করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বেঁচে থাকার একমাত্র উপায় হচ্ছে ঘরে থাকা।
মরণব্যাধি এ ভাইরাসে আক্রান্ত এক ব্যক্তি অসংখ্য অগণিত মানুষকে সংক্রমিত
করতে পারে। তাই এর থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হচ্ছে ঘর থেকে বের না হওয়া এবং
সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। এছাড়া হাঁচি কাশি দেয়ার সময় কী করতে হবে সে
দিকনির্দেশনাও রয়েছে। অথচ মানুষগুলো এর ছিটেফোঁটাও মানছে না। বিশ্বব্যাপী
ল-ভ- করে দেয়া এই মহামারীকে যেনো বাঙালি পাত্তাই দিচ্ছে না। সারাদেশেই একই
অবস্থা। চাঁদপুরও এর বাইরে নয়। ইতালিসহ বর্তমানে সবচেয়ে আক্রান্ত যেসব দেশ,
সেগুলোর অবস্থাও প্রথমে বর্তমানে বাংলাদেশে যে রকম, সে রকমই ছিল। শুরুর
দিকে মানুষ এটা নিয়ে হেলাফেলা করাতে এবং তেমন কোনো গুরুত্ব না দেয়ায় এখন
একেকটি দেশকে কঠিন মূল্য দিতে হচ্ছে, ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করছে। প্রতিদিন
মৃত্যুর মিছিল। ২৪ ঘণ্টায় কয়েক হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে একেকটি দেশে।
বাংলাদেশও সেই ভয়াবহ পরিণতির দিকে যাচ্ছে। অথচ মানুষগুলোর মধ্যে এটি নিয়ে
কোনো উপলব্ধি নেই। গতকাল দিনে চাঁদপুর শহরের অবস্থা দেখে তাই মনে হলো।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বেঁচে থাকতে এবং এর বিস্তার রোধে সরকারের
নির্দেশনা হচ্ছে, অতীব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হবে না। যে
কারণে সরকারি ছুটি ধাপে ধাপে বাড়ানো হচ্ছে। দূরপাল্লারসহ সকল ধরনের
যানবাহন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট, ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠান ও অফিস আদালত
বন্ধ। দোকানের মধ্যে শুধুমাত্র ঔষধের দোকান, সীমিত আকারে খাবারের দোকান ও
কাঁচা বাজার খোলা থাকবে। এ সংক্রান্ত জরুরি ঘোষণাও দেয়া হয়েছে জেলা প্রশাসন
থেকে। ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, সেনাবাহিনী, র্যাব, ভ্রাম্যমাণ আদালত সব
মাঠে। তারপরও মানুষের অবাধ বিচরণ দেখা যাচ্ছে রাস্তায়। অটোবাইক, সিএনজি
অটোরিকশাসহ আরো কিছু যানবাহনকেও দেখা যাচ্ছে রাস্তায় চলতে। এই দুর্যোগকালে
অপ্রয়োজনীয় দোকানও খোলা হচ্ছে।
গতকাল সকাল ১১টার দিকে চাঁদপুর শহরের নতুনবাজার এলাকায় গিয়ে দেখা গেলো
অবিশ্বাস করার মতো চিত্র। নতুনবাজার মোড় এলাকাসহ আশপাশের প্রায় সকল দোকান
খোলা। প্রচুর মানুষ রাস্তায় অবাধে চলাচল করছে। কারো মধ্যেই যেনো কোনো
উপলব্ধি নেই। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং সরকারি নির্দেশনা মেনে চলা,
এসবের প্রতি কোনো ভ্রুক্ষেপই নেই। যারা রাস্তায় বের হচ্ছে তাদের দেখা গেলো
অনেকেরই মুখে মাস্ক নেই। অবস্থা দেখে মনে হলো যেনো দিনের বেলা করোনা ছড়ায়
না। মনে হলো যেনো দিনের বেলা করোনা নির্বাসনে চলে যায়। তাই মানুষ দিনে
অবাধে চলাচল করে থাকে। তবে সন্ধ্যা থেকে চিত্র পাল্টে যায়। শুধুমাত্র ঔষধের
দোকান ছাড়া সব ধরনের দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়, মানুষও তেমন একটা রাস্তায়
থাকে না। শুধু শহর নয়, গ্রামের চিত্র আরো খারাপ। সেখানে অবাধে মানুষের
চলাচল, আড্ডা সবকিছুই অবলীলায় চলছে।
গতকাল দিনের বেলা দেখা গেছে, শুধু চাঁদপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পুলিশ ও
ডিবি পুলিশের কঠোর অবস্থান। কিন্তু শহরের অন্য সব জায়গায় স্বাভাবিক অবস্থা।
বিশেষ করে নতুনবাজার এলাকার চিত্র দেখে সেনাবাহিনীকে বলার পর সেনাবাহিনীর
সদস্যরা এসে জনগণকে সচেতন ও সতর্ক করে যান।
সচেতন জনগণ বলছেন, আমরা যেভাবে এখনো অসচেতন এবং ভয়াবহ এ মহামারীকে পাত্তাই
দিচ্ছি না, তাতে আমাদের জন্যে কঠিন পরিণতি অপেক্ষা করছে। তাই দিনের শুরু
থেকেই প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর ভূমিকা নিতে সচেতন জনগণ অনুরোধ
জানিয়েছেন।