চাঁদপুরে প্রশাসনের ব্যাপক তৎপরতার ফলে পেঁয়াজের দাম কমে এসেছে
ঃ সোহেল রুশদী ঃ
চাঁদপুরে পেঁয়াজের ঊর্ধ্বমূল্য রোধে বাজার মনিটরিং ও প্রশাসনের ব্যাপক তৎপরতায় চাঁদপুর শহরের পুরানবাজার, নতুনবাজার, পালবাজার ও বিপনীবাগসহ বিভিন্ন বাজারে পেঁয়াজের দাম কমে এসেছে। চাঁদপুর জেলা প্রশাসক মো:মাজেদুর রহমান খানের নির্দেশে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও জেলা মার্কেটিং অফিসের যৌথ অভিযান ও মনিটরিং এর ফলে এটা সম্ভব হয়েছে । অভিযানে চাঁদপুর পুলিশ সুপার মো. মাহবুবুর রহমান বিপিএম (বার) এর নির্দেশে সংশ্লিষ্ট থানার অফিসার ইনচার্জগণ সহযোগিতা করেছেন। দাম আরো কমে আসবে বলে জেলা প্রশাসনের ধারনা । বিশেষ করে চাঁদপুর জেলা গোয়েন্দা সংস্থারগুলো কঠোর মনিটরিং ছিলো চোখে পড়ার মতো । এনএসআই চাঁদপুর অফিসের মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক তৎপরতা রয়েছে । চাঁদপুরের মিডিয়া সব সময় প্রশাসনের এই কাজে সার্বিক সহযোগিতা করেছে । বিশেষ করে চাঁদপুর প্রেসক্লাব,স্থানীয় পত্রিকা সম্পাদক ,ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া ও সাংবাদিকদের সহযোগিতা ছিলো উল্লেখ্যযোগ্য । আর এতে করে জনসাধারণের মাঝে অনেটা আস্থা ফিরে এসেছে ।
প্রশাসনের যৌথ হস্তক্ষেপে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৭০ টাকা দাম কমে বিক্রি হচ্ছে । বর্তমানে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা। আশা করা যাচ্ছে সহসাই পেঁয়াজের দাম আরো কমে আসবে । এর আগে গত শনি ও রোববার প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা কেজি দরে। চাঁদপুর জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খান এর নির্দেশে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (আইসিটি ও শিক্ষা) ও উপ-সচিব মোহাম্মদ শওকত ওসমান, ,অতিরিক্ত পুলিশ সুাপর (পুলিশ সুপার পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মো. মিজানুর রহমান, এন এস আই যুগ্ম পরিচালক আজিজুল হক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. জামাল হোসেন, জেলা মার্কেটিং অফিসার এন এম রেজাউল ইসলাম, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মঞ্জুরুল মোরশেদ, চাঁদপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাসিম উদ্দিন, ওসি তদন্ত হারুনুর রশিদসহ জেলা প্রশাসন , পুলিশ প্রশাসন ও জেলা মার্কেটিং অফিসের ব্যাপক তৎপর থাকায় অতিদ্রুত পাইকারি ও খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম কমে এসেছে। পাইকারি বাজারে ১শ’ ৫০ থেকে ১৬০ টাকার নিচে নেমে এসেছে পেঁয়াজের দাম। গতকাল মঙ্গলবার চাঁদপুর জেলার বিভিন্ন বাজারে কেজিতে ৫০ থেকে ৭০ টাকা কমেছে দেশি পেঁয়াজের দাম। একই সঙ্গে কমেছে আমদানি করা পেঁয়াজের দামও। তবে খুচরা বাজারে এখনো ১শ’ ৭০ থেকে ১৮০ টাকার কাছাকাছি দামে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। ব্যবসায়ীরা বলছেন চড়া দামের কারণে ঘরে ঘরে এখন পেঁয়াজের ব্যবহার কমে গেছে। এতে বাজারগুলোতে ক্রেতার সংখ্যা অনেক কম। পেঁয়াজের সরবরাহ আসার খবরে এবং বিভিন্ন বাজারে ম্যাজিস্ট্রেটের অভিযানে পেঁয়াজের ঝাঁজ কিছুটা কমে গেছে। গত ২৯ সেপ্টেম্বর ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। এর পরই অস্থির হয়ে ওঠে দেশের পেঁয়াজের বাজার। ৬০ থেকে ৭০ টাকার পেঁয়াজ এক লাফে শতক ছাড়ায়। এরপর বাজারে দাম বাড়তে বাড়তে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছিল পেঁয়াজ। চলতি মাসে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতের পর হঠাৎ করেই আবার দাম বাড়তে থাকে। দুই দিনের মধ্যে ১২০ থেকে ১৫০ টাকা কেজির পেঁয়াজ বেড়ে ২০০ টাকার ওপরে উঠে যায়। খুব দ্রুতই দাম আড়াই শ’ টাকার কাছাকাছি চলে আসে। গত শুক্র ও শনিবার জেলার বিভিন্ন বাজারে ২৫০ টাকার আশপাশে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়। তবে গত রোববার থেকে কিছুটা কমে আসতে থাকে দাম। গতকাল মঙ্গলবার জেলার অন্যতম পাইকারি বাজার পালবাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা দরে। মিসর ও মিয়ানমারের পেঁয়াজের দাম আরও কমেছে। কেজি প্রতি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চাঁদপুর পুরান বাজার পেঁয়াজের দাম আরও কমেছে। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ টাকা দরে। মিয়ানমারের ভালো মানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৬০-১৭০ টাকা কেজি দরে। গতকালও ১৮০ টাকা থেকে ১৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছে দেশি পেঁয়াজ।
পালবাজারের পাইকারি আড়তদার সুভাষ বাবু বলেন, তিন কারণে পাইকারি বাজারে কমেছে পেঁয়াজের দাম। এক. বিমানে করে পেঁয়াজ আসছে। দুই. ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ ইতিমধ্যে চলে এসেছে চট্টগ্রামে। তিন. ভোক্তারা পেঁয়াজ খাওয়াই কমিয়ে দিয়েছে। ক্রেতা না থাকায় চাঁদপুর জেলা ও উপজেলায় পেঁয়াজের দামও কমতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। গত সোমবার মিয়ানমার থেকে আমদানি হওয়া পেঁয়াজ কেজি প্রতি ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। গত রোববার বিকেলে তা ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। এ হিসাবে কেজিপ্রতি প্রায় ৪০ টাকা কমেছে। মিয়ানমার ছাড়াও তুরস্ক, চীন ও মিসরের পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। গতকাল এসব দেশের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ১৬০-১৭০ টাকায়।
পালবাজারের পাইকারি আড়ত হামিদুল্লাহ বলেন, গত সোমবার ও মঙ্গলবার এই দুই দিনে কেজিপ্রতি পেঁয়াজের দাম ৭০ টাকা কমেছে। ক্রেতা না থাকায় মূলত ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ ছেড়ে দিতে চাইছেন। এতে দাম দ্রুত কমছে। পাইকারি বাজারে কমলেও খুচরায় এখনো ১৭০ টাকার বেশি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বিক্রেতারা জানান, তাঁরা বেশি দরে পেঁয়াজ কিনেছেন। পাইকারিতে দাম কমায় খুচরায়ও এক-দুদিনের মধ্যে দাম কমবে।
জেলার হাজীগঞ্জের দৈনিক চাঁদপুর খবর প্রতিনিধি জানান, শহরের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম গতকাল মঙ্গলবার ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি। মিয়ানমার থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। খুচরা বাজারে এর থেকে ২০ টাকা করে দাম বেশি পড়ছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, ম্যাজিস্ট্রেটের ঘন ঘন মনিটরিংয়ের কারণে দাম কমে এসেছে। পাইকারি কেনা চালান থেকে সর্বোচ্চ ১০ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করতে পারছেন বিক্রেতারা। এ ছাড়া আমদানি করা পেঁয়াজও এসেছে। ফরিদগঞ্জের ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বলেন, ২ জন ম্যাজিস্ট্রেট এই বাজারে সার্বক্ষণিক তদারকি করছেন। কেনা রেটের চেয়ে সর্বোচ্চ ১০ টাকা বেশি নেওয়ার দর বেঁধে দিয়েছেন। এর চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করলে জরিমানা করছেন। গতকাল প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম ছিল ১৬০ থেকে ১৭৫ টাকা। মতলব উত্তর উপজেলার দৈনিক চাঁদপুর খবর প্রতিনিধি জানান, এখানকার সবচেয়ে বড় বাজারে দেশি পেঁয়াজের কেজি ১৬৫ থেকে ১৭৫ টাকা। তবে গত শনিবার বাজারে নতুন পেঁয়াজ উঠেছিল। ওই দিন তা ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। তবে গতকাল ও কোনো নতুন পেঁয়াজ ওঠেনি। হাটের আড়তদার মুননাফ বলছেন, বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আসছে ও নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসছে, এমন খবরে দাম কমেছে। গতকাল প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম ছিল ১৭৫ টাকা। আজ তা কমেছে। এদিকে চাঁদপুর জেলা ও উপজেলার খুচরা-পাইকারি বাজারে কমতে শুরু করেছে পেঁয়াজের দাম। খুচরাবাজারে ২০ টাকা কমে, প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকায়। পাইকারি বাজারে দর এখন ১৫০ টাকাই রয়েছে। কার্গো বিমানে করে পেঁয়াজ আমদানির ঘোষণায় থমকে দাঁড়িয়েছে দেশের পেঁয়াজের বাজার। আড়ত, পাইকারি কিংবা খুচরাবাজার- কোথাও ক্রেতা নেই। মজুদ করা পেঁয়াজ যে যার মতো করে বিক্রি করে দেয়ার চেষ্টা করছেন। রবি-সোমবারও চাঁদপুর জেলা শহরের বাজারগুলোতে ১৯০ টাকার আশপাশে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়। তবে রোববার সেই দাম কিছুটা কমে আসে। গতকাল মঙ্গলবারও বিপণীবাগ খুচরাবাজারে ২০ টাকা কমে, প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকায়; পাইকারি বাজারে দর এখন ১৫০ টাকা রয়েছে বলে জানা গেছে।
এ ছাড়া দেশের উত্তর ও মধ্যঞ্চল থেকে নতুন পেঁয়াজ আসা শুরু করলে আরও কমে আসবে দাম। পাবনাসহ বিভিন্ন স্থানে নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করেছে। খুচরা পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা বলছেন, সকালে যারা মোকাম থেকে পেঁয়াজ সংগ্রহ করেছেন, তারা ১৮০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে ঘোষণা আসার প্রভাব পড়তে শুরু করছে পাইকারি ও খুচরা বাজার গুলোতে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে, ক্রেতাদের ভোগ প্রবণতা কমে আসা। গত সেপ্টেম্বরে ভারত প্রথমে পেঁয়াজের রফতানিমূল্য বৃদ্ধি এবং পরে রফতানি বন্ধ করার পর ধাপে ধাপে বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। পেঁয়াজ আগে কেজি ৩০ টাকা দরে আশপাশে বিক্রি হয়েছে, তা ভারতের রফতানিমূল্য বৃদ্ধির ঘোষণায় ৬০-৭০ টাকায় উঠে যায়। এর পর সেপ্টেম্বরের শেষে পেঁয়াজের দাম বেড়ে ১০০ হয়। পুরো অক্টোবরজুড়ে সরকারের নানামুখী তৎপরতার মধ্যেও পেঁয়াজের দাম ক্রমশ বাড়ে। নভেম্বরে সেই দাম আড়াইশয় ওঠে।
এদিকে চাঁদপুর জেলার ৮ উপজেলায় চাঁদপুর জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খানের নির্দেশে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা, মতলব দক্ষিণ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহমিদা সুলতানা, মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন অক্তার, ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাজিয়া পারভিন, হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বৈশাখী বড়ুয়া, শাহরাস্তি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিরিন আক্তার এবং হাইমচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌসী আক্তার এদের নেতৃত্বে জেলা ও উপজেরা শহর গুলোর প্রধান প্রধান বাজার গুলোতে মনিটরিং করা হয়। পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ অভিযান অব্যাহত ছিলো। অভিযানে চাঁদপুর পুলিশ সুপার মো. মাহবুবুর রহমান বিপিএম (বার) এর নির্দেশে সংশ্লিষ্ট থানার অফিসার ইনচার্জগণ সহযোগিতা করেছেন।
লেখক পরিচিতি :
সোহেল রুশদী
প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ও প্রকাশক,
দৈনিক চাঁদপুর খবর
প্রেসক্লাব রোড চাঁদপুর ।
মোবাইল : ০১৭১১০১৩৪৪৪