্ন উত্তর পাশের্^র মাঠে, হাটিলা ইউনিয়ন, ৫নং সদর ইউনিয়ন, কালচোঁ দক্ষিণ ইউনিয়ন ও চাঁদপুর সদরের কুমারডগী গ্রামেও।
সূর্যমুখী নজরকাড়া সৌন্দর্য পুলকিত করে যে কাউকেই। সেই সাথে তৈল হিসেবেও এর ব্যবহার রয়েছে। বলা হয়ে থাকে, সয়াবিন তৈলের চেয়েও সূর্যমুখীর তৈল বেশি পুষ্টিগুনসম্পন্ন। আর্থিক ভাবে লাভজনক হওয়ায় এ ফসলের চাহিদা বেড়েই চলেছে। চাঁদপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলায় এবারই প্রথম বাণিজ্যিকভাবে সূর্যমুখীর চাষ করা হয়েছে। কচুয়া উপজেলায় ৩০ জন চাষী এ ফুল চাষ করেছেন। মাঠ জুড়ে ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসছেন দর্শনার্থীরা।
চাষীরা বলেন, সূর্যমূখী চাষে এক বিঘা জমিতে খরচ হয় ৮-১০ হাজার টাকা। সামান্য রাসায়নিক সার আর দুইবার সেচ দিতে হয়। নভেম্বরে বীজ বপনের পর ৮০ থেকে ৯৫ দিনের মধ্যে তোলা যায়। প্রতি এক বিঘা জমি থেকে উৎপাদিত বীজ থেকে আয় হবে ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা। সূর্যমুখী গাছ জ্বালানী হিসেবেও ব্যবহার করা যয়। অন্য ফসলের তুলনায় খরচ কম, সে কারণে লাভ বেশি হওয়ার কারণে এই ফুলের চাষ করছি। আগামীতে চাষের আগ্রহও প্রকাশ করছেন কেউ কেউ।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে সূর্যমুখী চাষ বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ ফুলেই পাওয়া যায় বীজ। আর সেই দৃষ্টিকাড়া ফুলের মধ্যে কেউবা সেলফি, কেউবা স্বজন নিয়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ছবি তুলতে ভিড় করছে সব বয়সের নারী পুরুষ। সরকারি কর্মকর্তারাও পরিবার-পরিজন নিয়ে সেখানে ছুটে যাচ্ছেন।
হাজীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাজেদুর রহমান জানান, জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলায় প্রায় ৭ একর ভূমিতে সূর্যমূখী ফুলের চাষ করা হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে এ বীজ সরবরাহ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, শুধুমাত্র সৌন্দর্য্যবর্ধনের জন্য এ ফুল চাষ করা হয়নি। মূলত: তৈল বীজের জন্য এর চাষ করা হয়েছে।
এ কৃষি কর্মকর্তা যোগ করেন, সূর্যমূখী তৈল বিশে^র ১নম্বর ভোজ্য তৈল হিসেবে বিবেচিত। তাই তৈল বীজ হিসেবে সূর্যমূখী ফুলের চাষ করা হয়েছে।
কচুয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম লিটন জানান, নোয়াখালী ফেনী লক্ষীপুর চট্রগ্রাম ও চাঁদপুর কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প এবং রাজস্ব প্রণোদনা আওতায় ২০২০-২১ অর্থ বছরে কচুয়া উপজেলায় ৩০ জন কৃষকদের বারি সূর্যমুখী-৩ জাতের বীজ দেওয়া হয়েছে। তৈল জাতীয় অন্যান্য ফসলের চেয়ে সূর্যমুখী বীজে তৈলের পরিমান ৪০-৪৫ শতাংশ রয়েছে। সূর্যমুখীর তৈল অন্যান্য সাধারণ তৈলের চাইতে পুষ্টিমান ভালো। কোলেস্টরেলমুক্ত সূর্যমুখীর তৈলে রয়েছে অধিক পুষ্টিগুণ। ফলে দিন দিন চাহিদা বাড়ছে সুর্যমুখীর।
কৃষকরা জানান, প্রকৃতিপ্রেমী শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি বিশেষ অনুরোধ এই ফসলগুলো নষ্ট করবেন না। আপনারা যদি সুর্যমুখী আবাদ করতে চান প্রত্যেক উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে যোগা-যোগ করলে আপনাদের আগামীদিনে সার্ভিক সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। সূর্যমুখী চাঁদপুর জেলায় আগামীদিনের সম্ভবনাময়ী অর্থকরী তৈল ফসল এটি নষ্ট করে কৃষককে অনাগ্রহ না করতে বিশেষ অনুরোধ করেন কৃষকগণ।
এই বছর পরীক্ষামূলকভাবে সূর্যমুখী ফুলের চাষাবাদ শুরু করে। সূর্যমুখীর তৈলকে জনপ্রিয় করতেই এ উদ্যোগ তাদের। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে আসেন আগ্রহী চাষীরা। পরামর্শ ও বীজ নিয়ে অনেকেই এখন সূর্যমুখীর আবাদ শুরু করেছেন। চাঁদপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলাগুলোতে চাষীরা ব্যক্তি উদ্যোগে সূর্যমুখীর আবাদ শুরু করেছেন। সূর্যমুখী বীজ একটি লাভ জনক শস্য। সূর্যমুখী তৈলের নানাবিধ স্বাস্থ্যগত গুনাগুন রয়েছে। সূর্যমুখী তৈলের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে সূর্যমুখী ফুলের চাষাবাদ জনপ্রিয় করার লক্ষ্য নিয়েই কাজ করা হচ্ছে। চাষীদের প্রশিক্ষণ, বীজসহ নানা পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট/চাঁদপুরনিউজ/এমএমএ/