চাঁদপুর রামকৃষ্ণ আশ্রম ও মিশনে কল্পতরু উৎসবের ২ দিন ধর্মালোচনা সভা

মানিক দাস ॥ স্বামী বিবেকানন্দের শিকাগো বক্তৃতার ১২৫ তম বর্ষপূর্তি শুভ কল্পতরু উৎসব গত ১ জানুয়ারি থেকে চাঁদপুর রামকৃষ্ণ আশ্রমে শুরু হয়েছে। এই উৎসব চলবে আগামী ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত। উৎসবের দ্বিতীয় দিন ২ জানুয়ারি ভোর ৫টায় মঙ্গল আরতি, সকাল ৬টায় বৈদিকমন্ত্র উচ্চারণ, ভজন ও স্তোত্রপাঠ। সকাল সাড়ে ৮টায় বিশেষ পূজা, ভজন সঙ্গীত ও পুষ্পাঞ্জলি প্রদান। সকাল ৯টায় জপ ধ্যান অনুষ্ঠান, সকাল সাড়ে ৯টায় শ্রী শ্রী মায়ের প্রতিকৃতি সহ মন্দির প্রদক্ষিন ও মঙ্গল শোভাযাত্রা। উৎসবের দ্বিতীয় দিন সকাল ১১টায় শ্রী রামকৃষ্ণের সর্ব ধর্ম সমন্বয় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বেলুরমঠ রামকৃষ্ণ মিশনের গভর্নিং বডির সদস্য শ্রীমঠ স্বামী দিব্যানন্দজী মহারাজের সভাপতিতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম রামকৃষ্ণ মিশন ও সেবাশ্রমের সম্পাদক শ্রীমঠ স্বামী শক্তিনাথানন্দজী মহারাজ। এ সময় বক্তারা বলেন, রামকৃষ্ণ প্রথমে মা কালীর আরাধনা করেন। তিনি মায়ের কাছে বাসনা রাখেন তা পূরণ করেন। রামকৃষ্ণ তা সাধন করেছেন। যিনি কালী, তিনি বৌদ্ধ, তিনি আল্লাহ, তিনি যীষু। এতেই বলা চলে সৃষ্টিকর্তা এক। কিন্তু তার নাম অনেক। মত অনেক, তবুও আমরা সবাই মানুষ। আত্মা এক কিন্তু রক্তের গায়ে কোন ধর্মের নাম লেখা নেই তবুও আমরা সবাই মানুষ। একজন সন্যাসীকে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে এক মুসলিম মা এসে তার খোজ নেন, সেবা করেন। সেদিন মনে হলো আমরা সবাই মানুষ। মানুষে মানুষে কোন ভেদাভেদ নেই। কিন্তু আমরাই সেই ভেদাভেদ সৃষ্টি করি। যারা ধর্মের ভেতর প্রবেশ করেনি তারাই ভেদাভেদ সৃষ্টি করে। যারা নিজের ধর্মের ভেতর প্রবেশ করে তারা মানুষেমানুষে বিবেদ সৃষ্টি করতে পারে না। স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন, হিন্দু মুসলিম খ্রিস্টান বৌদ্ধ তুমি যা চাইবে সেই ধর্মের অনুসারী হতে পারবে। মানুষ তার নিজের আত্মা হারিয়ে ফেলেছে তাই ধর্ম নিয়ে বিবেদ সৃষ্টি করে। ধর্ম সমন্বয়ের এই কথা কাজে লাগাতে হবে। আমরা আমাদের সন্তানকে যদি সঠিক শিক্ষা দিতে পারি তাহলে আমাদের সমাজে সাম্প্রদায়িকতা থাকবে না। শ্যাম সুন্দর মন্ডলের পরিচালনায় এ সময় বক্তব্য রাখেন ইসলাম ধর্ম সম্বন্ধে দৈনিক চাঁদপুর কন্ঠের প্রধান সম্পাদক রোটাঃ কাজী শাহাদাত, খ্রিস্ট ধর্ম সমন্ধে বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর চার্চ পালক রেভারেন্ড মনীন্দ্র বর্মন, বৌদ্ধ ধর্ম সম্বন্ধে বক্তব্য রাখেন ডাঃ পীযুষ কান্তি বড়–য়া। আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর রামকৃষ্ণ আশ্রমের অধ্যক্ষ স্থিরাত্মানন্দ মহারাাজ। আলোচনা সভা শেষে শতাধিক দুঃস্থ ও অসহায় মানুষের মাঝে শীত বস্ত্র হিসেবে কম্বল বিতরণ করা হয়। বিকেল ৩টায় সংগীত ও নৃত্য বিষয়ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। সন্ধ্যা ৬টায় দ্বিতীয় অধিবেশনে সকলের মা শারদা শীর্ষক ধর্ম আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এতে চট্টগ্রাম মিশন সেবাশ্রম সম্পাদক স্বামী শক্তিনাথানন্দজী মহারাজের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন ঢাকা রামকৃষ্ণ মঠের অধ্যক্ষ স্বামী ধ্রুবেশনন্দজী মহারাজ, অধ্যাপিকা রিতা দত্ত, ইসমত আরা শাফী বন্যা, সবিতা বিশ্বাস, আরতি চাটার্জ প্রমুখ। সবশেষে রাতে সুদাস রক্ষিতের পরিচালনায় সংগীতানুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।