ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির চারটি পাঠ্য বইয়ে ৫৮ অসঙ্গতিসহ ১৮৮টি ভুল পেয়েছে বিশেষজ্ঞ কমিটি। ষষ্ঠ শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক
বিজ্ঞান বইয়ে ১০টি অসঙ্গতি, ২৫টি ভুল; সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে চারটি অসঙ্গতি ও ৫০টি ভুল; ষষ্ঠ শ্রেণির ‘বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ’ বইয়ে ৩৫টি অসঙ্গতি ও ৯০টি ভুল; একই শ্রেণির ‘বিজ্ঞান অনুশীলন পাঠ’ বইয়ে ৯টি অসঙ্গতি ও ২৩টি ভুল পাওয়া গেছে।
চলতি বছর থেকে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী পাঠদান শুরু হয়। বই বিতরণের পর থেকেই শুরু হয় বিতর্ক। এরপর ১০ই ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ’ পাঠ্যপুস্তক দুটি প্রত্যাহার করে নেয় জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। গত ৩১শে জানুয়ারি পাঠ্য বইয়ের ভুলত্রুটি সংশোধনের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক আব্দুল হালিমকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি এই কমিটি তাদের প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সরকারের বিনামূল্যে বিতরণকৃত বই নিয়ে সমালোচনা হয় শুরু থেকেই। নিম্নমানের কাগজের বই বিতরণ ও সময়মতো বই যায়নি শিক্ষার্থীদের হাতে। এরমধ্যে বইয়ে ভুল নিয়ে সমালোচনা হয়েছে বিস্তর।
তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা যায়, ষষ্ঠ শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে রয়েছে ‘রোকেয়োর’, ‘সাহাত্য’, ‘সবখানইে’, ‘সমাজার’। এগুলো হবে ‘রোকেয়ার’, ‘সাহিত্য’, ‘সবখানেই’, ‘সমাজের’।
সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের ভুল ধরা হয়েছে ‘বিশ্লেশন’, ‘বুদ্ধিজবীরা’, তাজউদ্দীন আহমদের নাম লেখা হয়েছে ‘তাজউদ্দিন’। ষষ্ঠ শ্রেণির বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ বইয়ে জিজ্ঞাসু বা অনুসন্ধিৎসু মনের জায়গায় লেখা হয়েছে ‘বৈজ্ঞানিকমন’ ইত্যাদি। ষষ্ঠ শ্রেণির বিজ্ঞান (অনুশীলন) বইয়ে ‘চাঁদ ও সূর্যের পালা’ শিরোনামের নিবন্ধে লেখা হয়েছে ‘অভিশপ্ত চাঁদ’। এটি সংশোধন করে ‘চাঁদের গল্প’।
একই শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে ‘ততদিনে বালক মুজিব পরের জন্য খাটায় উৎসাহ পেয়ে গেছে’ এর পরিবর্তে ‘ততদিনে বালক মুজিব মানুষের জন্য কাজ করার উৎসাহ পেয়ে গেছে’; সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে ‘মুখে গোঁফদাড়ির জঙ্গল’ এর পরিবর্তে ‘মুখে গোঁফদাড়ি’ পড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) বলছে, বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশসহ পাঁচটি উপায়ে এবারের বইগুলোর ভুলত্রুটি ও অসঙ্গতি তুলে আনা হয়েছে। ঈদের পর স্কুল খোলার আগেই যেসব ভুলত্রুটি সংশোধন করা প্রয়োজন, তা শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের কাছে পাঠানো হবে।
এ প্রসঙ্গে এনসিটিবি’র সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মশিউজ্জামান বলেন, ঈদের পর পাঠদান শুরু হলেই প্রতিষ্ঠান প্রধানরা সংশ্লিষ্ট বিষয়ের শ্রেণি শিক্ষকের মাধ্যমে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর পাঠ্যপুস্তকে ভুলত্রুটিগুলো সংশোধন করবেন। আর আগামী বছর তা পরিমার্জিত পাঠ্যপুস্তক হিসেবে বিতরণ করা হবে।