চাঁদপুরনিউজ রিপোর্ট
নিষিদ্ধ পলিব্যাগে এখন চাঁদপুরের বাজার সয়লাব হয়ে গেছে। ছোট-বড় সব দোকানেই এখন পলিব্যাগ ব্যবহার হচ্ছে। এই পলিব্যাগ পাইকারী বিক্রি হয় পুরাণবাজার থেকে। পুরাণবাজারের বেশ কিছু দোকান এই পলিব্যাগ দেদার বিক্রি করছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা তাদের থেকে এ পলিব্যাগ ক্রয় করে থাকে। পলিথিনের এমন যথেচ্ছ ব্যবহারে পরিবেশ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। পুরাণবাজারের ব্যবসায়ীরা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এই পলিব্যাগের জমজমাট ব্যবসা করলেও চেম্বার নেতারা কোনো ভূমিকাই রাখছেন না। যেনো তাদের কোনো দায় নেই। অথচ এই পণ্যটি বিক্রি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এই আইন বিরোধী কাজটি করে যাচ্ছেন চাঁদপুর, হাজীগঞ্জ, কচুয়াসহ বিভিন্ন উপজেলা সদরের কিছু ব্যবসায়ী। আর ব্যবসায়ী নেতারা চুপ থেকে এ অন্যায় কাজে সহযোগিতা করছেন।
আশির দশকের শেষের দিকে এবং নব্বই দশকের শুরুর দিকে সারাদেশ পলিথিন ব্যাগে সয়লাব হয়ে গিয়েছিলো। তখন পাইকারীর পাশাপাশি খুচরাও সর্বত্র বিক্রি হতো পলিব্যাগ। খুচরা ১ টাকা ও ২ টাকা করে প্রতি পিচ বিক্রি হতো। মানুষ কাঁচাবাজার থেকে শুরু করে যে কোনো মুদি সদাই এই পলিথিন ব্যাগে বহন করতো। এছাড়া বিভিন্ন প্রসাধনী ও মনোহারী জিনিসও পলিথিন ব্যাগে বহন করা হতো। দোকান থেকে কোনো সদাই ক্রয় করলে দোকানিরা পলিথিন ব্যাগে করেই দিতো। সর্বত্র পলিব্যাগে ছড়াছড়ি ছিলো। এই পলিব্যাগ আগুনে পোড়ানো ছাড়া অন্য কোনোভাবে নষ্ট হয় না। দেখা গেছে যে, এই পলিব্যাগ যেখানে সেখানে ফেলে দেয়া হতো। আর এতে করে ড্রেন, নর্দমা বন্ধ হয়ে গিয়ে পয়ঃনিষ্কাশন বন্ধ হয়ে যেতো। এই পলিব্যাগের কারণে পরিবেশ প্রায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছিলো। ময়লা-আবর্জনা, পুকুর-ডোবা, নর্দমা সর্বত্র শুধু পলিথিন ব্যাগের ছড়াছড়ি ছিলো। এতে তখন পরিবেশ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ে যায়। এমতাবস্থায় ১৯৯১ সালে গঠিত বিএনপি সরকারের সময় তৎকালীন পরিবেশ মন্ত্রী শাহজাহান সিরাজ এই পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন এবং এই আইন অমান্য করলে দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে সংসদে আইন পাস হয়। এ আইনে বলা আছে� এই নিষিদ্ধ পণ্য বিক্রয়, প্রদর্শন, উৎপাদন, মজুদকরণ অথবা বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে পরিবহন করা হলে প্রথমবারের জন্য সর্বোচ্চ ২ বছর সশ্রম কারাদণ্ড অথবা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে অপরাধী। আর একই ব্যক্তি দ্বিতীয়বার এই অপরাধে অভিযুক্ত হলে তাকে সর্বনিম্ন এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড অথবা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।
এই আইন করার পর তখনকার সরকার কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করায় আস্তে আস্তে এই পলিব্যাগ ব্যবহার কমতে থাকে। একটি পর্যায়ে পলিব্যাগ ব্যবহার শূন্যের কোটায় চলে আসে। তখন মানুষও বিকল্প ব্যাগ ব্যবহার করতে শুরু করে। অনেক বছর দেশ পলিব্যাগ মুক্ত ছিলো। কিন্তু বিগত ৫/৭ বছর যাবৎ আবার পলিব্যাগ বাজারে আসতে শুরু করে। সর্বত্র আবার পলিব্যাগ ছড়িয়ে পড়ে। তবে আগের পলিব্যাগ আর বর্তমান পলিব্যাগের সাথে পার্থক্য হচ্ছে : আগে হাতল ছিলো আর এখন হাতল নেই। অর্থাৎ এখন এটিকে পলিথিনের প্যাকেট বলা হয়। আর আগে যেমন সাধারণ ক্রেতাদের কাছে খুচরা একটি দু�টি বিক্রি করা হতো এখন সেভাবে বিক্রি হয় না। এখন দোকানিরা সদাই এই পলিথিনের প্যাকেটে করেই ক্রেতাদের দিয়ে থাকে। মাছ, মাংস, তরিতরকারি, মুদি সদাই সবই এখন দোকানদাররা পলিথিনের প্যাকেটে করে বিক্রি করে থাকে। চাঁদপুরে এখন সব ধরনের দোকানেই পলিথিনের ব্যবহার চলছে প্রকাশ্যে। এখানে গোপন কিছু নেই। কয়েক বছর যাবৎ প্রকাশ্যে পলিথিনের এমন ছড়াছড়ি হলেও ব্যবসায়ী নেতা, প্রশাসন বা পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে কেউই কিছু বলছে না বা কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। পরিবেশ ধ্বংসকারী এ বেআইনী কাজটি যে ব্যবসায়ীরা হরদম করে যাচ্ছে এ বিষয়ে কারো কোনো মাথা ব্যথা নেই। মাঝে মধ্যে দু�একটি অভিযান চালানো হয়েছে। যেমন গত ২৪ এপ্রিল পুরাণবাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে ১শ� ১০ কেজি এই নিষিদ্ধ পলিথিন উদ্ধার করে এবং তিন দোকানদারকে জরিমানা করে। তবে সে সময় পলিথিনের মজুদ করা অনেক দোকান বন্ধ ছিলো।
গতকাল রোববার চাঁদপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকের কার্যালয়ে গিয়ে এ ব্যাপারে কথা হয় উপ-পরিচালকের দায়িত্বে থাকা সহকারী পরিচালক মোঃ আরেফিন বাদলের সাথে। তিনি জানান, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পাওয়া না যাওয়ায় অভিযান চালানো যাচ্ছে না। তাছাড়া আগে আমি পলিথিনের পাইকারি ব্যবসায়ীদের দোকানে অভিযান চালাবো। মজুদ যদি বন্ধ করতে পারি তাহলে খুচরা সরবরাহ এমনিতেই বন্ধ হয়ে যাবে। তারপরও খুচরা দোকানেও অভিযান চালাবো। অভিযান চালানো ম্যাজিস্ট্রেট পাওয়ার উপর নির্ভর করে।