মিজান লিটন
রূপালী ইলিশের রাজধানী খ্যাত চাঁদপুরে মওসুমের শুরুতেই দেখা দিয়েছে ইলিশের আকাল। প্রতিদিন শ’ শ’ জেলে মেঘনা নদীর বিস্তীর্ণ এলাকা চষে বেড়ালেও কাক্সিক্ষত ইলিশের দেখা মিলছে না। চরম দুর্দিন যাচ্ছে জেলে পাড়ায় ধার-দেনা করে এখন। জীবন চালাচ্ছে তারা।
সরজমিনে চাঁদপুর মাছ ঘাটে গিয়ে দেখা যায় সকাল-বিকেল যৎ সামান্য ইলিশ আড়তে আসছে। ছোট ছোট ইলিশের পোনা থেকে শুরু করে বিভিন্ন সাইজের সে ইলিশের দামও আকাশ ছোঁয়া। পরিপক্ক ইলিশ হলেই বাছাই করে রাখার পর ৬০-৬৫ হাজার টাকা মণ দর শুনে পাইকারদের কাছে ভিড়তে চাচ্ছে না। বিকেল ৫টায় আড়তের সামনে খুচরা বিক্রেতার কাছ থেকে জনৈক ব্যক্তি বাড়িতে মেহমান আসায় ঘাটে এসেছে ইলিশ কেনার জন্য। ২টি ইলিশ ২ কেজি ৫শ’ গ্রাম ওজনের ৩ হাজার ৫শ’ টাকা দিয়ে কিনতে হয়েছে। ইলিশ মওসুমে ২টি ইলিশের দাম এতো টাকা দিয়ে কেনার সামর্থ্য ক’জনেরই বা আছে। মাছের আকাল থাকায় এমন পরিস্থিতি বলে আড়ৎদার ও পাইকারি মাছ ব্যবসায়ীরা এ প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন। পাশেই মেজবাহ মালের আড়তে ৮/১০ কেজি ওজনের কিছু মাছ উঠেছে। ছোট-বড় সাইজের ইলিশ পৃথক করে দাম হাঁকা হচ্ছে। দাম বেশি চাওয়ায় ক্রেতাদের আগ্রহ কম। ৩নং কয়লাঘাটে গিয়ে দেখা যায় ইলিশ শিকারে ৮/১০টি জেলে নৌকা ঘাটে বাধা। নদীতে মাছ না পাওয়ায় দিনের অধিকাংশ সময় জেলেরা অলস সময় কাটাচ্ছে। কেউ উপরে উঠে চায়ের দোকানে বসে টিভি দেখে সময় কাটাতে দেখা যায়। ইলিশ মওসুম শুরু হলে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রায় শতাধিক জেলে নৌকা কয়লা ঘাটে এসে অবস্থান নেয়। নদীতে মাছ কম ধরা পড়ায় অনেক নৌকা দেশে চলে গেছে। ক’জন জেলে জানায়, নদীতে পানির বান নেই, রাগ নেই, নেই স্রোত। ইলিশ মিঠা পানি ও গভীর পানির মাছ। পর্যাপ্ত পানি নদ-নদীতে না হওয়ায় ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। মহাজন থেকে দার দেনা করে জেলেরা এখন চলছে।
জেলেরা আরো জানায়, নদীতে দু’ খেও দিয়ে তেলের খরচও উঠছে না। তাদের আশা রমযান মাসে আল্লাহ চাইলে মাছ পাওয়া যাবে। সিজনে ইলিশ না পাওয়ার কারণ হিসেবে ইলিশ জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা প্রজনন মওসুমে ব্যাপক জাটকা নিধন করায় ইলিশের উৎপাদন বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চাঁদপুর মেঘনা নদীর ৬০ কিঃ মিঃ এলাকা জুড়ে এখন জেলে পাড়ায় হাহাকার চলছে। আর কতো দার-দেনা করে তারা চলবে। পরিবার-পরিজন নিয়ে কোনোভাবে জীবন চালাচ্ছে। এখন দেখার অপেক্ষা সামনের দিনগুলোতে জেলেরা ইলিশের দেখা পাবে কিনা?