শওকত আলী॥
চাঁদপুরে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের জীবিকায়নের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ২বছরেও ইন্টারভিউর জন্য ডাকা হয়নি। পুরাতন প্রকল্পের প্রশিক্ষকরা নতুন প্রকল্প থেকে জীবিকায়নের লক্ষ-লক্ষ টাকা উত্তোলন করে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এরই প্রেক্ষিতে ২বছর পর নতুন করে গত ৮ডিসেম্বর ১৭ তারিখে জীবিকায়নের প্রকল্পের জন্য নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। সে মতে বিজ্ঞপ্তিতে ২৪ ডিসেম্বর আবেদন জমা নেওয়া শেষ তারিখ ছিল। গত ১মাসের ও বেশী সময় অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত ইন্টারভিউ কল করা হয়নি। এরই মধ্যে বাতিলকৃত প্রকল্প ডব্লিউটিসি প্রকল্পের যে সব প্রশিক্ষকরা জীবিকায়নের প্রকল্পের লক্ষ-লক্ষ টাকা ট্রেজারি থেকে ভুয়া-প্রতারনা করে উত্তোলন করে নিজেরা হাতিয়ে নিয়েছে। সে সব ৫ জন প্রশিক্ষকদের মধ্যে ৪জন মো: সোহেল রানা,সালমা বেগম,হাসনা আহমেদ ও রুমা আক্তার গতকাল বৃহস্পতিবার চাঁদপুর মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের ইন্টারভিউ ও নিয়োগ ছাড়া কাজ করার জন্য জেলা অফিসে আসে । এ সময় চাঁদপুর মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের কর্মকর্তা অবৈধ ভাবে লক্ষ-লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়া প্রশিক্ষকদেরকে অফিসে প্রবেশ করতে না দেওয়ায় তারা একজোট হয়ে এ কর্মকর্তার উপর হামলা চালায় এবং তাকে লাঞ্চিত করে বলে চাঁদপুরে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা মো: মহিউদ্দিন আহমেদ সংবাদকর্মীদের জানান। হামলার সময় এ কর্মকর্তা প্রশাসন,সংবাদ মাধ্যম ও বিভিন্ন স্থানে টেলিফোনে জানালে তাৎক্ষনিক তারা ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়ে। প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও সংবাদ কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদেরকে পাননি বলে তাদেরকে আটক করা সম্বব হয়নি। এ ব্যাপারে চাঁদপুর মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মো: মহিউদ্দিন আহমেদ জানান,যারা পূর্বে এখানে কাজ করেছে তাদের মধ্যে এক জন নতুন করে আবেদন করেছে। বাকী ৪ জন মো: সোহেল রানা,সালমা বেগম,হাসনা আহমেদ ও রুমা আক্তার অবৈধ ভাবে কাজ করার জন্য ও অবৈধ ভাবে থাকার চেস্টা করছে। তারা গত ২৮ ডিসেম্বর একবার এসে তারা এ অফিসে হামলা চালায়। পূনরায় গতকাল বৃহস্পতিবার ৭ মাসের অবৈধ ভাবে বেতন দাবী করে এবং আমার উপর হামলা চারিয়ে আমাকে লাঞ্চিত করে। আমি তাৎক্ষনিক ভাবে আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এডিসি রাজস্ব মো: মাসুদ হেসেনকে ঘটনা সম্পর্কে অবগত করেছি। জীবিকায়ন প্রকল্পের জন্য ৮ডিসেম্বর ১৭ পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর এ পর্যন্ত ৪৬টি আবেদন জমা পরেছে। বর্তমানে সকল কাগজ পত্র ডিসি অফিসে পাঠিয়ে দিয়েছি। সেখান থেকে যথা সময়ে যথাযথ নিয়মে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
অপর দিকে বিগত বছরেও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ২ বছর পার হয়ে যাওয়ার পর ও সে কার্যক্রম করা হচিছলনা সে সংক্রান্ত বিস্তারিত হচেছ, চাঁদপুর জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার দপ্তরে ৫টি ট্রেডে প্রশিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ২ বছরেও কোনো ইন্টারভিউ হয়নি। ৫টি ট্রেডে ২ বছর পূর্বে ৩৫জন প্রশিক্ষক আবেদন করেও তাদেরকে ডাকা হয়নি। সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আদেশে ২০১৫ সালে জীবিকায়নের জন্য মহিলাদের দক্ষ্যতা ভিত্তিক প্রশিক্ষণ প্রদান কর্মসূচি র্শীষক প্রকল্পে লোক নিয়োগের জন্য ঐ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।
সেই সাথে মহিলা ও শিশু বিয়ষক মন্ত্রণালয়ের আদেশ অমান্য করে জীবিকায়নের প্রকল্প বাস্তবায়ন না করে বাতিলকৃত প্রকল্পের নামে ৫টি ট্রেডে জনবল নিয়োগ দিয়ে গত ২বছরে অবৈধভাবে ১৩ লক্ষ ৩০হাজার টাকা উত্তোলনের মাধ্যমে প্রতারণা ও আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী আবেদনকারীরা ইন্টারভিউ দিতে না পেরে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মহা-পরিচালক, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপিসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ করেছেন। এ ব্যাপারে জেলা ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা মোমেনা আক্তারকে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন প্রদানের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়।
জানা গেছে, চাঁদপুর জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মিসেস জেবুন্নেছা স্বাক্ষরিত ২০১৫ সালের ৩১আগস্ট লোকবল নিয়োগে বিজ্ঞপ্তির প্রকাশ করেন। সে মতে ৩৫জন আবেদন করেন। কিন্তু ২বছরের অধিককাল সময় অতিবাহিত হলেও আবেদনকারীদের ইন্টারভিউর জন্য ডাকা হয়নি। এর পূর্বে ২০১৪সালের ৩০জুন পর্যন্ত মেয়াদ শেষ হওয়া প্রকল্পের এক বছর সময় বৃদ্ধি করেও ডব্লিউটিসির প্রকল্পের ৫ প্রশিক্ষককে পূনরায় অবৈধভাবে নিয়োগ দিয়ে কাজ করার সুযোগ করে দেয়। প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় অস্থায়ী ভিত্তিতে প্রকল্পের মেয়াদকালীন প্রশিক্ষক মোবাইল সাভিসিং, আধুনিক দর্জি বিজ্ঞান, এমব্রয়ডারি ও সুন্দর সুচি হাতের কাজ, বিউটি ফিকেশন, গার্মেন্টস এই ৫টি ট্রেডে ৫ পুরুষ-মহিলা চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হবে। পূর্বে মহিলা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ৫জন অদক্ষ্য অযোগ্য প্রশিক্ষকদের নিয়োগ কমিটি কর্তৃক নিয়োগ বাতিল করা হলেও ওই ৫জনকেই ৮হাজার টাকা ও পরবর্তীতে ১১হাজার টাকা করে বেতন উঠানোর সুযোগ করে দেয় জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার দপ্তর
তৎকালীন জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা জেবুন্নেছা নিজের ইচ্ছা মতো সরকারি নিয়ম-নীতি তোয়াক্কা না করে ২০১০ সাল থেকে ২০১৪ সালের ৩০জুন পর্যন্ত মেয়াদ শেষ হওয়া ডব্লিউটিসি প্রকল্পের আওতায় থাকা প্রশিক্ষকদের অবৈধভাবে অর্ন্তভূক্ত করেন। পরবর্তীতে জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার চাঁদপুরের পদটি শূন্য হয়ে গেলে, এ দায়িত্ব পর্যায়ক্রমে পালন করেন হাজীগঞ্জ উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা পারভিন আক্তার, শাহরাস্তির লুৎফা ইয়াসমিন, সাজিয়া আফরিন, জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ের প্রোগ্রাম অফিসার এ ৩জন কর্মকর্তা ৯ মাস দায়িত্ব পালনকালে তাদের স্বাক্ষরে বাতিলকৃত প্রকল্পের ৫জন প্রশিক্ষক কোনো প্রকার নিয়োগ ছাড়া অবৈধভাবে জীবিকায়ন প্রকল্প থেকে টাকা উত্তোলন করে আত্মাসাৎ করেন। অপর দিকে (বর্তমানে কর্মরত কর্মকতা) গত ৩০অক্টোবর ২০১৬সালে চাঁদপুর জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন মহিউদ্দিন আহমেদ। তিনি দায়িত্ব পালনকালেও জীবিকায়ন প্রকল্পের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ইন্টারভিউর জন্য আবেদনকারীদের সঠিক কোনো সমাধান না দিয়ে প্রতিনিয়ত হয়রানী করে ১টি বছর পার করেন। এ ১বছর তিনিও বাতিলকৃত ডব্লিউটিসি প্রকল্পের ৫টি ট্রেডের প্রশিক্ষকদের জীবিকায়ন প্রকল্প থেকে টাকা উত্তোলন করে আত্মসাতের সুযোগ করে দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তার দায়িত্ব পালনকালে নভেম্বর ১৬ থেকে জুন ১৭ পর্যন্ত ৮ মাসে ৫৫ হাজার টাকা করে সরকারী কোষাগার থেকে উত্তোলনের সকল কাগজপত্রে স্বাক্ষর করেন বলে তার অফিস সূত্রে জানা যায়।
এ ব্যাপারে চাঁদপুরের জেলা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) আয়শা আক্তার জানান, এ বিষয়টি জানা জানির পর তদন্ত পূর্বক সঠিক রির্পোট দেওযার জন্য ভূমি অধিগ্রহন কর্মকতা মোমেনা বেগমকে তদন্ত কর্মকতা হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি এ বিষয়টি তদন্ত পূর্বক রির্পোট দেওয়ার পর প্রকৃত ঘটনা যেনে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এ সময় তিনি সাবেক জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকতা জেবুন্নেছাকে বলেন, আপনি যে স্বীকার উক্তি দিয়েছেন,তাতে আপনার পেনশান বন্ধ হয়ে যাবে।
এ ব্যাাপারে তদন্ত কর্মকতা মোমেনা বেগম বলেন,আমাকে দায়িত্ব দেওয়ার পর জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকতার অফিসে গিয়ে এ সাথে সংশ্লিস্ট ৩ জনের বক্তব্য নেই। তবে সাবেক মহিলা বিষয়ক কর্মকতা জেবুন্নেছা একটি রেজুলেশন জমা দিয়েছে,কিভাবে ১৫ সাল পর্যন্ত তিনি পুরনোদের দায়িত্ব দিয়ে ছিলেন। অফিসিয়াল যারা দায়িত্ব পালন করেছিল,তাদের নিকট থেকে স্বাক্ষ গ্রহন করা হচেছ।
এ ব্যাপারে সাবেক জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকতা জেবুন্নেছা বলেন,আমি সেচ্ছায় অবসরে চলে গেছি। আমার দায়িত্ব কালিন সময় ৫ সদস্যের কমিটির সিদ্বান্তের ফলে আমি ডব্লিউটিসি প্রকল্পের ৫ জনকে জীবিকায়নে অন্তরভুক্ত করেছি।
এ ব্যাপারে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা লুৎফা ইয়াসমিন-শাহরাস্তি বলেন,আমাকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়েছে। সে দায়িত্ব পালন করেছি। প্রকল্পের বিষয়ে যিনি পূর্বে ছিলেন তিনিই ভাল বলতে পারবেন।
এ ব্যাপারে জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকতার দপ্তরের প্রকল্প প্রোগ্রাম অফিসার সাজিয়া আফরিন বলেন,আমি এ সব বিষয়ে কিছুই জানিনা।
এ ব্যাপারে বর্তমানে দায়িত্বে থাকা জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকতা মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন,আমি ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে দায়িত্ব নেই। এক বছর ৩মাস হয়েছে দায়িত্ব পালন করছি। কোন প্রকল্পের মাধ্যমে কার্যক্রম চলছে তা আমার জানা নেই। আমি এ বিষয়ে জানতে পেরে আমার উধর্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। এ ব্যাপারে অনিয়ম হলেও তা আমার অপরাধ নেই।