চাঁদপুরে ভরা মৌশমে পদ্ম-মেঘনায় ইলিশ সংকটের কারণে মতলব উত্তর উপজেলার মেঘনা-ধনাগোদা নদীর পাড়ের জেলেরা ভালো নেই। তারা নানামুখী সমস্যায় জর্জরিত হয়ে জীবন সংসার চালচ্ছে। তারা নিদারুন কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। জানা যায়, নির্বিচারে জাটকা ও পোনামাছ নিধন এবং মহাজনের দাদনের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে অনেক পরিবার পূর্ব পুরুষের এ পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। আবার অনেকেই জাল, নৌকা ও ট্রলার বিক্রি করে মহাদুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন।
উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, মতলব উত্তর উপজেলায় নিবন্ধনকৃত মৎস্যজীবীর সংখ্যা ৫হাজার তিন শ’ ৫৩ জন ও নতুনভাবে আরো নিবন্ধনের জন্য তালিকায় রয়েছে ২ হাজার ৫শ’ ৯০ জন। তাদের মধ্যে নিয়মিত মৎস্যজীবীর সংখ্যা ৫ হাজারের বেশি। খণ্ডকালীন মৎস্য শিকারী প্রায় ১ হাজার। মৎস্য ব্যবসায়ী ১ হাজারেরও বেশি ও আড়ৎদার শতাধিক।
ইলিশের পোনা জাটকা রক্ষায় সরকার ২০০৩ সালে মেঘনাসহ দেশের তিনটি নদী অঞ্চলকে মার্চ-এপ্রিল দু’মাস অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করে। এ সময় নদীতে সকল প্রকার মাছ ধরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে লক্ষ্মীপুর জেলার চরআলেকজান্ডার পর্যন্ত মেঘনার একশ’ ২০ কিলোমিটার নদী অঞ্চল দেশের অন্যতম অভয়াশ্রম অঞ্চল। অভয়াশ্রম কার্যক্রমে সময় মূলধন ঝুঁকি ও আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কায় ইলিশ, পাঙ্গাস, আইড়, বোয়ালসহ বড় প্রজাতির মাছ ধরার কোনাজাল, চাপজাল ও ডোম জালের অধিকাংশ মালিকরা নিজেরাই জাল নৌকা বন্ধ রাখে। ফলে এসব নৌকার জেলেরা বেকার হয়ে পড়ে। অভয়াশ্রম কর্মসূচির শেষে বন্ধ জাল নৌকার মালিকরা ধারদেনা করে ও ঋণ দিয়ে জাল নৌকা মেরামত করে ভাগিদার জেলেদের দাদন টাকা দিয়ে নদীতে নামে। নদীর মাছ শিকারে কোনো নিয়মনীতি মানা হচ্ছে না। কারেন্ট জাল, মশারি জাল ও ঘনজাল ব্যবহারের ফলে নদীতে মাছের আকাল দেখা দিয়েছে। কিন্তু মেঘনা ও ধনাগোদা নদীতে এখনো ইলিশ আসছে না। ফলে নদীতে নেমে জেলেরা শূন্য হাতে ফিরে আসছে। ইলিশ ধরার একটি কোনা জাল নৌকার সারাদিন মাছ ধরতে ডিজেল ও জেলেদের খাবারসহ দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা খরচ হয়। জেলেরা সারা দিন শ্রম দিয়েও খরচের টাকার মাছ পাচ্ছে না। জেলেদের লোকসান হচ্ছে। মালিক ও জেলেরা বাধ্য হয়ে জাল নৌকা বন্ধ রাখছে। এ কারণে মতলবের হাজার হাজার জেলের মাঝে এখন দুর্দিন দেখা দিয়েছে। অভয়াশ্রমের যাঁতাকলে পিষ্ট জেলেদের উপর এ যেনো মরার উপর খাড়ার ঘা।
এদিকে উপজেলার অধিকাংশ খাল-বিল ও জলাশয়গুলো লীজ দেয়া হচ্ছে। জেলেদের জীবিকার উৎস ছিল খাল-বিল ও জলাশয়গুলো। খাল-বিল ও জলাশয়গুলো অন্যদের দখলে চলে যাওয়ায় তারা তাদের এ পেশা নিয়ে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। মেঘনা-ধনাগোদা নদীর পাড়ের বিভিন্ন জেলে পল¬ীতে গেলে দেখা যায়, তাদের কষ্টের করুণ জীবনচিত্র। পুষ্টিহীনতার শিকার শীর্ণ শিশুদের বেঁচে থাকার আকুল আকুতি। কয়েকজন জেলে ক্ষোভ ও দুঃখের সঙ্গে জানায়, কেউ তাদের খোঁজ নেয় না। জানতে চায় না তাদের সুখ-দুঃখ, সুবিধা-অসুবিধার কথা। অভয়াশ্রমের দু’মাস যারা জেলে তারা নদীতে নামে না। সুবিধাবাদীরা নদীতে নামে।
দুই মাস হাত পা গুঁটিয়ে বসে থাকা জেলেরা উৎসাহ নিয়ে ইলিশ ধরার উদ্দেশ্যে জাল নিয়ে ছুটছে মেঘনায়। কিন্তু দিনভর মেঘনায় কাটালেও তাদের জালে রূপালী ইলিশ ধরা পড়ছে না। ৮/১০ ঘন্টা শ্রম দেয়ার পর জেলেরা নিরাশ হয়ে বাড়ি ফিরছে। মাছ না পেয়ে মালিক ও জেলেরা চরম দুরবস্থার মুখে পড়েছে। সংসারের চাহিদা মেটাতে তাদের দারস্থ হতে হচ্ছে গ্রাম্য মহাজন ও বিভিন্ন এনজিও প্রতিষ্ঠানের কাছে। তারা মেঘনায় অভয়াশ্রম ও এখন মাছের আকালের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত জাল নৌকার মালিক ও জেলেদের রক্ষায় জরুরি ভিত্তিতে সুদমুক্ত ঋণ ও ডিজেল ভর্তুকি প্রদানে সরকারের নিকট দাবি জানিয়েছেন।
শিরোনাম:
বৃহস্পতিবার , ২২ মে, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ৮ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।