কবির হোসেন মিজি
আড়াইশ’ শয্যা বিশিষ্ট চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স দালালদের দৌরাত্ম্য দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। হয়রানির শিকার হচ্ছে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীরা। প্রতিদিন সকাল থেকেই অ্যাম্বুলেন্স দালালরা হাসপাতালের এরিয়ার ভেতর এবং তার বাইরে অ্যাম্বুলেন্স দাঁড় করিয়ে রেখে ওঁৎ পেতে বসে থাকেন কোনো সহজ সরল রোগীদের অপেক্ষায়। কখন হাসপাতাল থেকে রোগীদের ঢাকায় রেফার করা হবে, আর তারা সেই রোগীদের সাথে উন্নত চিকিৎসার নাম করে সাত থেকে আট হাজার টাকার কন্ট্রাক্ট করে অ্যাম্বুলেন্স যোগে ঢাকায় নিয়ে যাবে।
প্রতিদিন হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা আশঙ্কাজনক অনেক রোগীর লোকজনই প্রতারিত হচ্ছে অ্যাম্বুলেন্স দালালদের হাতে। তাদের বিরুদ্ধে এমনও অভিযোগ পাওয়া গেছে, অ্যাম্বুলেন্স দালালরা এখান থেকে ঢাকায় কোনো ভালো হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য রোগীর লোকদের সাথে ৭/৮ হাজার টাকা বায়না করে ঢাকা নিয়ে আরেক হাসপাতালে রোগীকে বিক্রি করে দেয়। অর্থাৎ রোগীকে যে হাসপাতালে নেওয়ার কথা তারা তাকে সে হাসপাতালে না নিয়ে তাদের পরিচিত হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করিয়ে দেয়। এতে করে তারা সে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে দুই, তিন হাজার করে কমিশন পায়। আর সেই কমিশনের লোভেই তারা প্রতিদিন হাসপাতালে এসে প্রতিযোগিতামূলকভাবে অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসা চালিয়ে যান। তাদের এই প্রতিযোগিতার কারণে অনেক সময় তাদের নিজেদের মধ্যেও ঝগড়াঝাটি সৃষ্টি হয়, এমনকি তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। হাসপাতালে থেকে যখন কোনো রোগীকে ঢাকায় রেফার করার কথা শোনে, তখন তারা সবাই দৌড়ে গিয়ে সেই রোগীর লোকজনের কাছে ভিড় জমায়। কার আগে কে নিবে এ নিয়ে কয়েকজনের মধ্যে বাকবিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। বেশ ক’মাস পূর্বে অ্যাম্বুলেন্স দালালদের দু’গ্রুপের মধ্যে ঢাকায় রোগী নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে হাতাহাতির ঘটনা ঘটলে সাংবাদিকসহ স্থানীয় লোকজন তা মিটমাট করে দেয়। এই পরিস্থিতির মাঝে এখন প্রতিদিনই হাসপাতালের সামনে অ্যাম্বুলেন্স দালালদের ভিড় লক্ষ্য করা যায়। তাদের প্রায় ৮/১০টি অ্যাম্বুলেন্স হাসপাতালের সীমানার ভেতর দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। এর মধ্যে কিছু প্রাইভেট গাড়িও অ্যাম্বুলেন্সের ব্যানার লাগিয়ে তা অ্যাম্বুলেন্স হিসেবে ব্যাবহার করা হয়। তাদের অ্যাম্বুলেন্সগুলো হাসপাতালের এরিয়াতে রাখার কারণে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীদের চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। অনেক সময় দেখা যায় হাসপাতালের প্রবেশ গেটের মুখে যানজট লেগে থাকে।
এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিছুক হাসপাতালে ডিউটিরত বেশ ক’জন ডাক্তার জানান, অ্যাম্বুলেন্স দালালরা যখন শুনে এখান থেকে ঢাকায় কোনো রোগীকে রেফার করা হবে তখন তারা সেই রোগীর লোকজনের পেছন ছাড়ে না। তাদের জন্য রোগীর লোকজনের সাথে ঠিক মতো কথাও বলা যায় না। আমরা রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য এক হাসপাতালের কথা বলে দিলে এখানকার অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভাররা তাদেরকে ঢাকায় নিয়ে অন্য
হাসপাতালে ভর্তি করায়। এতে করে দেখা যায় রোগীরা যে চিকিৎসা পাওয়ার কথা তারা সেই সঠিক উন্নত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হয়।
চাঁদপুর সদর জেনারেল হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স দালালদের হাত থেকে মুক্তি পেতে চায় ভুক্তভোগীরাসহ ডাক্তারাও। তাই এমন অ্যাম্বুলেন্স দালালদের বিরুদ্ধে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসনের কঠিন হস্তক্ষেপ কামনা করছেন চাঁদপুরের সচেতন মহল।