মনিরুল ইসলাম মনির: নারায়ণগঞ্জ থেকে চাঁদপুরের মতলবগামী এমএল সারস লঞ্চটি শতাধিক যাত্রী নিয়ে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার চর কিশোরগঞ্জের মেঘনা নদীতে ডুবে যায়। এর মধ্যে ১৮ যাত্রী তীরে উঠতে সক্ষম হলেও নানির জানাজায় অংশ নিতে আসা একই পরিবারের ৭জন ও অন্য আরেক পরিবারের ৪ জনসহ ৭৫-৮০জনের প্রানহানি ঘটার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত প্রিন্স বয়স আঠারো মাস ও ময়না আক্তার (২৫) নামে একগৃহ বধূর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। একনো নিখোজ রয়েছে অর্ধশতাধিক। শেষ খবর পাওযা পর্যন্ত লঞ্চটি এখনো উদ্ধার হয়নি। উদ্ধার অভিযান এখনো চলছে। ডুবে যাওয়া লঞ্চের যাত্রীদের মধ্যে বেশির ভাগই মতলবের। দুর্ঘটনা কবলিত লঞ্চ থেকে বেঁচে যাওয়া যাত্রীদের কাছ থেকে জানা যায়, শুক্রবার সকাল ৭টায় নারায়ণগঞ্জ লঞ্চঘাট থেকে মতলবের মাছুয়াখালের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। সকাল পোনে ৮টায় এমএল সারস লঞ্চটি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার চর কিশোরগঞ্জের ফিরোজা ফারজানা নামে একটি বালুবাহী বলগেট পেছন থেকে সজোরে ধাক্কা দিলে এমভি সারস নামে লঞ্চটি ডুবে যায়। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে সকাল ১০টার দিকে উদ্ধারকারী জাহাজ রুস্তম ঘটনাস্থলে পৌছে। দুপুর ২টার দিকে লঞ্চের সন্ধান পাওয়া পায় । ফিরোজা ফারজানা নামে বলগেটটি আটক করেছে স্থানীয় জনতা।
এ সময় ডুবে যাওয়া লঞ্চে ৭০ থেকে ৮০ জন যাত্রী ছিল বলে জানিয়েছেন উদ্ধার হওয়া যাত্রী বিল্লাল হোসেন।
তিনি কান্না জড়িত কন্ঠে যাত্রী বিলাল হোসেন আরও জানান, কিছু বুঝে ওঠার আগেই লঞ্চটি ডুবে যায়। এতে বেশির ভাগ যাত্রীই ডুবে যাওয়া লঞ্চের সঙ্গে নদীতে তলিয়ে গেছে।
লঞ্চ ডুবির খবর চাঁদপুরের মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিন উপজেলায় ছড়িয়ে পড়লে লঞ্চে থাকা যাত্রীদের বাড়িতে বাড়িতে শুরু হয় স্বজনদের শোকের মাতম। স্বজনদের কান্নায় আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে উঠে। স্বজনরা ট্রলার যোগে প্রিয়জনদের লাশের খোঁজে ঘটনাস্থলে গিয়ে দিক বেদিক ছুটাছুটি করেন। লঞ্চ উদ্ধারে দেরি হওয়ায় স্বজনরা ক্ষোভ প্রকাশ করে। মতলবের নদী তীরবর্তী লঞ্চঘাটগুলোতে স্বজনরা প্রিয়জনের লাশের উপেক্ষায় প্রহর গুনছিলেন। এখনো মতলব উত্তরের ছেংগারচরের হাজেরা আক্তার বেবি (৫০), চান্দ্রাকান্দির মাওলানা মজিবুর রহমান, ব্রাক্ষ্মচকের সুমন (২৮), রায়েরকান্দির শাহজালাল(৪০), মুক্তির কান্দির আবুল হোসেন (৪৫), স্ত্রী শেফালী(৩৫), মেয়ে মনি(১৭)সহ মতলবের প্রায় অর্ধশতাধিক যাত্রী নিখোজ রয়েছে। নিখোজ যাত্রীদের সন্ধানে সন্ধ্যা পর্যন্ত নিখোজদের স্বজনরা লাশের উপেক্ষায় ছিলো।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন সংস্থা (বিআইডবিউটিএ), বাংলাদেশ নৌবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও কোস্টগার্ডের ডুবুরিরা এই উদ্ধার কাজে অংশ নেয়। এ ছাড়া স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে ছিলেন। লঞ্চ ডুবির খবর পেয়ে চাঁদপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য এয়ার ভাইস মার্শাল (অব:) এম. রফিকুল ইসলাম, মতলব উত্তর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ মিজানুর রহমান, মতলব উত্তরের ইউএনও আবু আলী মোঃ সাজ্জাদ হোসেন, ষাটনল ইউপি চেয়ারম্যান একেএম শরীফ উল্যাহ সরকার ঘটনাস্থল উপস্থিত থেকে সার্বক্ষণিক উদ্ধার কাজের খোঁজখবর রাখেন।