খোঁজ নিয়ে জানা যায়, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে চলতি বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। সরকারিভাবে বিদ্যালয়সমূহ বন্ধ থাকার মধ্যেই বাড়িতে মূল্যায়ন পরীক্ষা নেয়ার নামে গত মাসের শেষের দিকে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সকল শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয়ে ডেকে পাঠায়। সেখানে পরীক্ষা নেয়ার বিষয়ে পরীক্ষার ফিসহ (বকেয়া সেশন ফি, বেতন ও পরীক্ষা ফি) বকেয়া বেতন পরিশোধ করার তাগিদ দেয়া হয়। বেশ কয়েকজন অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যেখানে সরকার স্কুল-কলেজ বন্ধ রেখেছে, এইচএসসি পরীক্ষার মতো পরীক্ষা নিচ্ছে না করোনা সংক্রমণের কারণে, সেখানে বাকিলা উচ্চ বিদ্যালয় আমাদের বাচ্চাদের পরীক্ষার নামে বিদ্যালয়ে ডেকে এনেছে। ব্যাংকে টাকা জমা দেয়ার নামে করোনা ঝুঁকিতে ফেলছে। এটা কোন্ দেশি নিয়ম? এরা কি সরকারি নিয়মের বাইরে কিংবা সরকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে?
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থীর বেতন ১শ’ টাকা, ৮ম শ্রেণির ১শ’ ২০ টাকা এবং নবম ও দশম শ্রেণির বেতন ১শ’ ৫০ টাকা। ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির পরীক্ষার ফি ১শ’ ৫০ টাকা এবং নবম ও দশম শ্রেণির পরীক্ষার ফি ১শ’ ৭০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিদ্যালয় সূত্রে আরো জানা যায়, চলতি মাসের ৫ থেকে ১০ তারিখের মধ্যে পরীক্ষার ফিসহ বকেয়া বেতন পরিশোধের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের মাঝে পরীক্ষার প্রশ্ন ও খাতা বিতরণ করা হবে। পরীক্ষার প্রশ্ন ও খাতা পাওয়ার পর শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ বাড়িতে পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করবে এবং আগামী ১৭ থেকে ১৯ অক্টোবরের মধ্যে বিদ্যালয়ে এসে পরীক্ষার খাতা জমা দিতে হবে।
এদিকে পরীক্ষার প্রশ্ন ও খাতা গ্রহণের প্রথম দিনে গতকাল সোমবার বাকিলা উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসেবে শিক্ষার্থীরা তাদের বকেয়া বেতন ও পরীক্ষার ফি ব্যাংকে জমা দিতে বেতনের বই নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে সীমাহীনভাবে ভিড় করতে থাকে। এ সময় শিক্ষার্থীদের সামাজিক দূরত্ব, মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ কোনো ধরনের সচেতনতামূলক কোনো ব্যবস্থাগ্রহণ করতে দেখা যায়নি। এতে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকির আশঙ্কা করছেন সচেতন অভিভাবকমহল। তারা বিদ্যালয়ের এমন কার্যক্রমের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
কয়েকজন অভিভাবক বলেন, করোনাকালে অনেক অভিভাবক কর্মসংস্থান হারিয়ে বেকার আছেন। বিশেষ করে নিম্নবিত্ত ও দরিদ্র শ্রেণির অভিভাবকগণ সবচে বেশি আর্থিক সংকটে পড়তে হয়েছে। অথচ এই আর্থিক সংকটের মুহূর্তে পরীক্ষার নামে বকেয়া বেতনসহ পরীক্ষার ফি দেয়া কতোটা মানসিক চাপে ফেলেছে তা শুধু ভুক্তভোগীরাই জানে। অধিকাংশ অভিভাবক অন্যদের সাথে তাল মিলাতে গিয়ে ছেলে-মেয়েদের স্কুলের বেতন ও পরীক্ষা ফি দিতে গিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন। অপরদিকে ছেলে-মেয়েদের বিদ্যালয়ে ডেকে নিয়ে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলছেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে স্থানীয় অভিভাবক অমল কান্তি ধর জানান, আমার ছেলে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। বিদ্যালয়ে ছেলেকে ডেকে নিয়ে বলেছে তাকে সব মিলিয়ে ১৪শ’ ৫০ টাকা পরিশোধ করার জন্যে। আমি ১ হাজার টাকা দিয়ে ছেলেকে ব্যাংকে পাঠিয়েছি।
মোঃ শরিফ হোসেন নামে অপর এক অভিভাবক জানান, আমার সন্তানের ১ হাজার ৩শ’ ৭০ টাকা পরিশোধ করার জন্যে বিদ্যালয় থেকে বলা হয়েছে। আমি ব্যাংকে ১ হাজার টাকা জমা দিয়ে রসিদ নিয়েছি। এই রসিদ বিদ্যালয়ে জমা দিলে প্রশ্ন আর খাতা দিবে।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ মজিবুর রহমান বলেন, বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় অনলাইনে ক্লাস নেয়া হয়েছে। তাই শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মূল্যায়ন পরীক্ষা নেয়া হবে। সরকারি নির্দেশনা নেই স্বীকার করে তিনি বলেন, পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের সাথে আলাপ-আলোচনা করে বাড়িতে পরীক্ষা নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতন আদায়ে বাধ্য করা হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে মোঃ মজিবুর রহমান বলেন, এটি মিথ্যা কথা। বেতন ও পরীক্ষার ফি আদায়ে কাউকে বাধ্য করা হচ্ছে না। যে যা পারছেন তা পরিশোধ করছেন। কেউ বেতন না দিলেও পরীক্ষা ফি দিয়ে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে ।
করোনাকালীন পরীক্ষা বেতন কিংবা সরকারি নির্দেশনার বিষয়ে বিদ্যালয় অভিভাবক সদস্য হোসেন লিটন বলেন, আমি নিজে শিক্ষার্থীদেরকে আজকে বলেছি পরীক্ষার ফি জমা দিয়ে পরীক্ষার প্রশ্ন ও খাতা নিয়ে নিতে।
অপর অভিভাবক সদস্য রবিউল আলম অরুণ বলেন, বিদ্যালয় আমাদেরকে না জানিয়ে এমন দিদ্ধান্ত নিয়েছে। অনেক অভিভাবক আমাকে বিষয়টি জানিয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, পরীক্ষা নেয়ার ব্যাপারে সরকারি কোনো নির্দেশনা নেই। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থেকেও কোনো বিদ্যালয়কে এ ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি। আর মাসিক বেতন নেয়ার তো প্রশ্নই আসে না।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ের ডেকে আনা এবং তাদের কাছ থেকে বেতন ও পরীক্ষা ফি আদায় বন্ধ করার বিষয়ে বাকিলা উচ্চ বিদ্যালয়কে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্দেশনা অমান্য করলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিতকরণসহ বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বৈশাখী বড়ুয়া বলেন, সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরীক্ষার নামে অর্থ আদায়ের অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ গিয়াস উদ্দিন পাটওয়ারী বলেন, আজ সোমবার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে সহকারী মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ জাকির হোসেনসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বাকিলা উচ্চ বিদ্যালয় পরিদর্শন করে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করার নির্দেশনা দিয়েছেন। তাছাড়া আমি বিদ্যালয়ের সভাপতির সাথে কথা বলেছি, তিনি বিষয়টি জেনে আমাকে অবহিত করবেন।
চাঁদপুর নিউজ সংবাদ