শাহারিয়ার খান কৌশিক
নয়নের ২ মেয়ের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ড
চাঁদপুর আলোচিত হত্যা কান্ডের ঘাতক নয়ন পলাতক ॥ মামলার ৪নং আসামী আটক
আমি শেষ তোরা যেদিকে পারোছ চলে যা ঃ ঘাতক নয়ন বেগম
চাঁদপুর শহরের রহমতপুর আবাসিক এলাকার ভূঁইয়া বাড়িতে আলোচিত হত্যা কান্ডের ঘটনায় ঘাতক নয়ন বেগম এখনো পলাতক রয়েছে। এ ঘটনায় মূল রহস্য উদঘাটন করতে পুলিশ নয়ন বেগমের ২ মেয়েসহ ৪জনকে জিজ্ঞাসাবাাদ করে ছেড়ে দেওয়া হয়। সোমবার বিকেল ৫টায় চাঁদপুর মাদ্রাসারোডস্থ লঞ্চঘাটে ময়ূর-৭ লঞ্চ ভিড়ার পর চাঁদপুর মডেল থানার এস.আই নুরুল হক সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে অভিযান চালিয়ে মামলার ৪নং আসামী ধেন্দা রফিক কে গ্রেফতার করে। হত্যাকান্ডের ঘটনার সময় মামলার এই ৩নং আসামী ধেন্দা রফিক ঘাতক নয়ন বেগমের বাড়িতে অবস্থান করেছে বলে তার ২ মেয়ে পুলিশকে জানিয়েছে। হত্যার নেপথ্য ও হত্যাকারীকে সন্তাক্ত করতে পুলিশ নয়ন বেগমের দুই মেয়ে স্বপ্না আক্তার তৃশা (১৭) ও ইশরাত জাহান তন্নী (১২) কে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ড করেন। শনিবার রাত ৮টা থেকে সাড়ে ৮টার মধ্যে কোহিনুর বেগমকে পাওনা টাকা দিবে বলে নয়ন বেগম তার বাসায় নিয়ে নৃশংভাবে কুপিয়ে হত্যা ঘটনা সংঘটিত করে। নয়নের বড় মেয়ে স্বপ্না আক্তার তৃশা জানায়, ঘটনার দিন রাতে তারা ভূইয়া বাড়ির আব্দুর রশিদ ভুইয়ার ছেলে ধেন্দা রফিক এর সাথে পাশের ফ্লাটে টিভি দেখছিল। রাত ৮টায় মা নয়ন বাসায় এসে টিভির সাউন্ড বাড়িয়ে দিয়ে রফিককে ইশারা দিয়ে রুম থেকে বের করে নিয়ে আসে। এর কিছুক্ষণ পরেই পাশের ফ্লাটে চিৎকারের শব্দ শুনতে পাওয়া যায়। এসময় ইশরাত জাহান তন্নী ঘর থেকে বের হয়ে মায়ের রুমের দরজার সামনে দাড়িয়ে থাকে। মা নয়ন বেগম রুম থেকে বের হয়ে কিছু হয়নি বলে জানিয়ে যার যার ঘরে যাওয়ার জন্য বলে। তার কিছুক্ষণ পরেই তন্নী মা নয়নকে রক্ত মাখা শরীরে বেরিয়ে যেতে দেখে। পরোক্ষণই মায়ের মোবাইলে ফোন করলে তিনি লাইনটি কেটে দেয়। এরকিকছুক্ষণ পরেই মা নয়ন বেগম পুনরায় তার মোবাইল থেকে ফোন করে জানায়, আমি শেষ তোরা যেদিকে পারোছ চলে যা। তারপর থেকেই তার কোন সন্ধান মেলেনি।
এই ঘটনায় নিহত কোহিনুর বেগমের ভাই আব্দুল মালেক মোহন বাদী হয়ে চাঁদপুর মডেল থানায় ৬নজকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-৪১ তারিখ ২৩-০৮-২০১৫। মূল আসামী নয়ন বেগমে কে আটক করতে পুলিশ মরিয়া হয়ে উঠেছে। মামলার ৪নং আসামী ধেন্দা রফিক ঘটনার দিন চাঁদপুর থেকে ঢাকায় চলে যায়। সেখান থেকে গতকাল ময়ূর-৭ লঞ্চযোগে চাঁদপুর আসার পর রহমতপুর কলোনীর লোকজন তাকে ধরে উত্তম মধ্যম দেয়। পরে পুলিশ তাকে আটক করে হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে থানায় নিয়ে আসে। জানা যায়, শনিবার রাতে নয়ন বেগম তার নিজ ঘরে পাওনাদার সৌদি প্রবাাশী আব্দুল মান্নানের স্ত্রী কোহিনুর বেগমকে টাকা দেওয়ার কথা বলে ডেকে নিয়ে এই হত্যার ঘটনা সংঘটিত করে। ঘটনার পরেই তার সহয়োগীদেরর সাথে সে চাঁদপুর থেকে বোাগদাদ বাসযোগে কুমিল্লায় তার পরকীয়া প্রেমীক স্বামী পরিচয়ধারী শাাহারাস্তি সূচী পাড়ার চাঁদপুর গ্রামের ভাই ভাই বিক্র ফিল্ডের মালিকের ভাই আলমগীর হোসেন ফারুক এর সাথে গিয়ে গা ঢাকা দেয়। অনুসন্ধানের জানা যায়, শনিবার সন্ধ্যার পর তার নয়নের পরিচয়ধারী স্বামী আলমগীর ৩জন যুবককে সাথে নিয়ে দোয়াভাঙ্গা বাসষ্ট্যান্ড যাত্রী ছাউনির অবস্থান করতে দেখা যায়। আলমগীরের নির্দেশে নয়ন এই হত্যার ঘটনা ঘটিয়েছে। কারণ নয়ন মানুষের কাছ থেকে ও বিভিন্ন সমবায় সমিতি থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা এনে আলমগীর হোসেন ফারুককে ইটের ব্যবসার জন্য দেয়। ঘটনার দিন কোহিনুর বেগমের স্বর্ণালংকার লুট করার জন্য ও পূর্বের পাওনা টাকা চাওয়ায় কোহিনুরকে মেরে ফেলার নির্দেশ দেয় বলে মনে করে। হত্যা করার পর নয়ন বাসযোগে আসার পর তাকে নিয়ে আলমগীর কুমিল্লা কান্দিরপাড় গিয়ে গা ঢাকা দিয়েছে বলে অনেকে ধারানা করেছে। দিনভর এই আলোচিত হত্যাকান্ডের ঘটনা নিয়ে চাঁদপুর শহর টপ অব দ্যা টাউনে পরিণত হয়েছে। এলাকার নয়নের কাছ থেকে টাকা পাওনাদার কয়েকজন মহিলা জাানায়, নয়ন বেগমের চারিত্র ভালো ছিল না। তার প্রথম স্বামী পৌরসভার কর্মচারী ইহছাককে ডিভোর্স দিয়ে পরকীয়া প্রমিক নামধারী স্বামী আলমগীরকে নিয়ে থাকেন। এছাড়া তার সাথে অনেক পরপরুষের অবৈধ সম্পর্ক ছিল। পরের টাকা আত্মসার্ত করে সে ঢালী বাড়িতে ফাউন্ডেশন নিয়ে বিল্ডিং করেছে। নাছিমা বেগম ওরপে পাকিস্তানি সত্ববাধিকারী নিশা সঞ্চয় ঋণ দান সমবায় সমিতি থেকে নয়ন সাড়ে ১২ লক্ষ টাকা ঋণ নেয়। ঋণের টাকা না দেওয়ায় তার বিরুদ্ধে আদালতে চেক চালিয়াতির মামলা দায়ের করা হয়েছে। ঘটনার দুই দিন পূর্বে মামলা থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য ঘাতক নয়ন বেগম ও তার স্বামী আলমগীর নিশা সঞ্চয় ঋণ দান সমিতির মালিক নাাছিমা বেগমের বাসায় যায়। এসময় ঋণের টাকা রবিবার দিবে বলে প্রতিজ্ঞা করে আসে। নিহত কোহিনুর বেগম ফরিদগঞ্জ ষোল্লা মোাল্লা বাড়ির মৃত সুজ্জত আলী মোল্লার মেয়ে। তার তিন ছেলে রিপন, (২৮) বর্তমানে কাতারে অবস্থান করছেন দ্বিতীয় ছেলে শিপন ড্যাফোডিল ইউনিভারসিটিতে এম.বি.এ করছেন তৃতীয় ছেলে তানজিল আল-আমিন স্কুল এন্ড কলেজের এইচ.এস.সি প্রথম বর্ষের ছাত্র। শনিবার হত্যাকান্ডের ঘটনার পর পুলিশ নয়ন বেগমের বাসা থেকে কোহিনুরের রক্তমাখা মৃতদেহ উদ্ধার করার পর প্রথমত এলাকাবাসী তাকে সন্তাক্ত করতে পারেনি। পরে তার ছোট ছেলে তানজিল এসে তার মার পড়নের কাপড় ও মুখ দেখে চিনতে পেরে কান্নায় আহাজারি করতে থাকে। উল্লেখ্য, রহমতপুরআবাসিক এলাকার ঢালী বাড়ির আলী আহমেদ ঢালীর মেয়ে নয়ন বেগম (৩৫)-এর বাসায় কোহিনুরের জবাই করা লাশটি পড়ে থাকতে দেখা যায়।শনিবার রাত ৯টায় মডেল থানা পুলিশ বাসার ভেতরে প্রবেশ করে খাটের নিচে লুকানো অবস্থায় কোহিনুর বেগম (৪০)-এর মৃতদেহটি উদ্ধার করে। ঘটনার পরপরই নয়ন বেগম এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়।