ফরিদগঞ্জ প্রতিনিধি
সাম্প্রতিক সময়ে ফরিদগঞ্জে হত্যা, ধর্ষণ ও আত্মহত্যার ঘটনা আংশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। এই আত্মহত্যার নেপথ্যে কাজ করছে পারিবারিক দ্বন্ধ-কলহ। মানসিক বিষাদ ও হতাসাগ্রস্ততা থেকে এই প্রবণতা বাড়ছে।
সর্বশেষ গত ৭ মার্চ ফরিদগঞ্জ পৌরসভার নোয়াগাঁও গ্রামের দুবাই প্রবাসী মনির হোসেনের স্ত্রী সীমা আক্তারের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে ময়নাতদেন্তর জন্য লাশ চাঁদপুর মর্গে পাঠানো হয়। এঘটনায় স্থানীয় জনগন ও পরিবারের সদস্যদের ধারণা পারিবারিক কলহ ও দ্বন্ধের কারণে সীমা আত্মহত্যা করে থাকতে পারে।
এদিকে এই ঘটনার দিন ৭ মার্চ সীমার মা পারুল বেগম বাদী হয়ে নিহতের শ^শুর, শ^াশুড়ী ও ননদসহ ৫ জনের নাম উল্লেখ করে আত্মহত্যায় প্ররোচনাদানের অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন। রহস্যজনক এই মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশ ইতোমধ্যে একাধিক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তবে এ ঘটনায় অদ্যবদি কেউ আটক হয়নি।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, পৌর এলাকার কেরোয়া গ্রামের আব্দুল হাই বেপারীর ছোট মেয়ে সীমার সাথে ৪ বছর পূর্বে নোয়াগাঁও গ্রামের মোখলেছুর রহমান (মফু) এর ছেলে মনির হোসেনের বিয়ে হয়। এই বিয়েতে মনিরের বাবা-মায়ের মত ছিলো না। পারিবারিক কলহের কারণে সীমা আক্তার পাশ^বর্তী আব্দুর ছাত্তার সাউদের বাসা ভাড়া নিয়ে গত ৮ মাস যাবৎ বসবাস করে আসছিলো। এছাড়া দাম্পত্য জীবনের শুরু থেকেইে শ^শুর বাড়িতে মানসিক বিপর্যয়ের মধ্যে শুরু হয় সীমার বিবাহিত জীবন।
জানা যায়, ২০১৭ সালে মনির হোসেন পুনরায় বিদেশে চলে গেলে সীমা আক্তারের উপর শ^শুর বাড়ির লোকজনের মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন বেড়ে যায়। পরবর্তীতে সে স্বামীর সাথে পরামর্শ করে পাশ^বর্তী সাউদ বাড়িতে গত প্রায় ৮ মাস পূর্বে জনৈক আ. সাত্তার সাউদের ঘর ভাড়া নেয়। বাড়ির মালিক বৃদ্ধ আব্দুর ছাত্তার ও তার বৃদ্ধা স্ত্রী ওই বাড়িতে থাকেন।
সীমার মা পারুল বেগম এ প্রতিনিধিকে বলেন, বিয়ের কয়েকদিন পর মনির হোসেন বিদেশে চলে যাওয়ার সময় সীমা তার বাবার বাড়িতে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। প্রায় তিন বছর বিদেশে অবস্থানের পর গত বছর সে বাড়িতে আসার আগের দিন সন্ধ্যায় সীমা শশুর বাড়িতে যায়। বিয়ে পরবর্তী এ মধ্যবর্তী সময়ে শ^শুর বাড়ির লোকজন সীমার কোন খোঁজ খবর নেয়নি। যদিও স্বামীর সাথে তার নিয়মিত যোগাযোগ ছিল।
সূত্র মতে, বিয়ের পূর্বে প্রবাসে থাকার সময় মনির হোসেন তার বোন মনোয়ারার ব্যাংক হিসেবে টাকা পাঠাতো। সে টাকা দিয়ে পরিবারের খরচ মিটিয়ে বাকি টাকা জমিয়ে মনির হোসেনকে না জানিয়ে মনোয়ারা তার বাবার সহযোগে জমি ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। পরবর্তীতে তা জানাজানি হলে ছেলে এ নিয়ে বাধা দেয়। এক পর্যায়ে সে জমি কিনতে মনস্থির করে। কিন্তু রেজিস্ট্রি করার সময় মনিরের নামে ৫ শতাংশ রেজিস্ট্রি করে বাকি ৫ শতাংশ তারা নিজের নামে করে নেয়। এছাড়াও বিয়ের পূর্বে আরও ৮ শতাংশ জমি মনির নিজের নামে খরিদ করে মর্মে জানা যায়। তবে মনির হোসেনের বাবা ৫ শতাংশ জমি নিজেদের নামে করে নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন। বিয়ের পর মনির হোসেন তার বাবা-মায়ের সাথে যোগাযোগ এমনকি তাদের ভরণ-পোষণ বাবদ খরচের টাকা দেয়াও বন্ধ করে দেয়। অসহায় বাবা-মায়ের ছেলের এহেন কার্যকলাপ মুখ বুঝে সহ্য করা ছাড়া আর কিছুই ছিল না।
জমি ও পারিবারিক খরচ সংক্রান্ত বিরোধের জেরে ছেলের সাথে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মতবিরোধ চরমে পৌঁছে। বিদেশ থেকে আসার পর সালিশী বৈঠকে বাবা-মায়ের ভরণ-পোষণ বাবদ মাস প্রতি পাঁচ হাজার টাকা ধার্য করে দেয়। মনির হোসেন তা মেনেও নেয়। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে বিদেশ যাওয়ার পর সে তা দিতে টালবাহানা করে। একান্ত নিরুপায় হয়ে তার একমাত্র বোন মনোয়ারা বাবা-মায়ের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেয়। যদিও গত প্রায় এক যুগ ধরেই মনোয়ারা এ দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
মনোয়ারা বেগম বলেন, আলগী বাজারে শ^শুর বাড়ি হওয়া সত্ত্বেও বাবা-মায়ের কথা চিন্তা করে পাশেই ঘর ভাড়া করে ও অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে দিন অতিবাহিত করছি। মনির হোসেন বিয়ের পূর্বে সংসারের খরচ বাবদ নিয়মিত টাকা পাঠাতো। কিন্তু বিয়ে পরবর্তী সময়ে সে খরচ দেয়া বন্ধ করে দেয়।
বাড়ির মালিক আব্দুর ছাত্তার সাউদ জানান, ঘটনার দিন ভোরে তার স্ত্রী তাদের পাশের ঘরে ভাড়াটিয়া সীমাকে নামাজ পড়ার জন্য ডাকতে দরজায় ধাক্কা দিলে দরজাটি খুলে যায়। পরে তিনি জানালার সাথে ওড়না দিয়ে গলায় পেঁচানো ও অর্ধ বসা অবস্থায় সীমার লাশ দেখতে পান। তিনি আরো জানান, রাতে তারা মোবাইল ফোনে (সম্ভবত স্বামীর সাথে) ঝগড়া করতে শুনছেন সীমাকে।
এ দিকে ফরিদগঞ্জ থানার ওসি মো. শাহ আলমের কাছে সীমার মৃত্যু সর্ম্পকে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনো পোষ্টমর্টেম রির্পোট থানায় আসেনি। রির্পোট পাওয়া গেলে মৃত্যুর কারণ সর্ম্পকে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
চাঁদপুর নিউজ সংবাদ