প্রতিনিধি
চরাঞ্চলের মানুষের চাঁদপুর জেলা শহরে আসার একমাত্র বাহন ট্রলার বা টেম্পু। প্রমত্তা মেঘনা নদী পাড়ি দেয়া যাত্রী বহনকারী এ সকল ট্রলার বা টেম্পুতে নেই কোনো বয়া বা লাইফ জ্যাকেট। যার কারণে প্রতিদিনই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জীবনের তাগিদে চাঁদপুর শহরে পাড়ি দিতে হয় চরাঞ্চলের হাজারো নারী-পুরুষকে।
চাঁদপুর শহর ঘিরে থাকা মেঘনা নদীর পশ্চিম পাড়ে অবস্থিত মোল্লার বাজার, মাস্টারের ঘাট, চেয়ারম্যান স্টেশন, নুরু মাঝির বাজার, আপামোল্লার বাজার, ট্যাহের বাজার, মালের বাজার, বেপারী বাজার, তারাবুনিয়া, গৌরাঙ্গের বাজার, তারাবুনিয়া স্টেশন বাজার, মনা হালদারের বাজার, রাজরাজেশ্বর, ঈশানবালা, আলুর বাজার, ঈদগাহ বাজার, জালালপুর, কোদালপুর, ঘোষেরহাট, বাংলাবাজার, সাহেব বাজারসহ পশ্চিম পাড়ের চরাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষজনকে চট্টগ্রামের বিভাগের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াতের জন্য প্রমত্তা মেঘনা নদী পাড়ি দিতে হয়। পাশাপাশি এ সকল চলাঞ্চলের মানুষকে নিত্য প্রয়োজনীয় কাজের জন্য চাঁদপুর জেলা শহরেও আসতে হয়। নদী পাড়ি দিয়ে আসা যাওয়ার একমাত্র বাহন হলো ইঞ্জিন চালিত নৌকা বা ট্রলার। আর এ সকল ট্রলারে যাত্রী নিরাপত্তার লক্ষ্যে নেই কোনো লাইফ জ্যাকেট বা বয়া। ২/১টি ট্রলারে লাইফ জ্যাকেট বা বয়া থাকলেও তা রাখা হয়েছে চালকদের জন্য। নিত্য কাজের সন্ধানে প্রতিদিনই শহরমুখী হচ্ছে মানুষ। আর এ শহরমুখী মানুষকে চাঁদপুর পুরাণবাজার এলাকায় পৌঁছে দিতে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে নৌপথে ট্রলার বা টেম্পুর। চাঁদপুরের সাথে চরাঞ্চলের মানুষের যাতায়াতের জন্য নেই কোনো লঞ্চ সার্ভিস। যদিও ২/১ জায়গায় লঞ্চ সার্ভিস থেকে থাকে তা সারা দিনে ১ বার কি ২ বার ঐ লঞ্চের পরিসেবা পাওয়া যায়। কিন্তু ট্রলার বা নৌকা প্রতি ঘণ্টায় চরাঞ্চলের বিভিন্ন স্থান থেকে চাঁদপুর শহরে আসে। আবার অনুরূপভাবে চাঁদপুর থেকে চরাঞ্চলের উদ্দেশ্যে ফিরে যায়। ফলে নদীতে চলাঞ্চলে যাওয়া আসার জন্য ট্রলার বা নৌকা সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও যাত্রী সাধারণের জন্য বৃদ্ধি পায়নি কোনো সুযোগ সুবিধা। অথচ প্রতিটি ট্রলার বা নৌকা যাত্রী নিয়ে চাঁদপুর পুরাণবাজার এলাকায় পৌঁছলে তাদের ঐ সকল ট্রলার বা নৌকা থেকে ৩৫ থেকে ৬০ টাকা করে খাজনা আদায় করা হয়। কিন্তু যাত্রী সাধারণের সুবিধার্থে এদের ট্রলার বা নৌকা হতে উঠনামা করতে নেই কোনো পুরাণবাজার অংশে সিঁড়ি বা ঘাট।
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ সকল যাত্রী সাধারণ যেমনিভাবে প্রমত্তা মেঘনা নদী পাড়ি দেয়, তেমনিভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের কাঁধে নিয়ে এ সকল ট্রলার বা নৌকা থেকে নামতে হয়। আর নামতে গিয়ে অনেক সময় এ সকল যাত্রীদের অনেকেই কমবেশি আহত হয়। চরাঞ্চলের এ সকল যাত্রীদের পারাপারে নিয়োজিত ট্রলার বা ইঞ্জিনচালিত নৌকায় পর্যাপ্ত বয়া বা লাইফ জ্যাকেট আবশ্যক রাখা প্রয়োজন বলে মনে করেন অভিজ্ঞ মহল। এ রূটে চলাচলকারী যাত্রী সাধারণ তাদের অনেকেই মনে করেন দুর্ঘটনা জানান দিয়ে আসে না। চরাঞ্চলের এ সকল স্থান থেকে যতো ট্রলার বা নৌকা চাঁদপুরে পাড়ি জমায় সকলকে প্রমত্তা মেঘনার তুমল জলরাশি ও উত্তাল ঢেউ পাড়ি দিয়ে পাড়ে ভিড়তে হয়। আর নৌপথে চলাচলকারী এ সকল যানবাহনে নেই কোনো নজরদারি, সকাল ৬টা থেকে এদের যাত্রা শুরু হয়ে চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। চরাঞ্চল থেকে নৌ পথে আসা এ সকল যানবাহনের অধিকাংশই পুরাণবাজারের মদীনা মসজিদ পশ্চিম বাজার টেম্পুঘাট এলাকায় ভিড়ে। এ সকল স্থানেও নেই পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা। যদি এ সকল রূটে চলাচলকৃত যানবাহনের প্রতি পর্যাপ্ত নজর দেয়া না হয় তাহলে যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা দেখা দিতে পারে।