ফরিদগঞ্জ প্রতিনিধি:পাট ও কাপড় দিয়ে বিশেষ ধরনের জুতা তৈরি করছে চাঁদপুরের নারীরা। টেকসই এবং আকর্ষণীয় হওয়ায় দেশের বাজারে এর চাহিদা ব্যাপক। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এসব জুতা এখন রপ্তানি হচ্ছে ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে। চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার সাহাপুর ও মিরপুর গ্রামের প্রায় দুই শতাধিক পরিবার তাদের জীবিকা নির্বাহ করছে জুতা তৈরি করে।
প্রতি বাড়িতেই নানা বয়সী নারী এ কাজে নিয়োজিত। যেসব নারী এক সময় শুধু গৃহস্থালির কাজ করত, তারা এখন জুতা তৈরি করে আয়ের মুখ দেখছে।
জুতা তৈরির সঙ্গে জড়িত সাজেদা বেগম, মাজেদা খাতুনসহ অন্যরা জানান, স্বামীদের আয়ে সংসার চালাতে তাঁদের কষ্ট হচ্ছিল। এখন তাঁরাও আয় করতে শিখেছেন। সন্তানদের পড়াশোনার খরচও জোগাড় হচ্ছে। তাঁরা বলেন, ‘আমাদের হাতের তৈরি জুতা বিদেশে যায়, বিদেশি মানুষ সেলাই করা জুতা পরে_এটা আমাদের জন্য খুবই আনন্দের।’
সাহাপুর ও মিরপুর গ্রামের নারীদের অনন্য এই সুযোগটি করে দিয়েছে সোনালি আঁশ গ্রুপ নামের একটি স্বনামধন্য শিল্পপ্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় প্রতিনিধি আক্তার হোসেন পাটোয়ারী জানান, দেশের বিশিষ্ট শিল্পপতি নূরুল ইসলাম পাটোয়ারী নিজ গ্রামের দরিদ্র মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এমন উদ্যোগ নিয়েছেন। প্রতি মাসে এখানে উৎপাদিত ৩০ থেকে ৩৫ হাজার জোড়া জুতা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়। তিনি আরো জানান, বর্তমানে ফ্রান্সে একটি বড় চালান পাঠানোর জন্য দ্রুত গতিতে কাজ চলছে। এ জন্য দিন-রাত বিভিন্ন বয়সের নারীরা জুতা তৈরির কাজে ব্যস্ত রয়েছে। মানসম্মত ও আরামদায়ক হওয়ায় দিন দিন বিদেশে এই জুতার চাহিদা বাড়ছে।
জানা গেছে, এই জুতা তৈরির প্রধান উপকরণ আসে কুমিল্লার দাউদকান্দির একটি কারখানা থেকে। পাট এবং কাপড়ের তৈরি এসব জুতার ফিনিশিং দেওয়া হয় হাতের বুননের মাধ্যমে। আর এই নিখুঁত কাজটি করা হয় মিরপুর ও সাহাপুর গ্রামে। মহিলা ও শিশুরা তাদের বাড়িতে বসে কাজটি সম্পূন্ন করে আবার মূল কারখানায় পাঠিয়ে দেয়। এক জোড়া জুতা সেলাই করতে তাদের দেওয়া হয় পাঁচ টাকা। একজন দিনে অন্তত ৩০ জোড়া জুতা তৈরি করতে পারে। তৈরি জুতার চালান সপ্তাহে তিনবার পাঠানো হয় নির্ধারিত কারখানায়। পরে সোনালি আঁশ গ্রুপ কর্তৃপক্ষ এগুলো রপ্তানি করে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে।
জুতা তৈরির এই কাজে প্রথমে গ্রামের কয়েকজনকে কম্পানির পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। পরে একে অপরের কাছ থেকে শিখে এখন সবাই এই কাজে পারদর্শী ।
চাঁদপুর নিউজ সংবাদ