প্রতিনিধি
চাঁদপুরের শান্তিপূর্ণ শহরে নৌ ডাকাতরা যেনো তাদের ঘাঁটি শক্তভাবে অবস্থান করে তুলেছে। তারা এখন সন্ধ্যার পরের সময়টাকে নিজেদের সময় মনে করে মেঘনা নদীতে চলাচলকারী যাত্রীবাহী ট্রলারে ডাকাতি করছে। আর ডাকাতির কাজে ব্যবহার করছে স্পীড বোট। চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে বর্তমানে অবৈধভাবে চলছে ১৫টি স্পীড বোট। যার মধ্যে ১টি বোটেরও নেই মেরিন বোর্ড কিংবা সরকারের কোনো অনুমতি। এসব স্পীড বোট কেউ ব্যবহার করছেন বালু মহালের কাজে, কেউবা আবার ব্যক্তিগত কাজসহ মানুষ পারাপারের কাজে। মাত্র অল্প ক� দিনের মধ্যে হঠাৎ করে জেলা শহরে স্পীড বোটের সংখ্যা বেড়েছে। এর ফলে দু� একদিন পরপরই নদীতে ডাকাতিসহ ঘটছে দুর্ঘটনা।
বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনেই চাঁদপুর প্রেসক্লাব ঘাটের পেছনে ডাকাতিয়া নদীতে স্পীড বোটের ঢেউয়ের আঘাতে নৌকা কাত হয়ে স্কুল পড়�য়া মীম নামে এক শিশুর সলিল সমাধি ঘটে।
গত ১৫ এপ্রিল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় চাঁদপুর থেকে বরযাত্রীর একটি ট্রলার উত্তর তারাবুনিয়া যায়। সন্ধ্যার সময় ওই বিয়ে বাড়ি থেকে নববধূসহ আত্মীয় স্বজনদের নিয়ে বরের লোকজন চাঁদপুর বড় স্টেশনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে। সন্ধ্যা ৭টার কিছুক্ষণ আগেই রাজরাজেশ্বর এলাকায় বরযাত্রী ট্রলারটিকে গতিরোধ করে একটি স্পীড বোট। ট্রলারে থাকা ক�জন যাত্রী জানায়, �পীড বোটের মধ্যে প্রায় ৬ জনের একটি ডাকাত দল ছিলো। তারা বিয়ে বাড়ি থেকে ফেরা সকলের কাছ থেকে নগদ টাকা, স্বর্ণলঙ্কারসহ মোবাইল নিয়ে যায়। ডাকাতদের কাছে পিস্তলসহ দেশীয় অনেক অস্ত্র-শস্ত্র ছিলো। এর আগেও মালবাহী ট্রলারে স্পীড নিয়ে বেশ ক�টি ডাকাতির ঘটনা ঘটলেও স্থানীয় প্রশাসনের টনক নড়েনি। এ দিকে বরযাত্রী ট্রলারে ডাকাতির ঘটনার খবর পেয়ে ওই দিন সন্ধ্যার পর নদীতে যৌথভাবে অভিযান চালায় কোস্টগার্ড ও নৌ পুলিশ। নৌ পথে চলাচলকারী মালবাহী ট্রলার ও যাত্রীবাহী ট্রলারের ক�জন চালক জানায়, মেঘনা নদীতে বর্তমানে ১৫টি স্পীড বোট চলে। এর মধ্যে কোড়ালিয়ার সুমনের ১টি, পুরাণবাজার নয়নের ২টি, বড় স্টেশন ইউসুফ বন্দুকসীর ২টি, চেয়ারম্যান স্টেশনের শাহালম মালের ২টি, নরসিংহপুর ফেরিঘাটের আমিন দিদারের ৩টি, ঈদগাহ বাজারের খলিল দিদারের ১টি ও বালু মহালের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে ৪টি স্পীড বোট। তবে এগুলোর কোনটিরই বিআইডব্লিউটিএর অনুমোদন নেই।
গতকাল অবৈধ স্পীড বোটের ব্যবহার সম্বন্ধে পুলিশ সুপার মোঃ আমির জাফরের সাথে আলাপকালে তিনি জানান, ইতিমধ্যে মেঘনা নদীতে চলাচলকারী অবৈধ ৫টি স্পীড বোট আটকানো হয়েছে। বাকিগুলো আটকের ব্যাপারে অভিযান চলছে। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছে আটককৃত স্পীড বোটের ব্যাপারে যেনো কোনো অনুরোধ না করা হয়।
বিআইডব্লিউটিএ উপ-পরিচালক (বন্দর ও পরিবহন) কর্মকর্তা মোবারক হোসেনের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, নদীতে চলাচলকারী স্পীড বোটগুলোর একটিরও অনুমোদন নেই। এগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হচ্ছে। অনুমোদন ছাড়া কোনো স্পীড বোটই চলতে পারবে না।
চাঁদপুর কোস্টগার্ড স্টেশন কমান্ডার লেঃ হাবিবুর রহমানের সাথে আলাপকালে তিনি জানান, নদীতে চলাচলকারী একটি স্পীড বোটেরও কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই। কোস্টগার্ড ও পুলিশ অভিযান চালিয়ে এ পর্যন্ত ৫টি স্পীড বোট আটক করা হয়েছে এবং বাকিগুলো আটকের ব্যাপারে অভিযান চলছে।
নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোঃ জাহিদ হাসানের সাথে আলাপকালে তিনি জানান, নদীতে চলা বোটগুলোর মেরিন বোর্ডের অনুমোদন নেই। অবৈধ স্পীড বোট আটকের ব্যাপারে অভিযান চলছে।