শওকতআলী ঃ-
চাঁদপুর মৎস্য আড়তে হঠাৎ করে প্রচুর পরিমানে রুপালী ইলিশ আমদানী হওয়ায় ও বরফ সংকটে কারনে ইলিশে পচন দেখা দিয়েছে। যার ফলে ব্যবসায়ীরা ইলিশ কমদামে বিক্রি করে দিচেছ। ৪/৫ গ্রাম ওজনের প্রতি কেজি ইলিশ মাত্র ২শ” টাকায় বিক্রি করতে দেখা যাচেছ। ইলিশের দাম কম হওয়ায় শহর,শহরতলী ও জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে শত-শত সাধারন ক্রেতা ইলিশে স্বাদ গ্রহন করতে ইলিশ ক্রয় করতে ইলিশের আড়ৎ গুলোতে এস ভিড় করছে এবং ইলিশও ক্রয় করতে দেখা যাচেছ। এ ছাড়া সাধারন ক্রেতারা এ ইলিশ কমদামে যাতে না ক্রয় করতে পারে সে জন্য এক শ্রেণীর মজুদদার ব্যবসায়ী পচন ধরা ও নরম হয়ে যাওয়া এ সব ইলিশ কম মূল্যে ক্রয় করে তা” কেটে লবনজাত করে লোনা ইলিশে রুপান্তিত করছে। তারা এসব লোনা ইলিশ বৈশাখ মাসে দেশের বিভিন্ন জেলায় চাহিদা অনুযায়ী বিক্রি করে বেশী মুনাফা করার কাজে লিপ্ত রয়েছে। যার ফলে প্রচুর পরিমানে ইলিশের আমদানী থাকলেও নিন্ম আয়ের মানুষেরা তাদের চাহিদা অনুপাতে ইলিশ ক্রয় করতে পারছেনা বলে ক্রেতা সাধারন জানান। চাঁদপুরে ভর মৌসুমে জাঁকে-জাঁকে ইলিশ মাছ ধরা পরে চাঁদপুরের ৫০টি আড়তের মধ্যে ১১টি আড়তে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত শতাধীক ট্রলার ও ইঞ্জিন চালিত বোর্ডের মাধ্যমে ঢোল ভর্তি হয়ে এ সব ইলিশ মাছঘাটে আসতে শুরু করেছে। প্রচুর ইলিশের আমদানী এক সাথে হওয়ায় চাপের মধ্যে থেকে নীচের ও ইলিশ পচে যাচেছ এবং চাপ লেগে নরম হয়ে পড়ছে। ইলিশের অধিক আমদানী জন্য মাছ ঘাটের আড়ৎদাররা হিমশিম খেতে হচেছ। এত ইলিশ এক সাথে আসার ফলে তারা বেচা বিক্রিতে দিশেহারা হয়ে পড়ছে। প্রতি দিন হাজার হাজার মন ইলিশের আমদানী হচেছ,বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছে। এ সব আড়তের শত-শত ব্যবসায়ী ও হাজার হাজার শ্রমিক কর্মব্যস্ত হয়ে কাজ করছে। এত অধিক পরিমান ইলিশ ধরা পড়ছে ও আমদানী হলেও কি হবে ইলিশ ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারনে ইলিশের দাম তুলনা মূলক হারে কমছেনা। এতে করে সাধারন ক্রেতারা তাদের চাহিদা অনুযায়ী ইলিশ কম মূল্যে ক্রয় করতে পারছেনা। চাঁদপুর মৎস্য আড়তে ব্যবসায়ীদের চাহিদার চাইতে আরো বেশী ইলিশ আমদানীতে ব্যাবসায়ী,ক্রেতা,–বিক্রেতারা ইলিশ ক্রয়-বিক্রয়ে আনন্দে মেতে উঠতে দেখা গেছে।
সরোজনিনে চাঁদপুর মৎস্য আড়তে গিয়ে ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে যায়, দক্ষিন অঞ্চলের ভাটি এলাকা কুয়াকাটা,পাথরঘাটা,মহিবুল,বরিশাল,চরফেশান,সামরাজ,হাতীয়া,রামগতি,ভোলাসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এ সব ইলিশ আমদানী হচেছ। গত এক মাস যাবত ইলিশের ভর মৌসুম শুরু হলেও ইলিশ তেমন ধরা পরছিলনা, জেলে ও ব্যবসায়ীরা হতাশায় দিন কাটাচিছল। হঠাৎ করে গত আগস্টের মধ্য সময় থেকে প্রচুর ইলিশ আমদানী শুরু হয়েছে। যার ফলে ব্যবসায়ী ও জেলেদের মধ্যে আনন্দ দেখা যায়। জেলেরা ইলিশ বিক্রি করে মহাজন ও দাদনদারদের ঋন পরিশোধ করতে পারছে বলে জেলেরা আনন্দের সাথে জানান।
এ লোনা ইলিশ আগামী বৈশাখ মাসে দেশের উত্তরাঞ্চলের রংপুর, ঠাকুরগাঁওসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্রির জন্য কম দামে ইলিশ পেয়ে এখনই ইলিশকে লবন দিয়ে প্রক্রিয়াজাত হচ্ছে লোনা ইলিশে। আর ইলিশের পেটে থাকা ডিম প্লাস্টিকের বাক্সে করে সাথে সাথেই বিক্রি করে পাঠানো হচ্ছে চট্টগ্রামে।
দেশের কয়েকটি ইলিশের অভয়াশ্রম এলাকার মধ্যে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে লক্ষ্মীপুর জেলার চর আলেকজেন্ডার পর্যন্ত ১শ’ কিলোমিটার একটি অভয়াশ্রম এলাকা। এসবএলাকার ইলিশ, দক্ষিণাঞ্চলীয় বরিশাল, ভোলাসহ সাগরের ইলিশ ভরা মৌসুম সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে বেশী ধরা পড়ে। অনেক সময় আমদানি বেশী হলে বরফ সংকটে ইলিশগুলো পঁচে যায়। সংরক্ষণ করতে না পেরে অনেক ব্যবসায়ী এগুলোকে কেটে লবন দিয়ে লোনা ইলিশে পরিণত করেন। আর বহু বছর ধরে এসব ইলিশের কদর বেশী জামালপুর, ময়মনসিংহ, সিলেটের মৌলভী বাজার, রংপুর ও ঠাঁকুরগাঁও জেলায়। তবে জামালপুর জেলার শ্রমিকরাই লোনা ইলিশ সংরক্ষণের কাজে বেশী পারদর্শী। তবে স্থানীয় নারীরাও ইলিশ কাটার কাজে সহযোগিতা করেন।
সোমবার চাঁদপুর মৎস্য আড়ৎ সংলগ্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে,কয়েকটি ঘরে লোনা ইলিশ পক্রিয়াজাত হচ্ছে। সকাল থেকেই শ্রমিকরা এ কাজ করছেন। শ্রমিক মনসুরুল ইসলাম বলেন, তিনিসহ আরো ছয়জন শ্রমিক মেসার্স খন্দকার ফিসিং এর আওতায় লোনা ইলিশ পক্রিয়ার কাজে রয়েছেন, প্রতিদিন দৈনিক ৪শ’ টাকা হাজিরায় ৮ঘন্টা কাজ করছেন। খাওয়া ও থাকার ব্যবস্থা মহাজন করেছেন।
তিনি আরো বলেন, ইলিশগুলো কেটে ডিম বের করে লবন দিয়ে স্তুপ করে রাখা হয়েছে। এখন এসব ইলিশ আবার দীর্ঘ সময় সংরক্ষণের জন্য প্লাস্টিকের বড় বড় ড্রামে ভর্তি করা হচ্ছে। আগামী চৈত্র-বৈশাখ মাস পর্যন্ত ড্রামে থাকলেও কোন ধরনের ক্ষতি হবে না।
মৎস্য ব্যবসায়ী ফারুক হোসেন বলেন, সেপ্টেম্বর মাসে দক্ষিণাঞ্চল থেকে ইলিশের আমদানি বেড়ে যাওয়ায় এবং অনেক ইলিশ ট্রলারযোগে আসতে সময় বেশী লেগে পচেঁ ও নরম হয়ে যাচেছে। ওই সব ইলিশ সংরক্ষণের অভাবে কেটে লোনা ইলিশে পরিণত করা হচ্ছে। ৪শ’ থেকে ১ কেজি ওজনের ইলিশও কেটে লোনা ইলিশ হয়। তবে এ বছর বেশীরভাগ লোনা ইলিশের সাইজ ৩শ’ থেকে ৬শ’ গ্রামের মধ্যে। এখানকার মৎস্য ব্যবসায়ী মালেক খন্দকার, বাবুল হাজী, সবেবরাত, গফুর জমাদার, মানিক জমাদার, মেসবাহ মাল, ইদ্রিছ গাজী, হাজী সিডু মিজি, হাজী খালেক জমাদার প্রতি বছর এ মৌসুমে লোনা ইলিশ পক্রিয়াজাত করেন।
লোনা ইলিশ ব্যবসায়ী ও চাঁদপুর মৎস্য বনিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক শবেবরাত বলেন, ইলিশের আমদানি বাড়লেই লোনা ইলিশ পক্রিয়া হয়। আর এসব কাজে নারী ও পুরুষ শ্রমিকরা দৈনিক হাজিরায় কাজ করেন। জামালপুর, ময়মনসিংহ, রংপুর, ঠাকুরগাঁও জেলায় বিক্রির জন্য এসব লোনা ইলিশ চাঁদপুর থেকে ওই সব জেলার ব্যবসায়ীরা ক্রয় করেন। প্রতিমন লোনা ইলিশ বিক্রি হয় ১৩ থেকে ১৫ হাজার টাকা। আর ইলিশের ডিমগুলো চট্টগ্রামের বিভিন্ন রপ্তানিকারকরা ক্রয় করেন। পরে এসব ডিম বিদেশে রপ্তানি করা হয়।