মোঃ নাজমুল হাসান (বাঁধন)
প্রি-পেইড মিটার নামক এক টেনশন বসানো হয়েছে জনাব হাকিম আলী। ঢাকার একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকুরী করেন। মাসে বেতন পান ২০ হাজার। দুই সন্তানের জনক হাকিম আলী ১০ হাজার টাকায় একটি টিনসেড বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন। জনাব হাকিম আলীর মনে খুব কষ্ট। ঢাকার জীবনযাপনের খরচ ইতিমধ্যে কানাডার টরেন্টো শহরের চেয়েও বেশি হয়ে গেছে! বিনিময়ে আমরা কি পাচ্ছি? কোন সেবাটা ঠিকঠাক মতো মিলছে? কোথায় পাবো এই প্রশ্নের জবাব?ইদানিংকালে ঘাড়ের উপর প্রি-পেইড মিটার নামক এক টেনশন বসানো হয়েছে। যার কারণে সারাদিনই দুঃশ্চিন্তায় ভুগে হাকিম আলী। যত ভোগান্তি সব কি জনগনেরই? অথচ দলীয় নেতারা নাকি জনগনের শান্তি চায়। কিন্তু জনগন কি চায় সেটাকি জনগনের কাছে জানতে চায়? জনগনের টাকায় নিজের বিলাসিতা মেটান আর জনগনকে রসাতলে ভোগান। একজন বিদ্যুৎ মিটার রাইডার যে কয়েক বছর আগে বাসা বাড়ি ঘুরে বিল লিখত সে আজ দলীয় এমপি, শত কোটি টাকার মালিক! সাবেক প্রেসিডেন্ট ইয়াজুদ্দিন আহম্মেদের গড়া বিশ্ববিদ্যালয় দখল করে নিয়েছে। যা ইচ্ছে তাই করছে আর করবেইবা না কেন? এগুলো কি এভাবেই হয়। অত্যাচার সইতে সইতে জনগন এখন নিষ্প্রাণ হয়ে গেছে। জনগনের মাথায় কাঠাল ভেঙ্গে সব দলীয় মজা লুটে। সাধারণ জনগনকে মানুষ মনে হয় না কোন দলেরই। তবে আমরা এখন কেন জানি সইতে সইতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। এক সাপ্তাহিক ছুটির বিকেলে বাড়িওয়ালা এসে জনাব হাকিম আলীকে একটা এটিএম কার্ড হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো, আপনাদের বিদ্যুতের মিটার পরিবর্তন হয়েছে। এখন থেকে প্রি-পেইড মিটার! আগে বিল দিন, পরে বাতি জালান! কিছুদিন আগেইতো এনালগ মিটার পরিবর্তন করে ডিজিটাল মিটার লাগানো হলো। তাহলে এখন আবার প্রি-পেইড কেন? যেখানে বিদ্যুৎখাতে বিদ্যুৎ বিভাগ এখনো স্বয়ং সম্পূর্ণ না সেখানে তারা এত্ত বেশি অত্যাধুনিকতা দেখানো হাস্যকর ছাড়া আর কি? জনাব হাকিম আলী খুবই বিরক্ত হইলেন। আমরা কর্মজীবী মানুষ। আমাদের পক্ষে এটা মনে রাখা খুবই মুশকিল যে, কবে আগের মাসের বিল দিয়েছি। ব্যালেন্স কত আছে। কবে পরের বিল দিতে হবে, ইত্যাদি। ঠিকভাবে মনে রাখতে না পারলে হুট করে, যে কোন ছুটির দিনে অথবা মধ্যরাতে বিদ্যুৎ চলে যেতে পারে। বাকি রাতটা কি তখন অন্ধকারে কাটাবো। এইতো সেদিন পাশের বাড়ির বন্ধু জাবেদের মিটারের টাকা শেষ হলো সকালে। সে বিদ্যুৎ অফিসে গিয়ে দুই ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে ১৪০ ডিজিটের একটি নাম্বার আনলো। বাড়ি এসে ১৪০Ⅹ৩=৪২০ (ভুল হলে আবার প্রথম থেকে) বার নাম্বার চেপে টাকা লোড করতে সক্ষম হলো। ব্যালেন্স চেক করে দেখে ২১৫ টাকা লোড হয়েছে। এমনিতে কম পেলো পেলো। আবার বেচারির বিদ্যুৎও আসে নাই। মরার উপর খাঁড়ার ঘাঁ। তখন রাত ৮টা। বিদ্যুৎ অফিসের অভিযোগ কেন্দ্রের ফোন নাম্বারে ৮৬বার ফোন দিয়েও বিদ্যুৎ অফিসের লোকদের সাথে কথা বলা গেলো না। বাধ্য হয়ে বিদ্যুৎ অফিসে গিয়ে দেখে কল না ধরা লোকটি দিব্যি পত্রিকা পড়া নিয়ে ব্যস্ত। কল আসে কিন্তু রিসিভ করে না। প্রি-পেইড মিটারের সমস্যা বলার পর বলে, আমরা কিছু জানিনা, এইটা কোম্পানি জানে।, ওমা কোম্পানীর কেউ যদি গিয়ে বাড়িতে মিটার লাগানোর কথা বলতো ঠ্যাং ভেঙ্গে দিতাম। কিন্তু আপনারা গিয়ে আমাদের হুমকি ধমকি দিয়ে মিটার লাগিয়ে এখন বলেন আপনারা জানেন না। ফাইজলামি করেন মিয়া। খুবই বিরক্তি লাগলো। কিন্তু আমাদের বিরক্তিতে কারো কিছু আসে যায় না। এটাই নাকি নিয়ম! অতএব, গজগজ করে হলেও সেটা না গিলে উপায় নেই। কিছুদিন আগে এক তথ্য মেলায় বিদ্যুৎ অফিসের নির্বাহী সাহেব বলেন, আমরা বিদ্যুৎখাতে স্বয়ং সম্পূর্ণ। আমরা দেশের বহু উন্নতি সাধন করেছি। উনাকে এক প্রশ্ন করলাম যে ভাই, এনালগে ছিলাম দিলেন ডিজিটাল দেড় মাস না যেতেই আবার প্রিপেইড মিটার দিলেন। এই যে দু’ দিন পর পর মিটার বদলান আর আমাদের থেকে তার দাম আদায় করেন। ভাই কোর্ট টাই পড়ে অফিসে বসে থাকেন আর আমগো পাছা দিয়া লাল রক্ত বাহির করেন। টাকা রিচার্জ করতে গেলে সার্ভিস চার্জ রাখেন, ডিমান্ড চার্জ রাখেন, এরিয়া রিকভারি রাখেন, মিটার রেন্ট রাখেন। আবার বড় বড় গলায় বলেন, এখন থেকে বিদ্যুৎ যে টুকুই খরচ করবেন শুধু সেইটুকুরই বিল দিবেন। ভাই এইরকম নটাঙ্কি মার্কা কথা বলেন কেন? উনি উত্তর দিলেন না। গতকাল রাতে জানা গেল যে, আমাদের মিটারে লাল বাতি দেখাচ্ছে। ফলে অফিস থেকে ফিরে রিচার্জ করতে গেলাম। বাসা থেকে ৪০ টাকার রিকশা ভাড়ার পথ। যাওয়া-আসা ৮০ টাকা। এই ভর রাতেও লম্বা লাইন। ২০০০ টাকা রিচার্জ করলাম। ১৬৮৪ টাকা আমার একাউন্টে জমা হয়েছে। বাকি ৩১৬ টাকা সঙ্গে সঙ্গে গায়েব হয়ে গেছে। সার্ভিস চার্জ নাকি ২০ টাকা। কিসের সার্ভিস চার্জ? যারা ওখানে কাজ করছে তাদের? অফিস ভাড়া? কর্মচারীদের বেতন? সেটা কি সরকার দিচ্ছে না? এসবের কোন একটা হলেও, সেটা আমি কেন দিবো? আগের মতো বাড়ি বাড়ি মিটার রিড করার ব্যাপার নাই। তাহলে সার্ভিসটা কিসের? ডিমান্ড চার্জ ১২০ টাকা। কিসের ডিমান্ড? কার ডিমান্ড? কে ডিমান্ড করেছে? আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, তারা জবাব দিতে পারে নাই। আমি অনেক চেষ্টা করেও এই লাইনের অর্থ উদ্ধার করতে পারি নাই। ভ্যাট ৯৫ টাকা! সরকার জনগণের টাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে, অথবা ক্রয় করছে। সেই বিদ্যুৎ আবার জণগনের কাছে অত্যন্ত উচ্চমূল্যে বিক্রি করছে। বছর বছর সেই বিদ্যুতের দাম বাড়াচ্ছে। আমার টাকায় কেনা বিদ্যুৎ আমার কাছে বিক্রি করছে, আবার সেই বিদ্যুতের দামের উপর ভ্যাট? এটা কেমন কথা? এর পরেরটা আরও অদ্ভুত! জোর করে একটা মিটার ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। আমি তো চাইনি এই প্রি-পেইড মিটার? এখন আমার কাছ থেকে আবার সেই মিটারের দাম রাখা হচ্ছে। আমি তো এই বাসায় ভাড়াটিয়া, যদি মিটারের দাম কেউ দিতে হয়, তাহলে সেটা হয়তো সরকার দেবে অথবা বাড়িওয়ালা দেবে। আমি কেন দেবো? আমি কি এই বাসা ছেড়ে যাওয়ার সময় এই মিটার খুলে নিয়ে যাবো? ২০০০ টাকা অগ্রিম দেয়ার পর যদি ৩১৬ টাকা নাই হয়ে যায়, খুব গায়ে লাগে না বলুন তো? প্রায় সব ধরনের সব্জির দাম ৬০ থেকে ৮০ টাকা! পেঁয়াজের কেজি ৮০/৯০ টাকা! চালের দামের কথা আর নাই বা বললাম। এই শহরে, যেখানে ৩৮ ভাগ মানুষ বস্তিতে থাকে, তার ঘর সংসার কে সামলাবে? কোত্থেকে আসবে এত রোজগার? যা জনগন চায় না। সেটা জনগনের উপর চাপিয়ে দিয়ে উন্নতি সাধন এইটা কোন উন্নতি। কোম্পা