শওকতআলী :
চাঁদপুরের মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্প ও চাঁদপুর সেচ প্রকল্প এ ২টি সেচ প্রকল্পে ইজারা বন্ধ থাকায় সরকার কোটি-কোটি টাকা রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচেছ। ইজারা বন্ধ থাকলেও এ সব জলাশয়ে মাছ চাষ করে এক শ্রেনীর প্রভাব শালীরা লক্ষ লক্ষ টাকা উপার্যন করে নিজেরা লাভবান হচেছ। ইজারা বন্ধ হলেও পূর্বের ইজারাদাররা অবৈধভাবে মাছ চাষ অব্যাহত রেখেছে। এতে রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। সেচ প্রকল্প দুটি হচ্ছে মতলব মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্প ও চাঁদপুর সেচ প্রকল্প। জেলার দুটি বৃহৎ সেচ প্রকল্পের ২৮৮টি বোরোপিট ও জলাশয়ে গত তিন বছর যাবৎ ইজারা বন্ধ রয়েছে। এতে সরকার বিরাট অঙ্কের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। চাঁদপুরের মতলব মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের অভ্যন্তরে ও বাইরে ১৪৪টি বোরোপিট ও জলাশয় এবং চাঁদপুর সেচ প্রকল্পের অভ্যন্তরে ১৪৪ টি বোরোপিট রয়েছে। এসব বোরোপিট ও জলাশয়ে দীর্ঘ ২০ বছর যাবৎ ইজারার মাধ্যমে মাছ চাষ হয়ে আসছিল। এতে সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব পেত। কিন্তু হঠাৎ পানি উন্নয়ন বোর্ড ২০১৫ সাল থেকে বোরোপিট ও জলাশয়গুলো ইজারা দেয়া বন্ধ করে দেয়। এতে পূর্বের ইজারাদাররা ইজারার মেয়াদ শেষ হলেও অবৈধভাবে মাছ চাষ অব্যাহত থাকায় এলাকায় দ্বন্দ্ব ও গ্রুপিং বাড়ছে। এ কারণে যেকোনো মুহূর্তে এলাকায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কাও রয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, মতলব মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের ভেতরে ও বাইরে ১৪৪টি বোরোপিট ও জলাশয় রয়েছে। এর মধ্যে সাদুল্লাহপুর ইউনিয়নে ১৩টি বোরোপিট ও জলাশয় রয়েছে, এগুলোর ইজারার মেয়াদ ২০০৯, ২০১০ ও ২০১৫ সালে শেষ হয়েছে। দুর্গাপুর ইউনিয়নে ২০টি বোরোপিট ও জলাশয় রয়েছে, এগুলোর ইজারার মেয়াদ ২০১০, ২০১১ ও ২০১৫ সালে শেষ হয়েছে। কলাকান্দা ইউনিয়নে ১০টি বোরোপিট ও জলাশয় রয়েছে, এগুলোর ইজারার মেয়াদ ২০০৯ ও ২০১০ সালে শেষ হয়েছে। মোহনপুর ইউনিয়নে ৫টি বোরোপিট ও জলাশয় রয়েছে, এগুলোর ইজারার মেয়াদ ২০০৯ সালে শেষ হয়েছে। এখলাসপুর ইউনিয়নে ১১টি বোরোপিট ও জলাশয় রয়েছে, এগুলোর ইজারার মেয়াদ ২০১০সালে শেষ হয়েছে। জহিরাবাদ ইউনিয়নে ৩টি বোরোপিট ও জলাশয় রয়েছে, এগুলোর ইজারার মেয়াদ ২০১৫ ও ২০১৬ সালে শেষ হয়েছে। ফতেপুর পূর্ব ইউনিয়নে ২৪টি বোরোপিট ও জলাশয় রয়েছে, এগুলোর ইজারার মেয়াদ ২০০৪, ২০০৯, ২০১০, ২০১৫ ও ২০১৬ সালে শেষ হয়েছে। ফতেপুর পশ্চিম ২৭টি বোরোপিট ও জলাশয় রয়েছে, এগুলোর ইজারার মেয়াদ ২০০৯, ২০১০, ২০১১ ও ২০১৫ সালে শেষ হয়েছে। ইসলামাবাদ ইউনিয়নে ৫টি বোরোপিট ও জলাশয় রয়েছে, এগুলোর ইজারার মেয়াদ ২০১০ ও ২০১১সালে শেষ হয়েছে। ফরাজিকান্দি ইউনিয়নে ২১টি বোরোপিট ও জলাশয় রয়েছে, এগুলোর ইজারার মেয়াদ ২০০৯, ২০১০ ও ২০১৫সালে শেষ হয়েছে। সুলতানাবাদ ইউনিয়নে ৫টি বোরোপিট ও জলাশয় রয়েছে, এগুলোর ইজারার মেয়াদ ২০১০ সালে শেষ হয়েছে।
অপরদিকে চাঁদপুর সেচ প্রকল্পের অভ্যন্তরে ১৪৪ টি বোরোপিট মাছ চাষে ইজারা প্রদান করা হত। এসব বোরোপিটে সর্বোচ্চ সাড়ে ৭ একর, মধ্যম ৪, ৩ ও ২ একর এবং সর্বনিম্ন ২০ শতাংশ করে রয়েছে। এছাড়া মরা ডাকাতিয়া নদী রয়েছে।
চাঁদপুর মেঘনা ধনাগোদা পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাপাউবো বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম আতাউর রহমান জানান, ২০১৫ সাল থেকে স্থানীয়ভাবে মেঘনা ধনাগোদার বোরোপিট ও জলাশয়গুলো ইজারা প্রদান বন্ধ ছিল। বর্তমানে ঢাকাস্থ প্রধান দফতরের অনুমতি স্বাপেক্ষে ইজারা প্রদান চালু করা হয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তদন্তও চলছে।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো.সফিকুর রহমান জানান, চাঁদপুরে দু’টি সেচ প্রকল্পের ইজারা বন্ধ হলেও পূর্বের ইজারাদাররা এসব বোরোপিট মাছ চাষ করে লক্ষ লক্ষ টাকা উপার্যন করে যাচ্ছে। ফলে সরকার এদের কাছ থেকে কোনো রাজস্ব পাচ্ছে না। যদিও ইদানিং দু’একটি জলাশয় ইজারা দিচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।