রিফাত কান্তি সেনঃ
প্রতিবন্ধকতা কখনোই সাফল্যকে আটকে দিতে পারে না।আবার যদি বিজ্ঞানী স্টিপেন হকিং এর কথা চিন্তা করি তবে অসাধ্য বলে পৃথিবীতে কিছুই নেই।
সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব মানুষ তাহা যেনো হারে হারে প্রমাণ করলেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সাইফুল।অক্ষমতাকে জয় করে ছিনিয়ে আনলেন বিজয়।এইস,এস,সিতে পেলেন জিপিএ ফাইভ।
জন্মগত ভাবেই দৃষ্টি প্রতিবন্ধি সাইফুল ইসলাম।অদ্রম্য প্রতিভার অধিকারী সে।দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হলেও জীবন যুদ্ধে থেমে নেই অপ্রতিরোধ্য এই বালক।
২০১৭ সালের এইস এস সি পরীক্ষায় ঢাকার মিরপুর বাঙলা কলেজ থেকে জিপিএ ফাইভ পেয়েছে সে।
১৯৯৯ সালের ২ জানুয়ারী দঃ কড়ৈতলী মিজি বাড়িতে জন্ম গ্রহন করেন এই মেধাবী বালক। জন্ম থেকে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সাইফুল দিনমজুর আবুল কালাম ও গৃহিনী রাশেদা বেগমের তিন ছেলে দুই মেয়ের মাঝে একমাত্র শিক্ষিত, অক্ষর জ্ঞান সমৃদ্ধ।
তাদের পরিবারে আর কেউই এতটা শিক্ষার্জন করতে পারেনি।২০০৭ সালে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংগঠন ডিপিওডির নজরে আসে সে।সংগঠনটি তাকে লক্ষীপুরের দালাল বাজারস্ত সমন্বিত দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা কার্যক্রমের (আবাসিক) ভর্তি করিয়ে দেন।
সেখান থেকেই শুরু হয় প্রতিভার বিকাশ।যেনো অনেকটাই গর্ত থেকে টেনে উপরে তোলার মত।সাইফুল উক্ত স্কুল থেকে ২০১৫ সালে এ গ্রেড পেয়ে এস,এস,সি পরীক্ষায় পাস করেন।এরপর ভর্তি হন ঢাকার মিরপুরের বাঙলা কলেজে।মানবিক বিভাগের ছাত্র সে।
সাইফুলের অনন্য এই কীর্তি যেনো আমাদের বর্তমান সমাজকে টনক নাড়ায়।তার পিতা সাংবাদিকদের বলেন,’ভবিষৎ নিয়ে চিন্তায় আছি।দিন মজুর আমি। কি করে চালাবো আগামীর খরচ গুলো।নূন আনতে যে পান্থা পূরায় আমার পরিবারের।
বিষয়টি নিয়ে সাইফুল নিজেও চিন্তিত।সাইফুল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ইচ্ছা পোষণ করেন।
সাইফুলের গ্রামের বাড়ি, ফরিদগঞ্জের ৮ নং পাইকপাড়া ইউপির, দঃ কড়ৈতলী গ্রামে।ফলাফল বের হবার পর থেকে এখন গ্রামটিতে চলছে আনন্দের জোঁয়ার।
উক্ত এলাকার বাসিন্ধা মোঃ আবুল হোসেন বলেন,সাইফুল আমাদের এলাকার গর্ব।ছোটবেলা থেকেই তাকে চিনি।অসীম প্রতিভার অধিকারী দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সাইফুল।
কড়ৈতলী উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী হারুনুর রশিদ বলেন,’ছোটকাল থেকে চিনি সাইফুলকে।প্রতিবন্ধীরা দেশের বোঝা নয় সম্পদ। এটা হারে হারে প্রমাণ করেছেন আমাদের গ্রামের ছেলে সাইফুল।আরো ভাল পৃষ্ঠপোষকতা পেলে ভাল কিছু করতে পারবে ছেলেটি।আমরা সাইফুলের কৃতিত্বে গর্বিত।
ছেলেটা পুরো গ্রামের সম্মান বয়ে এনেছে।
একসময় বলা হতো প্রতিবন্ধিরা দেশের বোঝা। আর সে ধারণা এখন পাল্টে গেছে।প্রতিবন্ধীরা এখন দেশের সম্পদে পরিনত হয়েছে।যার বাস্তব প্রমাণ সাইফুল।বিত্তশালী অনেক পরিবারের সন্তানরা যখন কড়ি কড়ি টাকা থাকা সত্তেও সুশিক্ষা অর্জন করতে পারছে না, ঠিক তখন দিনমজুর পিতার সুশিক্ষিত সন্তান সাইফুল যেনো গোবরের পদ্মফুল হয়ে ফুটে উঠেছে।
সাইফুলের দীর্ঘায়ু কামনা করছি আমরা ও।সাইফুলের মত মেধাবী দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের পাশে ভাল মানুষরা সহযোগিতার হাত বাড়াবে ইহাই প্রত্যাশা।