জাতীয় সম্পদ ইলিশ রক্ষায় প্রজনন মৌসুমে ৫ অক্টোবর থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত পদ্মা-মেঘনার প্রজনন ক্ষেত্র এলাকায় সকল ধরনের মাছ নিধন নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এই সময় ইলিশসহ যে কোন ধরনের মাছ নিধন, পরিবহন, মওজুদ ও বিক্রয় বন্ধ থাকবে। কিন্তু চাঁদপুরের মতলব উত্তরের ষাটনল থেকে শুরু করে দক্ষিণে লক্ষীপুরের চর আলেকজেন্ডার পর্যন্ত ১শ’ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এখন চলছে মা ইলিশ নিধনের মহোৎসব। প্রকাশ্যে দিন ও রাতে কারেন্ট ও গুল্টিজালে মা ইলিশ হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে জেলেরা। অল্প সংখ্যক লোকবল দিয়ে জেলেদের নিয়ন্ত্রণ অসম্ভব হয়ে পড়েছে জেলা টাস্কফোর্সের। তারপরও প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৪ঘন্টা অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
চাঁদপুর সদর উপজেলার বিষ্ণুপুর, তরপুরচন্ডী, চাঁদপুর পৌরসভা, ইব্রাহীমপুর, লক্ষ্মীপুর মডেল ও হানারচর ইউনিয়নের মেঘনা নদীর তীরবর্তী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে প্রতিটি জেলে পাড়ার নৌকা নিয়ে জেলেরা মা ইলিশ নিধন করছে। ৫ তারিখের পূর্বে ইলিশের দেখা তেমনভাবে না মিললেও এখন নদীতে জাল ফেললেই অসংখ্য ছোট বড় ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। এতে করে অনেক জেলে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হলেও মাছের আমদানি দেখে তারাও উৎসাহিত হয়ে নদীতে নামছে।
চাঁদপুর নদী কেন্দ্রের একাধিক ইলিশ গবেষক জানিয়েছেন, পুর্ণিমার আগে ও পরে ১১দিন অভিযান থাকার কারণে দক্ষিনাঞ্চলের জেলেরা মাছ ধরা থেকে বিরত থাকে। নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে ডিম ছাড়ার জন্য সাগর থেকে মা ইলিশগুলো মিঠা পানিতে আসে। আর এই সুযোগে জেলেরা মা ইলিশ নিধন শুরু করে।
গত ৫ অক্টোবর থেকে ইলিশের অনেক আড়ৎ বন্ধ হলেও শুরু হয়েছে ভাসমান আড়তে বেচা কেনা। প্রকাশ্যে দিনের বেলায় আখনের হাট মৎস্য আড়তে মা ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও মেঘনার পশ্চিম পাড়ে আলুর বাজার, রাজরাজেশ্বর, ইশানবালা ইত্যাদি চরকে নিরাপদ মনে করে অনেক জেলে সেখানে লাখ লাখ টাকার মাছ বিক্রি করছে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত হাজার হাজার জেলে এখন পদ্মা-মেঘনায় ইলিশ নিধন করছে। ইলিশ প্রকাশ্যে আড়তে বিক্রি না হলেও জনসচেতনতা না থাকার কারণে প্রতিদিন শহর ও গ্রামাঞ্চল থেকে শত শত মানুষ জেলে ও ভাসমান আড়তে এসে ক্রয় করছে।
হরিণা ঘাট এলাকার জেলে মিজানুর, নজরুল, ইলিয়াছ ও আখনের হাট এলাকার জেলে কামাল, রহিম বেপারী, তাজু মন্সুী জানায়, “অভিযানের পুর্বে আমরা তেমন কোন ইলিশ পাইনি। দক্ষিনাঞ্চলে ইলিশ ধরা বন্ধ হওয়ায় এখন পদ্মা-মেঘনায় প্রচুর পরিমানে ইলিশ ধরা পড়ছে। দাদনদারদের ঋন পরিশোধ করার জন্য বাধ্য হয়ে আমাদের মাছ ধরতে হয়। একেক নৌকার জেলেরা এখন প্রতিদিন ৪০/৫০ হাজার টাকার ইলিশ বিক্রি করছে।”
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. সফিকুর রহমান জানান, জেলেদের নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে কয়েকজনের সাজা হয়েছে। জনসচেতনতার অভাবে মা ইলিশ নিধন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ আনা সম্ভব হচ্ছে না। সাধারণ মানুষ সচেতন না হলে, মা ইলিশ ক্রয় থেকে বিরত না থাকলে এই ধরনের অভিযান সফল করা সম্ভব নয়।
চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মো. ইসমাইল হোসেন টাস্কফোর্সের মাধ্যমে মা ইলিশ রক্ষায় পূর্ব থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন। প্রশাসনের যে পরিমাণ জনবল রয়েছে, তাদের মধ্য থেকে সর্বোচ্চ জনশক্তিকে একাজে সম্পৃক্ত করেছেন। তিনি জানান, মেঘনা নদীর যে সব এলাকায় বেশী ইলিশ নিধন হয়, ওইসব এলাকায় ২জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সার্বক্ষনিক কাজ করছে। এছাড়াও র্যাব, পুলিশ, কোস্টগার্ড, মৎস্য বিভাগ জেলেদের নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। তবে পুর্বের তুলনায় এখন জেলেরা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে। কোন বিশৃংখলা দেখা দিলে তা আমরা তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।
শিরোনাম:
মঙ্গলবার , ১৭ জুন, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ৩ আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।