মামীর কাছে যৌন আবেদনে ব্যর্থ হয়ে দুই শিশুসহ একই পরিবারের পাঁচজনকে খুন করা হয়েছে। এই বিষয়টি সামনে রেখেই মামলার তদন্ত করছে পুলিশ। আর আর্থিক লেনদেনের বিরোধের বিষয়টিও উল্লেখ করে চাঞ্চল্যর ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
নিহত গৃহবধূ তাসলিমার স্বামী মো. শফিকুল ইসলাম আজ রোববার দুপুরে বাদী হয়ে ২২ নম্বর মামলা দায়ের করেন। নারায়ণগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মালেক মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, গৃহবধূ লামিয়া আক্তারকে যৌন আবেদনে ব্যর্থ হয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যাকা-টি ঘটাতে পারে।
মামলার বাদি বলেছেন, আমার ভাগিনা মাহফুজ আমার ছোট ভাই শরীফের স্ত্রী লামিয়ার সঙ্গে ঢাকায় বসবাসের সময় যৌন আবেদন করে ছিল। এরপর ভাগিনা মাহফুজকে ঢাকায় রেখে আমরা নারায়ণগঞ্জে বাসা ভাড়া নেই। কিন্তু ভাগিনা মাহফুজ পুনরায় নারায়ণগঞ্জে আমাদের বাসায় এসে ছোট বাই শরীফের স্ত্রী লামিয়ার সঙ্গে একই ধরনের ব্যবহার ও আচরণ করতো।
এতে আমার ভাইয়ের স্ত্রী লামিয়া অসন্তুষ্ট হন। আমার স্ত্রী তাসলিমা ও ছোট ভাই শরীফের কাছে লামিয়া বিষয়টি প্রকাশ করে। ফলে আমাদের সন্দেহ হচ্ছে, উক্ত মাহফুজসহ অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতকারীরা একই উদ্দেশে পরস্পর যোগসাজশে শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টা হতে শনিবার রাত ৮টা ২০ মিনিট পর্যন্ত যে কোনো সময়ে শক্ত কোনো ভোতা অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। এতে গুরুতর জখম ও গলায় ফাঁস লাগিয়ে পাঁচজনকে হত্যা করা হয়েছে।
এ ঘটনার পর থেকে তাসলিমার স্ত্রীর ব্যবহৃত মোবাইল সেট ও শ্যালক মোর্শেদুল ওরফে মোশাররফের মোবাইল ফোন পাওয়া যাচ্ছে না।
মামলায় হত্যাকান্ডসের পেছনে ১২ লাখ টাকা ঋণের কারণও থাকতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন। তবে পুলিশ প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যৌন আবেদনের বিষয়টি প্রাধান্য দিয়ে তদন্ত শুরু করেছে।
নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মালেক মামলা দায়েরের সত্যতা স্বীকার করেছেন। তিনি জানান, পাঁচ খুনের ঘটনায় সাতজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
থানার এক সূত্র জানায়, মামলার বাদি শফিকুল আরো উল্লেখ করে বলেছেন, ‘আমার স্ত্রী তাসলিমা (২৮), মেয়ে সুমাইয়া (৪), ছেলে শান্ত (১০), ছোট ভাই শরীফ (২২) ও তার স্ত্রী লামিয়া (২০) শ্যালক মোর্শেদুল ওরফে মোশাররফ নারায়ণগঞ্জ শহরের বাবুরাইলে ইসমাইল হোসেনের বাড়ির নিচ তলার ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। আর গত ১০বছর ধরে আমি ঢাকার জনৈক জিয়ারুল হাসানের গাড়ির চালক হিসেবে কর্মরত।
প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার আমি শহরের বাবুরাইলের বাসায় আসি। গত ১৬ জানুয়ারি রাত ৮টা ৪০ মিনিটে আমার ছোট ভাই শরীফ আমার মোবাইলে ফোন করে বলে, কে বা কারা আমাদের ফ্ল্যাটে তালা মেরে পালিয়ে গেছে। পরে আমরা তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে দুটি কক্ষের মেঝেতে রক্তাক্ত অবস্থায় পাঁচজনের মৃতদেহ দেখতে পাই।
তিনি আরো বলেছেন, ‘আমি পরস্পর জানতে পারি যে, আমার স্ত্রী তাসলিমার কাছে ঢাকার কলাবাগানের নাজমা ও শাহাজাহান নামের একাধিক ব্যক্তি প্রায় ১২লাখ টাকা পেত যা মাসিক চক্রবৃদ্ধি সুদে নেওয়া ছিল। উক্ত টাকা সময়মত পরিশোধ করতে না পারায় পাওনাদাররা প্রায় সময় টাকা পরিশোধের জন্য হুমকি দিতেন।
এমনকি নাজমাও মাঝেমধ্যে আমার পরিবার-সন্তানদের দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেবে বলে হুমকি প্রদান করতো। আর আমার শ্যালক মোর্শেদুল ওরফে মোশাররফের কাছেও তারা টাকা পেত। টাকা পাওয়ার সুবাধে উল্লেখিত ব্যক্তিরা বাসায় যাতায়াত করতেন।