এডওয়ার্ড ফাইজেনবাম এর “এলাইসা”-র মতো মুখ-রা প্রোগ্রামে বিস্ময় জাগিয়েছে। মাত্র ক’দিন আগে ক্যাসপারভের পরাজয়ের মধ্য দিয়ে কম্পিউটারের সদর্প আদিপত্যের সূচনা ঘটেছে। তারপর অসংখ্য প্রশ্ন জাগে আমাদের। মনের প্রতিস্থাপন কি যন্ত্র দিয়ে সম্ভব? কেননা অভিজ্ঞতা ও বুদ্ধি জ্ঞানের সমন্বয়ে মস্তিষ্ক অহরহ যে কাজ করে চলেছে কম্পিউটারে সে কাজ প্রায় অসম্ভব হয়ে আছে। বস্তুত:মস্তিষ্ক এবং মন এ দুইয়ের তথ্য বিশ্লেষন ও প্রক্রিয়াজাতকরন পদ্ধতির উৎকর্ষ এখন মলিন করে দেয় কম্পিউটার প্রযুক্তিকে। তাই আদর্শ তথ্য বিশ্লেষকের শ্রেষ্ঠ পরিকল্পনাটি রচনা করতে গেলে মন ও মস্তিষ্কের প্রযুক্তিও সার্থক অনুকরন করতে হবে।
বাস্তবিক অনেক গবেষণা এগিয়ে গেলেও মনের আবেগময় দিক অষ্পষ্ট রয়ে গেছে। তাই আমরা আজ একে বিচার করতে গেলে চিন্তনযন্ত্র বলে ধরে নিতে পারি। আর এই চিন্তনযন্ত্রটি আরও একাত্ন করে দেখে নিতে পারি একটা কম্পিউটারের সাথে। ক্ষুদ্র অনুভূতি, আঘাত, উষ্ণতা এমন সব প্রাথমিক তথ্য লঘু মস্তিষ্কেই প্রক্রিয়াজাত হয়ে সমাধান তৈরী হয়। আমাদের অধিকাংশ প্রতিবর্ত প্রতিক্রিয়া বা রিফ্লেঙ্ এ্যাকশান এভাবেই সাধিত হয়। বস্তুত: এভাবে গুরু মস্তিষ্ক অযাচিত বা অপ্রয়োজনীয় তথ্যরাজি নিয়ে ভাবার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিচ্ছে।
আমাদের জানা অর্থাৎ তথ্য ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করার পেছনে আমাদের দর্শন ইন্দ্রিয় অমূল্য অবদান রাখে। প্রথমত: দর্শন ইন্দ্রিয় যেকোন বস্তুও দশা সম্পর্কে আমাদেও একবারেই অবহিত করে। আবার প্রাণীজগতে মানুষের দর্শন ব্যবস্থা আরও উন্নত। কেননা ত্রিমাত্রিক জগৎকে সেই সবচে’ ভালভাবে জানতে পারে, তার সম্মুখ নেত্রদ্বয়ের মাধ্যমে আদর্শ কম্পিউটারের মতোই এ তথ্য গ্রহণ বিশ্লেষন ও ফলাফল প্রদান এ তিনটি ধাপ মেনে চলে এবং এতে স্মৃতিকোষগুলো ব্যবহৃত হয় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক মেমোরী হিসেবে।
মস্তিষ্ক তার যাবতীয় ভাবনার খোরাক পায় ইন্দ্রিয়গুলো থেকে। এদের প্রত্যেকটি নিরবিচ্ছিন্নভাবে আমাদের মস্তিষ্কে তথ্য পাঠিয়ে চলছে। দু’চোখ দিয়ে আমরা একাধারে ১২০ ডিগ্রী কোনে বিস্তৃত ক্ষেত্রকে দেখতে পারি এবং এই সুব্যাপ্ত স্থানে তথ্যগুলোর প্রত্যেকে আসে প্যারালাল বা সমান্তরালভাবে। তবে মজার ব্যাপার এই যে তথ্য এই ১২০ ডিগ্রী তে ব্যাপ্ত দৃষ্টি ক্ষেত্রের মধ্যে মাত্র ১০ ডিগ্রী অংশ আমরা তথ্য গ্রহনের জন্য ব্যবহার করি। তাই বইয়ের পাতায় তাকালেই পড়া যায় না অক্ষিগোলককে অবিরত নাড়াতে হয়। তাই প্রয়োজনীয় তথ্য আহরন করতে গিয়ে চোখে ধারাবাহিক বা সিরিয়ালী অগ্রসর হতে হয়।
আমাদের মস্তিষ্কে আমাদের পরিমিত সব বস্তুগুলো সম্পর্কে অসংখ্য তথ্য থাকে। আর চোখে দেখা কোন বস্তুকে চিনতে হলে স্মৃতিকোষে জমাকৃত এসব তথ্যগুলোকে মিলিয়ে দেখতে হয়। আর কোন বিশ্লেষণী পদ্ধতিতে এ কাজটি সম্ভব নয়। কোন কিছুকে চিনতে হলে মন যে কাজটি করে তা হল উপস্থিত সমস্থ তথ্যের একটি সেট নির্মাণ কওে এবং ধাপে ধাপে প্রাপ্ত সেটটি স্মৃতিতে রক্ষিত সেটগুলোর সাথে মিলিয়ে দেখে। এভাবে অসংখ্য তথ্যরাজির সাথে পরীক্ষিত হবার ফলে মন অসম্পূর্ণ তথ্যগুলোর একটি সেট কল্পনা করে নেয়। ফলে একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র পাওয়া যায়।
শ্রবনের বেলায় আমরা তথ্য-ক্রম গুলোকে গ্রহন করি। এখানে চেনার জন্য শব্দের কম্পাঙ্ক কাজ কওে। আমরা একই শব্দ বিভিন্নভাবে শুনি। এতে শব্দের কম্পাঙ্ক সব সময় এক না থাকলে ও আমরা চিনতে পারি। কেননা যতক্ষন তথ্য ধারায় কোন অচেনা তথ্য ঢুকে পড়ে ততক্ষনই আমাদের মন প্রাপ্ত তথ্যে যথার্থ অনুভব করতে পারে।