
শরীফুল ইসলাম,
প্রফেসর মিহির লাল সাহা। বর্তমানে সাফল্য ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন চাঁদপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে। তিনি মনে করেন শিার্থীর সাথে শিার্থীর সম্পর্ক হবে পিতা মাতা, সন্তান ও বন্ধুর মতো। শিকরা যতি সময় নিয়মানুবর্তিতা মেনে না চলেন তবে ধ্বংস হয়ে যাবে শিক্ষা ব্যবস্থা। শিক হচ্ছে সেই মোমবাতি যা থেকে শিার্থীরা জ্ঞানের আলো পেয়ে থাকে। তিনি বিশ্বাস করেন আদর্শ শিার্থীরাই পারে বদলে দিতে পৃথিবী। তাঁর সাথে কথা বলতে গিয়ে ওঠে আসে তার শিা ও শিকতা সংশ্লিষ্ট জীবনের নানা চিন্তা নানা বিষয়। তার চুম্বক অংশ আজ পাঠক সমীপে তুলে ধরা হলো ঃ
ক্স শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে নিলেন কেনো?
প্রফেসর মিহির লাল সাহা ঃ শিক্ষকতা একটি মহান পেশা। আমি মনে করি শিক্ষকতা কোনো পেশা নয়, এটি একটি মহান ব্রত। জাতি গড়ার কারিগর হলেন শিক্ষক। আমার শ্রদ্ধাভাজন পিতৃদেব একজন আদর্শ শিক্ষক ছিলেন। তার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে এবং আমার শ্রদ্ধেয় মাতার ইচ্ছায় শিক্ষকতা পেশায় আসা। এই মহান পেশায় নিযুক্ত হতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি।
* শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত?
প্রফেসর মিহির লাল সাহা ঃ শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্ক হবে পিতা-মাতা, সন্তান ও বন্ধুর মতো। একজন শিক্ষক তার ছাত্র-ছাত্রীদের নিজের সন্তান ভাবতে না পারলে, তাঁর শিক্ষকতা করা উচিত নয়। ছাত্র-ছাত্রীগণও শিক্ষকদেরকে পিতা-মাতার মতই শ্রদ্ধা করবে,“শ্রদ্ধাবান লভতে জ্ঞানম”।
* কলেজগুলোতে শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতি একটি প্রকট সমস্যা। শিক্ষার্থী অনুপস্থিতির সম্পর্কে বলুন।
প্রফেসর মিহির লাল সাহা ঃ শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতি বর্তমান শিক্ষাক্ষেত্রে একটি বিরাট সমস্যা। ছাত্র-ছাত্রীগণ রীতিমত কাশে না আসলে, কাশ নিয়মিত না করলে শিক্ষকগণ একা কিছুই করতে পারবেন না। শিক্ষকগণ রীতিমত কাশ করলে সে কখনোই খারাপ রেজাল্ট করে না। ছাত্র-ছাত্রীগণ রীতিমত কাস করা, লাইব্রেরী ও সেমিনার ড়িৎশ করা, শিক্ষকগণের সাথে সুসম্পর্ক রেখে তাদের উপদেশ নেয়া এসব ভালো ছাত্রের বিশেষ গুণ। যে সকল শিক্ষার্থী কাশে অনুপস্থিত থাকে তারাই খারাপ ফলাফল করে থাকে। তাই ভালো ফলাফল পেতে শিক্ষার্থীকে নিয়মিত হতে হবে।
*পর্যাপ্ত ভবন তথা শ্রেণিকক্ষ শিক্ষা পরিবেশের জন্য কতোটা গুরুত্বপূর্ণ?
প্রফেসর মিহির লাল সাহা ঃ সীমিত সংখ্যক কলেজ ব্যতীত প্রায় সব কলেজেই ভবনের অভাব লক্ষ্যণীয়। পর্যাপ্ত শ্রেণীকক্ষ বিভাগীয় প্রধান, বিভাগের শিক্ষকদের জন্য কক্ষ, সেমিনার কক্ষ, পরীক্ষার হল, কলেজের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরী, অডিটরিয়াম ভবন, শিক্ষকদের ওরমেটরী, ছাত্র-ছাত্রীদের কমনরুম, ক্যান্টিন। এ সবের সুষ্ঠু ব্যবস্থা থাকা শিক্ষার পরিবেশের জন্য অত্যাবশ্যকীয়।
শিক্ষকদের সময় নিয়মানুবর্তিতা সম্পর্কে আপনার অভিমত কি?
প্রফেসর মিহির লাল সাহা ঃ শিক্ষকগণ ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়মানুবর্তিতা শিক্ষা দেন। শিক্ষকগণ যদি নিজেরাই তা পালন না করেন, সময়মত কলেজে এসে রীতিমত কাশ না নেন, কাশের প্রস্তুতি নিয়ে ইফেকটিভ কাস না নেন তবে শিক্ষা পূর্ণাঙ্গ হবে না। ধ্বংস হয়ে যাবে শিক্ষা ব্যবস্থা। একজন ভালো শিক্ষক অবশ্যই সময় নিয়ে তিনি রীতিমত কাশ প্রস্তুত করে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে তাদের বোধ্যগম্য পাঠদান করে থাকেন। নিয়মানুবর্তিতা শিক্ষকের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হওয়া উচিত।
শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তা কতটুকু?
প্রফেসর মিহির লাল সাহা ঃ শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবক এই তিনের সমন্বয় ব্যাতীত ভাল ফলাফল অর্জন সম্ভব নয়। শিক্ষকগণ যেমন ছাত্র-ছাত্রীদের ব্যাপারে আন্তরিক হতে হবে। শিক্ষার্থীরাও তেমনি পড়ালেখার ব্যাপারে আগ্রহী হতে হবে এবং অভিভাবকবৃন্দও তাদের সন্তানদের ব্যাপারে সচেষ্ট থাকতে হবে। বলা হয়- “শ্রদ্ধাবান লভতে জ্ঞানং তৎপরঃ সংযতেন্দ্রিয়ঃ”। জ্ঞান অর্জনের জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষকদের প্রতি গুরুজনদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। ইন্দ্রিয় সংযম করে জ্ঞান অর্জনের জন্য তৎপর হতে হবে। আর এ ব্যাপারে তাদের উৎসাহ ও প্রেরনা দাতা হবেন অভিভাবকবৃন্দ। অভিভাবকই হবেন তাদের অনুকরনীয়, আদর্শ ও পথ প্রদর্শক।
ভালো ফলাফল অর্জনে শিক্ষার্থীর করণীয় কি?
প্রফেসর মিহির লাল সাহা ঃ আদর্শ শিার্থীরাই পারে বদলে দিতে পৃথিবী। “ছাত্রনং অধ্যয়নং তপঃ”। তাই অধ্যয়নই হবে ছাত্র-ছাত্রীদের তপস্যা। রীতিমত কাশ করতে হবে। দিনের পাঠ দিনেই প্রস্তুত করতে হবে। লাইব্রেরী-সেমিনার ড়িৎশ করতে হবে। পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি জ্ঞানমূলক অন্যান্য ভাল বই পড়তে হবে। শিক্ষকগণের সাথে সুসম্পর্ক রেখে তাঁদের নির্দেশ মেনে চলতে হবে। নিজের ইচ্ছা শক্তিকে (ফবংরৎব) জাগ্রত করে, লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে (ফরৎবপঃরড়হ) ত্যাগের (ফবফরপধঃরড়হ) মাধ্যমে নিয়মশৃঙ্খলা (ফরংপৎরঢ়ঃরড়হ) মেনে পাঠে মনোনিবেশ করলেই কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে।
শিক্ষার পাশাপাশি সহ-শিক্ষা কার্যকমের ভূমিকা কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ?
প্রফেসর মিহির লাল সাহা ঃ সহ-শিক্ষা কার্যক্রম শিক্ষার পূর্ণতা অর্জনে সহায়তা করে। রোভার স্কাউট, ইঘঈঈ, খেলাধূলা, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে অংশ গ্রহণ ছাত্র-ছাত্রীদেরকে খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে, নৈতিক শিক্ষা গ্রহণে সহযোগিতা করে। নেতৃত্বের দক্ষতা অর্জন, প্রতিযোগীর মনোভাব সৃষ্টি, ব্যক্তিগত দায়িত্ববোধ, আত্মনির্ভরশীলতাবৃদ্ধি, বন্ধুত্ব ও মমত্ববোধ সৃষ্টি, সেবার মানসিকতা সৃষ্টি করতে ও বিনয়ী হতে শেখায়।
ছাত্র রাজনীতি সম্পর্কে আপনার অভিমত কি?
প্রফেসর মিহির লাল সাহা ঃ ছাত্র-ছাত্রীগণ রাজনীতি করবে এটাই স্বাভাবিক। কারন তাদের মধ্য থেকেই আগামী দিনের রাষ্ট্রনায়ক, দেশের কর্ণধার তৈরী হবে। তবে তা হতে হবে সীমিত পর্যায়ে, রাজনীতিতে বেশি রহাড়ষাব হলে তার মূল কাজ লেখাপড়ার ক্ষতি হবে। নিজের লেখাপড়া ঠিক রেখে সীমিত পর্যায়ে রাজনৈতিক চর্চা করা যায়। তবে তা যেন কখনোই অপরাজনীতি না হয়। অপরাজনীতি থেকে অবশ্যই দূরে থাকতে হবে।