নির্বাচনী পরীক্ষায় অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের কৃতকার্য দেখিয়ে বিধিবহির্ভূতভাবে তাদের কাছ থেকে ‘জামানত’ নিয়ে আসন্ন এইচএসসি পরীক্ষায় তাদের ফরম পূরণ করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। এমন অভিযোগ উঠেছে মতলব দক্ষিণ উপজেলা সদরের একটি বেসরকারি কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। এমন অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ দিয়েছেন ১৫০ জন শিক্ষার্থীকে।
গত শনিবার এ কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির একাধিক শিক্ষার্থীর অভিভাবক উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও স্থানীয় সংবাদকর্মীদের কাছে এ অভিযোগ করেন। ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হচ্ছে রয়মনেননেছা মহিলা ডিগ্রি কলেজ।
গত নভেম্বরে জারি করা কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, দ্বাদশ শ্রেণির নির্বাচনী পরীক্ষায় অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের আগামী (২০১৮ সাল) এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ করতে দেয়া যাবে না। এতে নির্বাচনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ও অনুত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের তালিকা শিক্ষা বোর্ডে জমা দেয়ার জন্যেও প্রত্যেক কলেজের অধ্যক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয় ।
ওই কলেজের একাধিক শিক্ষক বলেন, গত নভেম্বরে কলেজটির ২২৬ শিক্ষার্থী দ্বাদশ শ্রেণির নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশ নেয়। এতে উত্তীর্ণ হন ৫০ জন। অকৃতকার্য হন ১৭৬ জন। এদিকে বোর্ডের নিয়ম লঙ্ঘন করে কলেজের অধ্যক্ষ ১৫০ জন অকৃতকার্য শিক্ষার্থীকেও ‘কৃতকার্য’ দেখিয়ে ফরম পূরণের সুযোগ দেন। আর এর জন্যে ‘জামানত’ হিসেবে এদের প্রত্যেকের কাছ থেকে নেয়া হয় এক হাজার টাকা করে।
কলেজটির দ্বাদশ শ্রেণির ব্যবসায় শিক্ষা শাখার শিক্ষার্থীর (নামটি গোপন রাখা হলো) পিতা জানান, মেয়ের ফরম পূরণে তার কাছ থেকে ৪ হাজার ৯৫০ টাকা রাখা হয়। ‘জামানত’ হিসেবে নেয়া হয় এক হাজার টাকা। এ টাকার রসিদ দেয়া হয়নি। কলেজ থেকে তাকে জাননো হয়, তার মেয়ে তিন বিষয়ে ফেল করেছেন। তবু তাকে কৃতকার্য দেখিয়ে ফরম পূরণের সুযোগ দেয়া হয়েছে। এজন্যে জামানত হিসেবে ওই টাকা নেয়া হচ্ছে। তার অভিযোগ, জামানত দিতে অপারগতা জানালে অধ্যক্ষ তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ অভিভাবকের মতো একই ধরনের অভিযোগ করেন কলেজটির দ্বাদশ শ্রেণির মানবিক শাখার ৮-১০ জন ছাত্রীর অভিভাবক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কলেজটির চারজন শিক্ষক বলেন, গত বছরও ফরম পূরণের সময় ৬৭ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ১ হাজার টাকা করে জামানত নেয়া হয়েছিলো। ওই টাকা ফেরৎ দেয়া হয়নি। তাদের অভিযোগ, ফরম পূরণের বিষয়ে অধ্যক্ষ একাই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। এ অনিয়মের প্রতিবাদ করলে অধ্যক্ষ নানাভাবে শিক্ষকদের হয়রানি করেন এবং জেলার প্রভাবশালী এক সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে তার (অধ্যক্ষ) ঘনিষ্ঠতার দাপট দেখান।
কলেজটির পরিচালনা পর্ষদের সদস্য মজিবুর রহমান সরকার বলেন, জামানত নেয়ার বিষয়টি সত্য। তবে এ ব্যাপারে কারো পরামর্শ নেননি অধ্যক্ষ। কলেজটির অধ্যক্ষ মোঃ সফিকুল ইসলামের সাথে তাঁর মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সংযোগ বন্ধ পাওয়া যায়। কলেজের উপাধ্যক্ষ আফরোজা খাতুন বলেন, ফরম পূরণের পরে শিক্ষার্থীরা যাতে নিয়মিত কোচিং করেন এবং মডেল টেস্টে অংশ নেন সেজন্যে তাদের চাপে রাখার জন্যই জামানত রাখা হয়েছে। ওই টাকা ফিরিয়ে দেয়া হবে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ আব্দুর রহিম খান বলেন, এ বিষয়ে তিনি অভিযোগ পেয়েছেন। শিক্ষার নামে এটি ব্যবসা। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ শাহিদুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন।