নিজস্ব প্রতিবেদক:
গত সোমবার থকে শুরু হওয়া সোলেমান লেংটার ওরশকে কেন্দ্র করে শুরু হচ্ছে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য। সপ্তাহব্যাপী ওরশে দুর-দুরান্ত থেকে আগত লেংটার আশেকান ভক্তগণদের কাছ থেকে আস্তানা ভাড়া দিয়ে, ব্যবসায়ীদের দোকান ভাড়া দিয়ে, সরকারী জায়গা ভাড়া দিয়ে তুলে নিচ্ছে বহু টাকা। তাছাড়াও আশেকান ভক্তগন মহিষ, গরু, খাঁসি, মুরগি, চাল, ডালসহ নগদ অর্থ দিচ্ছে মাজারে। সব মিলিয়ে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য করছে মাজার কর্তৃপক্ষ। মাজারে আসা সাধারন মানুষ প্রতারণার শিকার হচ্ছে অনেকেই। এক শিং ওয়ালা গরু দিয়ে রোগ মুক্তির তাবিজ বিক্রি করে প্রতারণা করছে। তামার আংটিতে সাধারন পাথর বসিয়ে অষ্টধাতুর আংটি বলে বিক্রি করে প্রতারণা করছে। পাখিকে পোষ মানিয়ে চিঠি তুলে ভাগ্য পরীক্ষা করে ও রাশি গণনা করেও প্রতারণা করছে। এছাড়াও নিম্ন মানের পণ্য উন্নত মানের কোয়ালিটি বলে চড়া দামে বিক্রি করে প্রতারণা করছে বলে জানায় মেলায় আসা কয়েকজন।
এ মাজারকে কেন্দ্র করে দোকানপাটের ব্যবসা বানিজ্য ছাড়াও চলছে নানারকম কু-কীর্তি। গতকাল বৃহস্পতিবার মেলায় ঘুরে দেখা যায়, পাগলদের বিভিন্ন আস্তানায় চলছে গাঁজা বিক্রি ও সেবন। পাগলদের নাম ভাঙিয়ে এলাকার কিছু চক্র লোকজন তাদের সাথে সেবন করছে ও বিক্রি করছে। মাদকের অপর নাম মৃত্যু হলে তা মানছে না কেউ। দিবালকে গাঁজা সেবন করায় কিছু যুবকরাও উন্মুক্ত গাঁজা সেবন করতে উৎসাহ পাচ্ছে। স্থানীয় গাঁজা ব্যবসায়ীরা পাগলদের কাছ থেকে কম মূল্যে গাঁজা ক্রয় করে মওজুদ রাখে। পরে সেগুলো আবার যুবকদের মাঝে চড়া মূল্যে বিক্রি করে, এমনটাই বলেছেন স্থানীয় সচেতন লোকজন। এছাড়াও বদরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিটি কক্ষ ৫ হাজার টাকা করে ভাড়া হাতিয়ে নিচ্ছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। অপরদিকে সরকারি জায়গা খালের উপর বালু দিয়ে ভরাট করে ঘর নির্মাণ করে ভাড়া হাতিয়ে নিচ্ছে। প্রকাশ্যে গাঁজা সেবন ও বিক্রি হচ্ছে, এ ব্যপারে মতলব উত্তর থানার অফিসার ইনচার্জ সৈয়দ মোঃ মাহবুবুর রহমান এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সোলেমান লেংটার সপ্তাহব্যাপী ওরশ উদযাপন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলার যাতে অবনতি না ঘটে সেজন্য পুলিশ, আনসার, গোয়েন্দ সদস্য, ভ্রাম্যমান আদালত সহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পর্যাপ্ত পরিমান মোতায়েন করা হয়েছে।
এছাড়া সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ সার্কাস, মোটর সাইকেল রেসলিং, জুয়া খেলা সহ নানান ধরনের নিষিদ্ধ কর্মকান্ড অহরহ চলছেই। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা কিছু যুবতী দেহ ব্যবসায়ী একাজে লিপ্ত। তাছাড়া মেলায় দেখতে ও প্রয়োজনীয় পন্য কিনতে আসা যুবতী ও মধ্য বয়সী মহিলাদের উপরও চলছে অশ্লীনতার ছাপ। বখাটে ছেলেরা মেয়েদের দেখলেই দলবদ্ধ হয়ে তাদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে ও হাতাহাতি, অশ্লীনতা হয়। লোকলজ্জার ভয়ে অনেকে মুখ না খুললেও অশ্লীনতার শিকার হওয়া দুই যুবতী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। বাবার সামনে মেয়েকে নিয়ে টানা-টানির ঘটনাও ঘটেছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। মঙ্গলবার নারী নির্যাতনের ঘটনায় আলী নামে যুবককে আসামী করে থানায় মামলা দায়ের করেছে বদরপুর গ্রামের কেরামত আলী। এ মামলায় একজনকে আটক করেছে থানা পুলিশ।
এদিকে কসমেটিক্স, ক্রোকারীজ, লোহা সরঞ্জাম, মুড়ি-মুড়কি, গাঁজা ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। ক্ষমতাসীন সরকারি দলের দুযোর্গ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া (বীর বিক্রম)এর নামে সচিবের চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে করে মন্ত্রী মানহানি হচ্ছে বলে বিশিষ্টজনরা মনে করছেন। নাম প্রকাশে এক গাঁজা ব্যবসায়ী জানায়, মাজার কমিটির সভাপতি সচিব এসএস রশিদুল হক সরকার প্রতিদিনি আমাদের কাছ থেকে দুই হাজার টাকা করেন চাঁদা আদায় করেন। এছাড়াও মদ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তিন হাজার, সার্কাস ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে দুই হাজার পাঁচশত, কসমেটিক্স ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে এক হাজার ও বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বিভিন্ন অংকের চাঁদা আদায় করেন এসএম রশিদুল হক। ব্যবসায়ীরা জানায়, তার অত্যাচারে অতিষ্ট সোলেমান লেংটার মেলার ব্যবসায়ীরা। মেলায় প্রায় তিন হাজারেরও বেশী দোকানপাট রয়েছে, সবার কাছ থেকেই তিনি জোড়পূর্বক চাঁদা আদায় করেন। স্থানীয়রা জানায়, প্রতিবছর লেংটার ওরশ মোবারকের সময় ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকা মাজারে কালেকশন হয়। এই টাকার কোন হিসাব পাওয়া যায় না। এই সমস্ত টাকা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিঃ সহকারি সচিব এসএম রশিদুল হক আত্মসাৎ করেন বলেন তাদের অভিযোগ। এ ব্যপারে সচিব রশিদুল হকের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তাকে পাওয়া যায়নি।