জিয়াউর রহমান বেলাল॥ সারাদেশের অধিকাংশ জেলার ন্যায় বর্তমানে চাঁদপুর জেলার বিভিন্নস্থানেও প্রবল বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। গত পরশু বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মাত্র কয়েক ঘন্টার একটানা প্রবল বর্ষণে এবং গত শুক্রবার ও শনিবার থেমে থেমে বৃষ্টিপাতের ফলে চাঁদপুর পৌরসভার নিন্মাঞ্চল ৩ থেকে ৪ ফুট প্লাবিত হয়। চাঁদপুর পৌরসভার অধীনে মারাত্মক জলাবদ্ধতায় প্লাবিত এলাকাগুলো হচ্ছে : নতুন বাজার এলাকার নাজির পাড়া, মিশন রোড, ছৈয়াল বাড়ি, নতুন বাজার, উকিল পাড়া, বিষ্ণুদী, গুণরাজদী, মাদ্রাসা রোড, তালতলা, গাজী বাড়ি, আদালত পাড়া, প্রফেসর পাড়া, মোল্লাবাড়ি, গুয়াখোলা, কোড়ালিয়া প্রভৃতি। পুরান বাজার এলাকার অনেক নিন্মাঞ্চল এবং নতুন বাজার এলাকার অনেক উঁচু-নিচু স্থান প্রবল বর্ষণে প্লাবিত হয়। এর মধ্যে গোটা নাজির পাড়া এলাকাসহ পৌরসভার বিভিন্ন এলাকার অবস্থা ভয়াবহ। এছাড়া ভারী বৃষ্টিপাত ও প্রবল বর্ষণের দরুন চাঁদপুর পৌরসভার প্রায় অধিকাংশ স্থানে পানি জমে মারাত্মক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এতে নাগরিক দূর্ভোগ চরম আকার ধারণ করে। জলাবদ্ধতায় লোকজন কার্যত: ঘরের মধ্যে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। এছাড়া জলাবদ্ধতার ডিঙ্গিয়ে শত শত ধর্মপ্রাণ মুসল্লিকে অন্যত্র উঁচু স্থানের মসজিদগুলোতে গিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, পবিত্র রমজান মাসের তারাবির নামাজ ও জুমা’র নামাজ আদায় করতে দেখা যায়।
গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতের পর থেকে এবং শুক্রবার ও শনিবার থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হলেও পৌরসভার নিন্মাঞ্চলগুলো থেকে জলাবদ্ধ বৃষ্টির পানি দ্রুত নামতে বা সরতে দেখা যায়নি। এর অন্যতম নেপথ্য কারণ হচ্ছে ; চাঁদপুর পৌরসভায় পরিকল্পিত ও সুষ্ঠু আন্ডার ড্রেনেজের মারাত্মক অভাব। এ ব্যাপারে অভিজ্ঞ ও পর্যবেক্ষক মহল এ প্রতিবেদককে জানান, ‘চাঁদপুর পৌর এলাকায় পরিকল্পিত ও সুষ্ঠু আন্ডার ড্রেনেজের ব্যাপক অভাব রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এ কারণেই জলাবদ্ধতা পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করে পৌরবাসীর দূর্ভোগ চরমে ওঠে। মারাত্মক জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির কারণে সাধারণ মানুষের জীবনে নেমে আসে অবর্ণনীয় দূর্ভোগ। সাধারণ শ্রমজীবী খেটে খাওয়া মানুষ প্রাকৃতিক এই দুর্যোগে ঠিকমতো কোনো কাজ-কর্ম করতে পারেন না এবং আয়-রোজগার থেকে দারুণভাবে বঞ্চিত হয়। চাঁদপুর পৌরসভায় মারাত্মক জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ হিসেবে পরিকল্পিত ও সুষ্ঠু আন্ডার ড্রেনেজের অভাবকেই চিহিৃত করেছেন চাঁদপুর পৌর নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ সহায়তা কমিটির আহ্বায়ক আল্হাজ্ব শাহ্ মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম। তিনি গতকাল শনিবার বিকেলে মুঠো ফোনে এ প্রতিবেদককে আরো জানান, ‘স্রেফ এ কারণেই পৌরসভার নিন্মাঞ্চলগুলো থেকে দ্রুত পানি নামতে বা সরতে পারছে না। এছাড়া চাঁদপুর পৌরসভার নিয়ন্ত্রণে যতোটুকু আন্ডার ড্রেনেজ ব্যবস্থা রয়েছে তার পর্যাপ্ত মনিটরিং এবং নিয়মিত পরিচর্যা না থাকায় বর্তমানে জলাবদ্ধতার পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে’।
একই তথ্য নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চাঁদপুর পৌরসভার ক’জন সচেতন নাগরিকের। তবে তাঁরা একধাপ এগিয়ে এ প্রতিবেদককে আরো জানান, ‘কতিপয় সমাজবিরোধী দুর্বৃত্ত বিভিন্ন এলাকায় কৃত্রিম জলাবদ্ধতা তথা মারাত্মক জনদুর্ভোগ সৃষ্টির জন্য পৌরসভার বিভিন্ন এলাকার আন্ডার ড্রেনেজগুলোর ভিতরে ইট-পাথর ঢুকিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখে। এছাড়া চাঁদপুর পৌর এলাকায় নির্মাণাধীন বহুতল ভবন ও মার্কেটের ইট, পাথর, সিমেন্ট ও বালুতে পৌরসভার আন্ডার ড্রেনগুলো ব্যাপকভাবে ভরে গিয়ে স্বাভাবিকভাবে বা দ্রুত পানি সরার পথ অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। সেইসাথে চাঁদপুর পৌরসভার প্রধান প্রধান আন্ডার ড্রেন এবং বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার সাব-আন্ডার ড্রেনগুলোও বিভিন্ন ময়লা-আবর্জনায় ভরে উঠে। নিয়মিতভাবে তা মনিটরিং এবং পর্যাপ্ত পরিচর্যা তথা পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন না করায় বিভিন্ন এলাকার আন্ডার ড্রেনগুলোর পানি স্বাভাবিকভাবে বা দ্রুত নামতে বা সরতে না পারার কারণে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে। অবশ্য চাঁদপুর পৌরসভার স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে মাঝে মাঝে বিভিন্ন এলাকার আন্ডার ড্রেন এবং বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার সাব-আন্ডার ড্রেনগুলো পরিস্কার করতে দেখা যায়। গতকাল শনিবার দুপুরে চাঁদপুর পৌরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের একটি টীম বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার সাব-ড্রেনগুলোর ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করে। এতে সাব-ড্রেনগুলো দিয়ে জলাবদ্ধ পানি কিছুটা নামতে দেখা যায়। এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানার জন্য গত দু’দিন চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র মহোদয়ের মুঠো ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। এমতাবস্থায় অবিলম্ভে চাঁদপুর পৌরসভার বিভিন্ন এলাকার আন্ডার ড্রেনগুলোর এবং বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার সাব-ড্রেনগুলোর পর্যাপ্ত মনিটরিং এবং নিয়মিত পরিচর্যাসহ উপরোল্লিখিত কারণগুলোর বিষয়ে প্রয়োজনীয় ও কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করে পৌরবাসীকে মারাত্মক জলাবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য চাঁদপুরের সর্বস্তরের সচেতন নাগরিক সমাজ চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র আল্হাজ্ব মো: নাছির উদ্দিন আহম্মদের আশু সু-দৃষ্টি আকর্ষণপূর্বক ত্বরিত হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
শিরোনাম:
শনিবার , ১৭ মে, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ৩ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।