মিজান লিটন ॥
ভালোবাসার নির্মম প্রতিদান, ফরিদগঞ্জে এক কিশোরীকে ধর্ষণ শেষে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা যায়, ফরিদগঞ্জে জেসমিন আক্তার (১৬) নামে এক কিশোরীকে ধর্ষণ শেষে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করা হয়েছে। হত্যা শেষে ঘটনা অন্যদিকে প্রবাহিত করতে কিশোরীর লাশের পাশে বিষের বোতল রেখে যায় হত্যাকারীরা।
গত ২৫ জানুয়ারি রোববার গভীর রাতে ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৯নং গোবিন্দপুর ইউনিয়নের হরিণা গ্রামে এ ঘটনার খবর পাওয়া গেছে।
ওই গ্রামের নিরীহ হতদরিদ্র চুন্নু মিয়ার তৃতীয় কন্যা জেসমিন আক্তারের সাথে প্রায় এক বছর পূর্ব থেকে একই এলাকার অলু শেখের পুত্র বাবু শেখ (২৪)-এর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। কিশোরী জেসমিন আক্তার ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে মনে প্রাণে বিশ্বাস করে ভালোবেসে যায় বাবু শেখকে। ভালোবাসার মানুষকে আরো কাছে পাওয়ার জন্য গত ৬ মাস পূর্বে বাবু শেখ একটি মোবাইল সেটও কিনে দেয় জেসমিনকে। এভাবেই প্রতিদিন মুঠোফোনের মাধ্যমে কথা বলতে বলতে গভীর হয়ে উঠে তাদের দুজনের প্রেমের সম্পর্ক। আর সেই সম্পর্কের টানেই প্রেমিকের সাথে দেখা করতে গত ২৫ জানুয়ারি গভীর রাতে মায়ের চোখ ফাঁকি দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায় জেসমিন আক্তার। কিন্তু পরদিন সকালে তাদের বাড়ি থেকে প্রায় ১২ শ’ গজ দূরে একটি আবাদশূন্য ধান েেত জেসমিনের লাশ পড়ে থাকতে দেখে এলাকাবাসী। পরে লাশ উদ্ধার করে ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ। লাশের পাশে পাওয়া যায় বিষের বোতল।
রাত শেষে ভোরে জেসমিনের বাবা-মা মেয়েকে খুঁজে না পেয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন। সকাল ৯টায় ওই গ্রামের ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা স্কুলে যাওয়ার পথে জেসমিনের লাশ ধান েেত পড়ে থাকতে দেখে তার বাবা-মাকে জানালে তারা এলাকার চেয়ারম্যান-মেম্বারের শরণাপন্ন হন। পরে স্থানীয় চেয়ারম্যান ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশকে লাশের ঘটনার কথা অবহিত করলে পুলিশ সেখান থেকে লাশ উদ্ধার করে। কিন্তু জেসমিনের ব্যবহৃত ০১৮৬১৯৫৬৬৭৩ নম্বরের মোবাইলটি কাছে পাওয়া যায়নি। তার লাশের পাশে পাওয়া যায় ছোট্ট বিষের বোতল। যা হত্যাকারীরা পরিকল্পিতভাবে সেখানে রেখে যায় বলে জেসমিনের পিতার অভিযোগ করেন। যাতে মানুষ বুঝতে পারে জেসমিন বিষপানে আত্মহত্যা করেছে। আর পরদিন চাঁদপুরের বিভিন্ন পত্রিকায় ঠিক তাই লেখা হয়েছে। অথচ বিষপানে আত্মহত্যাকারী একজন লাশের শরীর এবং মুখে যে আলামত থাকার কথা পুলিশ তার কিছুই দেখতে পায়নি। বিষের বোতলের কর্কটি অনেক শক্ত করে আটকানো ছিলো।
লাশের শারীরিক অবস্থা দেখে পুলিশ এবং স্থানীয় লোকজন ধারণা করেছে, জেসমিন বিষপান আত্মহত্যা করে নি, তাকে হয়তোবা নির্যাতন করে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করা হয়েছে। পরে গত মঙ্গলবার দুপুরে চাঁদপুরে জেসমিনের লাশের পোস্টমর্টেম করা হয়। পুলিশের রিপোর্টেও বেরিয়ে আসে জেসমিনকে ধর্ষণ করা হয়েছে। আর এতেই ধারণা করা হচ্ছে, ওইদিন গভীর রাতে জেসমিনের প্রেমিকা বাবু শেখ তাকে মিথ্যে প্রেমের ফাঁদে ফেলে পালিয়ে যাওয়ার কথা বলে ঘর থেকে এনে রাতের আঁধারে বাবুসহ তার সাথে থাকা অজ্ঞাত আরো বেশ ক’ জন যুবক মিলে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। তাদের নির্যাতনের শিকার হয়ে জেসমিন কান্ত হয়ে পড়লে বাবুর প্রতারণার মুখোশ খুলে যাবে বলে সে জেসমিনকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে মুখে বিষ ঢেলে দেয়। ঘটনার পর বাবু শেখ পালিয়ে বেড়াবারও অভিযোগ পাওয়া যায়।
এদিকে চুন্নু মিয়া এলাকায় মেয়ের হত্যার অভিযোগ উঠালে বাবু শেখের মামা নুরুল ইসলাম ওরফে লেদা এবং তাদের পরে এক নারী চুন্নু মিয়া ও তার পরিবারকে বিভিন্নভাবে হুমকি ধমকি প্রদান করে। সহজ-সরল, হতদরিদ্র ও নিরীহ চুন্নু মিয়া অকালে মেয়েকে হারিয়ে মেয়ে হত্যার বিচারের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তিনি হাউমাউ করে কেঁদে বলেন, যারা আমার সহজ-সরল মেয়েকে মিথ্যে প্রেমের প্রলোভনে অমানবিকভাবে নির্যাতন করে হত্যা করেছে, আমি প্রশাসনের কাছে আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই।
তিনি বলেন, বিচারের জন্য কারো কাছে কোনো কথা বললেই হত্যাকারীরা আমাকে নানাভাবে হুমকি প্রদান করে। আমি গরীব নিরীহ বলে কি আমার মেয়ে হত্যার কোনো বিচার হবে না? তিনি আরো জানান, তার টাকা-পয়সা নেই বলে কোর্টে মামলা করার সামর্থ্য হয়নি। তাই তিনি মানুষের পরামর্শ অনুযায়ী জেলা লিগ্যাল এইডের মাধ্যমে মেয়ে হত্যা বিচারের জন্য মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।