শওকত আলী,
চাঁদপুরে প্রান্তিক জনগোষ্ঠি সেবা বলয়ের ক্ষেত্রে সরকারি ভাবে পূর্বে যে অবস্থা ছিলো বর্তমানেও সে অবস্থায় রয়েছে বলে তাদের মাতামত প্রকাশ করেন।
বর্তমান সরকার প্রান্তিক জনগোষ্ঠির জন্য বিশেষ বরাদ্ধের ব্যবস্থা গ্রহণ করে চলছে। জাতীয় সংসদে পর্যন্ত প্রান্তিক জনগোষ্ঠির জীবন মান উন্নয়নের জন্য বাজেটের ব্যবস্থা রেখেছে। সে বাজেট সরকারি বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠিকে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। এ বিষয়ে সরকার প্রদেয় সহযোগীতায় কি রয়েছে তা প্রন্তিক জনগোষ্ঠি অবগত নয় বলে জানান। স্থানীয় সরকারের কাঠামো থেকে প্রান্তিক জনগোষ্ঠিকে কোন ধরনের সহযোগীতা করে না বলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠির নেতারা এ প্রতিনিধিকে জানান।
তারা বলেন, সরকারের যে কাঠামো রয়েছে, সে সব কর্মকর্তা কর্মচারীদের কাছে তারা বৈষম্যের শিকার। তারা তাদেরকে সঠিক ভাবে পরিচালিত হওয়ার ক্ষেত্রে কোন ধরনের দিক নির্দেশনা দেয় না। এছাড়া প্রান্তিক জনগোষ্ঠিকে সরকারের দপ্তর থেকে সঠিক ভাবে মূল্যায়ন ও তাদের অধিকার দিচ্ছে না। বরং অধিকার কি ভাবে পেতে পারে তার জন্য তাদের সঠিক পথ না দেখিয়ে তাদেরকে অন্ধাকারে রেখে তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে বলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠি ধারনা করে তাদের মত প্রকাশ করেন।
তারা আরো বলেন, বিভিন্ন উৎসবের সময় স্থানীয় সরকারের পক্ষ থেকে সামান্য পরিমান সহযোগীতা করে থাকে বলে তারা জানান। বর্তমান সময়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠি সরকারি বেসরকারি কোন সংস্থ্যা থেকে কোন ধরনের সহযোগীতা পাচ্ছেনা বলে তাদের মত প্রকাশ করেন। তাদের মতামত হচ্ছে তারা শুধু সরকারি বেসরকারি সংস্থ্যা ও এদেশের মানুষের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। তাদের জীবন মান উন্নয়নে বেঁচে থাকার জন্য কোন ধরনের প্রদক্ষেপ নিচ্ছেনা এ দেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। প্রান্তিক জনগোষ্ঠির চাঁদপুরে অবস্থানকৃত কয়েক হাজার হরিজন রয়েছে। যারা অত্যান্ত শোচনীয় ভাবে তাদের জীবন জীবিকা অর্জন করে যাচ্ছে। তাদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে যে পরিমান সেবা বলয়ের প্রয়োজন তা তারা পাচ্ছে না বলে সরজমিনে তাদের কাছে গিয়ে আলাপ আলোচনায় এ সত্য কথা প্রকাশ পায়। তারা তাদের সন্তান পরিবার পরিজন নিয়ে অত্যান্ত দুর অবস্থায় থাকতে হচ্ছে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পাচ্ছেনা। তাদের বসবাসের বাসস্থান অনুপযোগী। বর্ষার সময় বৃষ্টি হলে তাদের ঘরের চালা দিয়ে পানি নির্গত হয়। তখন তারা ঘুম বিসর্জন দিয়ে রাতের বেলা বসে থাকতে হয়। তাদের কলোনিগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমান বিশুদ্ধ পানি নেই। নোংরা পরিবেশে তাদের বসবাস। তার মধ্যে আবার বিশুদ্ধ পানির অভাবে মধ্যে থাকতে হয়। সরকারি ভাবে তাদের স্বাস্থ্য পরিক্ষার জন্য যে সেবা বলয়ের প্রয়োজন তা তাদের জন্য নেই। অধিক মানুষ একই স্থানে বসবাসের ফলে বিভিন্ন রোগে তারা আক্রান্ত হয়ে ধুকে ধুকে মরতে হচ্ছে। বিগত বছরগুলোতে সেবা বলয়ে চিকিৎসার জন্য চিকিৎসক টিম এলাকায় এসে রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা দিলেও, বর্তমান সময়ে সে চিকিৎসা সেবা তারা পাচ্ছে না বলে অভিযোগ করে জানান। তাদের সন্তানদের শিক্ষার যে পরিবেশ প্রয়োজন তা চাঁদপুরে তাদের জন্য নেই বলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠির নেতারা জানান। তারপরও তারা মারাত্বক বিড়ম্বনার মধ্যে থেকে যে শিক্ষা অর্জন করলেও তারা শিক্ষার কোন সঠিক মূল্যায়ন পাচ্ছেনা। প্রান্তিক জনগোষ্ঠির সন্তানরা চাকুরী পেলেও তাদেরকে মর্যাদা পূর্ণ ভাবে বসতে দেওয়া হয় না। বিভিন্ন অফিস আদালতে তারা তাদের মর্যাদার চেয়ার পচ্ছে না বলে জানান।
প্রান্তিক জনগোষ্ঠির নেতারা জানান, এ দেশে প্রায় ২শ’ আড়াইশ বছরের অধিক সময়ে এ সম্প্রদায়ের মানুষেরা এদেশে বসবাস রয়েছে। এক সময় তাদের জনসংখ্যা কম ছিলো। তখন তারা সরকারের প্রদেয় সকল প্রকার সহযোগীতা পেতো। তাদের জীবন মানেরও নিরাপত্তা ছিলো। ক্রমান্নয়ে তাদের বংশবৃদ্ধি হয়ে তারা এখন একই এলাকায় হাজারো মানুষের বসবাস। এতে করে তাদের পূর্বের ন্যায় সেই সুযোগ সুবিধা ও নিরাপত্তা থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছে বলে জানান। স্বাধীনতার পূর্বে প্রান্তিক জনগোষ্ঠি যখন এদেশে আসে, তখন তাদের জন্য বসবাসের যে জায়গা দেওয়া হয়েছিলো আজও সেই সিমিত জায়গায়ই রয়েছে। কিন্তু কালের পরিবর্তন ও বংশানুক্রমে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাদের জায়গার পরিধি বাড়েনি। যার ফলে তারা সিমিত জায়গায় গাদা গাদি করে বসবাস করা ছাড়া কোন উপায় নেই। এতে করে তাদের যেমন বাসস্থান সংকট সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি কর্মেরও সংকট দেখা দিয়েছে।
প্রান্তিকরা জানায়, একই জায়গায় অধিক মানুষের বসবাসের ফলে তাদের উপর নেমে এসেছে চতুরমূখী রোগ বালাইর সমস্যা।
প্রন্তিক নেতারা জানান, দেশের প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক চাহিদা অনুযায়ি সমান অধিকার পাওয়ার কথা। কিন্তু এদেশের অন্য সম্প্রদায়ের মানুষরা অধিকার পেলেও প্রান্তিক জনগোষ্ঠিরা তা থেকে অধিকাংশ ক্ষেত্রে একেবারেই বঞ্চিত হচ্ছে।
সরকারের পক্ষ থেকে অনেক সময় যে সেবা দিয়ে থাকে তা শুধু প্রান্তিক নেতারা সংগঠনের মাধ্যমে গ্রহণ করে। সেই সেবা প্রান্তিক জনগোষ্ঠির সদস্যদের কাছে এসে পৌছেনা বলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠির অসহায় মানুষগুলো জানান।
চাঁদপুর রেলওয়ে হরিজন কলোনির শ্রী শ্রী রাধা কৃষ্ণ মহাবীর মন্দীরের সাধারণ সম্পাদক বিধান চন্দ্র দাস (জনি) জানান, পূর্বে সেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে প্রান্তিক জনগোষ্ঠির অবস্থান অনেক সুচনিয় অবস্থায় ছিলো। দেশের সর্ব নাগরিকের ক্ষেত্রে মৌলিক চাহিদা পাওয়া প্রত্যেক নাগরিকের সমান অধিকার। কিন্তু এ অধিকার পাওয়াতো দুরের কথা মৌলিক অধিকার পাওয়াটা পূর্বে খুবই কষ্ঠকর ছিলো। বর্তমান সরকার প্রদেয় সহযোগীতার ক্ষেত্রে প্রান্তিক জনগোষ্ঠি মোটামোটি অনেক কিছু জানে এবং অবগত আছে। যেমন শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রান্তিক জনগোষ্ঠির জন্য বিভিন্ন সুযোগ সহযোগীতা রয়েছে। দারিদ্র বিমোচনের ক্ষেত্রে প্রদেয় সরকারের বিভিন্ন সহযোগীতা পাচ্ছে। যেমন, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, মাতৃত্ব ভাতা, আশ্রায়ন উন্নয়ন, শিক্ষবৃত্তি ও সরকারের অনেক উন্নয়ন মূলক কাজ তাদের জানা রয়েছে এবং জানতে তারা আগ্রহী। কিন্তু প্রকৃত ক্ষেত্রে এসব সুবিধার ছোঁয়া তারা খুবই কমই পাচ্ছে। স্থানীয় সরকারের কাঠামো উন্নয়ন সহযোগীতার ক্ষেত্রে চাঁদপুর জেলা হরিজন প্রান্তিক জনগোষ্ঠির দ্বারে আজও পৌছেনি। এ সহযোগীতার ক্ষেত্রে তারা সম্পূর্ণ অবহেলিত। বিশেষ করে চাঁদপুর রেলওয়ে হরিজন কলোনির প্রান্তিক জনগোষ্ঠিরা । বর্তমান সময়ে চাঁদপুর রেলওয়ে হরিজন কলোনির প্রান্তিক জনগোষ্ঠি কোন ধরনের সহযোগীতা বর্তমানে পাচ্ছে না। এ বিষয়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠি মতামতের ক্ষেত্রে সরকার যদি এ জনগোষ্ঠির সর্বাধিক তথ্য সংগ্রহ করে উপযুক্ত ব্যাক্তিকে সঠিক ভাবে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নের সাথে সম্পৃক্ত করে যুগোপযোগী সহায়তা দিলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠি উন্নয়নের সিড়িতে পৌছতে পারতো।
পুরান বাজার হরিজন যুব ক্লাবের সভাপতি শ্যামল দাস হরিজন জানান, পূবের সেবা বলয়ে যে অবস্থা ছিলো বর্তমানেও সে অবস্থা বিরাজমান। প্রান্তিক জনগোষ্ঠির জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কোন সহযোগীতা নেই। সরকারি ভাবে আমাদের জন্য যে সহযোগীতা রয়েছে তা সম্পর্কে আমরা কিছুই জানিনা বা সহযোগীতা পাইনা। স্থানীয় সরকার কাঠামো থেকে প্রান্তিক জনগোষ্ঠিকে কোন ধরনের সহযোগীতা করছেনা। তারা সর্বক্ষেত্রে অবহেলিত অবস্থায় দিন কাটাতে হচ্ছে। তাদের টয়লেট, পানির কল, ঘর-বাড়ি সবই নির বিচ্ছিন্ন। কোন কিছুই ঠিক নেই। কোন সেবাই আমরা পাইনা। বরং প্রান্তিক জনগোষ্ঠির মানুষেরা স্থানীয় পৌরসভা ও স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে জনগণকে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। বর্তমান সময়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠি কোন ধরনের সহযোগীতা পাচ্ছেনা। সরকারের সমাজ সেবা থেকে হরিজন সমাজ উন্নয়ন সংস্থ্যাকে সহযোগীতা করছে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠির সদস্যরা ব্যক্তিগত ভাবে কোন সহযোগীতা পায়না। শারদীয় পূজার সময় সরকার দলীয় নেতাদের সহযোগীতায় বিজিএফ কার্ড আমরা পেয়ে যাচ্ছি। এছাড়া গত বছর বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যান সম্পাদক বাবু সুজিত রায় নন্দি আমাদের পুরান বাজার হরিজন কলোনিতে শতাধিক প্রান্তিক জনগোষ্ঠির মধ্যে শাড়ি, লুঙ্গি, প্যান্ট. শার্ট আমাদের মধ্যে বিতরণ করেছেন। যে সহযোগীতা সরকারের পক্ষ থেকে রয়েছে তা অতি কম মাত্রায় হচ্ছে। পর্যাপ্ত সহযোগীতা না পাওয়াতে জীবন মান আমাদের খুবই কস্টকর ভাবে অতিবাহিত হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে যেখানে যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠি রয়েছে তাদেরকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে যাচাই বাচাই করে তাদের চাহিদা পুরণ করলে জীবন মানের সমস্যা সমাধান ও জীবন মানের উন্নয়ন হবে।
হরিজন সমাজ উন্নয়ন সংস্থার চাঁদপুর জেলা শাখার সভাপতি আকাশ দাস জানান, সেবা বলয়ের ক্ষেত্রে সরকারি ভাবে প্রান্তিক হরিজনরা উল্লেখযোগ্য কোন সহযোগীতা পাচ্ছে না। সরকারি ভাবে যে ধরনের সহযোগীতা প্রান্তিক জনগোষ্ঠির জন্য রয়েছে তা তারা জানেনা। যার জন্য তারা সরকারি ভাবে সেবা বলয়ের সহযোগীতা গ্রহণ করতে পারছে না। স্থানীয় সরকার কাঠামোর মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠির মানুষেরা প্রয়োজনীয় সহযোগীতা বিগত দিনে পায়নি এবং বর্তমানেও পাচ্ছে না। তারা পূর্বে যে অবস্থায় সরকারি ভাবে সেবা পেয়েছে বর্তমানের তাও পাচ্ছে না। বর্তমান সরকারের সময়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠির সদস্যরা সরকারের সকল সহযোগীতা কামনা করছে।
শিরোনাম:
মঙ্গলবার , ১৬ আগস্ট, ২০২২ খ্রিষ্টাব্দ , ১ ভাদ্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।