দলীয় সন্ত্রাসীদের হাতে নির্মমভাবে কুপিয়ে জখম হওয়া চাঁদপুর-২ (মতলব) আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এয়ার ভাইস মার্শাল (অবঃ) এম রফিকুল ইসলামের পিএস যুবলীগ নেতা খবির হোসেনের (৪০) লাশ আজ আসছে। সকল প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা মোকাবেলার জন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। গতকাল সকাল ৯টায় ঢাকার ধানমন্ডিস্থ গ্রীন লাইফ হাসপাতালের চিকিৎসকগণ লাইফ সাপোর্ট খুলে খবিরকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর তার লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়না তদনত্দ শেষে মহাখালী আইসিডিডিআরবি হাসপাতালের হিমাগারে রাখা হয়েছে। আজ ভোরে খবিরের মরদেহ ঢাকা থেকে চাঁদপুরের মতলব দৰিণ উপজেলায় আনা হবে। সকাল ১০টায় শহরের নিউ হোস্টেল মাঠে প্রথম জানাজা এবং পরে উপাদী উত্তর ইউনিয়নের নওগাঁও গ্রামের বাড়িতে দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে। খবিরের বড় ভাই মোশাররফ হোসেন ও হুমায়ুন কবির, শ্যালক এনামুল হকসহ পরিবারের লোকজন জানান, খবির হাসপাতালের আইসিইউতে থাকাবস্থায় মৃত্যু নিশ্চিত জেনে ২ সেপ্টেম্বর এমপি রফিকুল ইসলাম তাঁর দলীয় লোকজন পাঠিয়ে খবিরের স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব থেকে (সরকারি সম্পত্তিতে দোকান বরাদ্দের) ২০ লাখ ৪৪ হাজার টাকা তুলে নিয়ে গেছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ এইচ এম গিয়াস বলেন, টাকাটা যেহেতু বিভিন্ন ব্যক্তি দোকান বরাদ্দ পাবার আশায় দিয়েছে সে হিসেবে ওইসব লোকের টাকা নিয়ে পরবর্তীতে যাতে আর কিছু না ঘটে সেজন্যে খবিরের স্ত্রীর একাউন্ট থেকে টাকা তুলে আপাতত এমপি মহোদয়ের কাছে রাখা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, হাসপাতালে খবিরের চিকিৎসার সকল টাকা এমপি সাহেব দিয়েছেন। এছাড়া মতলব থানার ওসিকে খবির হত্যা মামলা রুজু করে খুনিদের গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন। উল্লেখ্য, মতলব থানার পশ্চিম পাশে ফেরি ঘাটের রাসত্দার পূর্ব পাশ্র্বে দোকান বরাদ্দ দেয়ার ব্যাপারে এমপির পিএস খবিরকে টাকা তোলার দায়িত্ব দেয়া হয়। ওই টাকা তোলা নিয়ে এমপির ভাই তৌফিক দেওয়ান ও ভাতিজা দুলাল দেওয়ানের সাথে মনোমালিন্য হয়। সে ঘটনার রেশ ধরেই গত ২৯ আগস্ট রাত ১২টায় মতলব টিএন্ডটি অফিসের সামনে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা খবিরকে কুপিয়ে জখম করে। এলাকাবাসী মুমূর্ষু অবস্থায় খবিরকে উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা চাঁদপুর প্রতিনিধি :স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেভর্তি করে। অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটলে পরে ঢাকার ধানমন্ডি গ্রীন লাইফ হাসপাতালে নেয়া হয়। ওই দিনই চিকিৎসকরা খবিরকে আইসিইউতে রাখেন। তাদের মতে, খবিরকে সেদিন থেকেই লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। খবির হত্যা সম্পর্কে মতলববাসী অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী এমপি রফিকুল ইসলাম এ পর্যন্ত ৪ জন পিএস রেখেছন। এরা হচ্ছেন ঃ আতাউর রহমান, হাবিবুর রহমান প্রধান, পারভেজ দেওয়ান এবং খবির হোসেন। স্বাভাবিকভাবেই পিএস হিসেব এরা এমপির সাথে বিভিন্ন সময়ে বহু রকম কাজ করেছে এবং কাছ থেকে এর লাভ-ক্ষতি দেখেছে। ফলে ধারাবাহিকভাবে তাদের মধ্যে একটা চাপা ক্ষোভ রয়েছে। এছাড়া এমপির ভাই তৌফিক দেওয়ান এবং ভাতিজা দুলাল দেওয়ান সরকারি টিআর/কাবিখার চাল-গম- ভাগ-বাঁটোয়ারা করতো। এক পর্যায়ে সে কাজ এমপি তাদেরকে বাদ দিয়ে খবিরকে দিয়েছে। তাদের মতে, খবির গত ইউপি নির্বাচনে অংশ নেয়ার পর থেকে এমপির সুনজরে আসে। সেই থেকে ক্রমান্বয়ে সে এমপির কাছের লোক হয়ে যান। এক পর্যায়ে পিএস হন। নিহত খবিরের শ্যালক এনামুল হক বলেন, তিনি এলাকায় তেমন একটা থাকেননি। তবে দোকান বরাদ্দ, টিআর/কাবিখার চাল/গম ইত্যাদির ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়েই এমপির স্বজনদের সাথে তার ভগি্নপতির দূরত্ব বেড়েছে। এছাড়া সাধারণ মানুষের সাথে খবিরের সুসম্পর্ক ছিলো। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ক’জন বলেন, মতলব থানার ওসি খান মোঃ এরফান এমপি রফিকুল ইসলামের আত্মীয়। সে সুবাদে তিনি সেখানে আছেন। এমপির ভাই তৌফিকের সাথে সুসস্পর্ক রয়েছে। অন্য দিকে মতলব থানার ওসি (তদন্ত) মোঃ মিজানুর রহমানের সাথে খবিরের ভালো সম্পর্ক ছিলো। ফলে ঘটনার পর থেকে ওসি (তদন্ত) মোঃ মিজানুর রহমানকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে ওসি (তদন্ত) মোঃ মিজানুর রহমান বলেছেন, তিনি কৌশলগত কারণে থানার বাইরে আছেন। তবে ছুটিতে নেই। তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ অভিযানে আছেন বলেও দাবি করেন। এমপির ভাই তৌফিক দেওয়ানের সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক এবং তিনি ওই পরিবারের নিকটাত্মীয় এটা অস্বীকার করেন ওসি খান মোঃ এরফান। ওসি (তদন্ত) মোঃ মিজানুর রহমানকে ছুটিতে পাঠানো হয়নি দাবি করে তাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ অপারেশনে পাঠানো হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার মোঃ আমির জাফর বলেন, খবিরকে হত্যা চেষ্টার মামলা ইতিমধ্য হয়েছে। নতুন করে হত্যা মামলা করার প্রয়োজন নেই। পূর্বের মামলায় এখন হত্যার দণ্ডবিধি যুক্ত হবে। তিনি বলেন, বাইরে যে যাই বলুক আমরা প্রকৃত খুনি শনাক্তের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। ইতিমধ্যে অনেকটা নিশ্চিত হতে পেরেছি। অবশ্যই কোনো নিরাপরাধ ব্যক্তিকে হয়রানি করা হবে না। মতলব থানার ওসি (তদন্ত)কে ছুটি দেননি বলেও তিনি দাবি করেন। এছাড়া আজ খবিরের লাশ আসলে যাতে কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে তার জন্যে অতিরিক্ত পুলিশ ও র্যাব রাখা হয়েছে বলে তিনি জানান। তাঁর দাবি ঃ বর্তমানে মতলবে ৬৫ জন পুলিশ রয়েছে। অতিরিক্ত আরো ৩ প্লাটুন পুলিশ পাঠানো হবে। মতলব উত্তরের ওসিসহ ৫/৬ জন অফিসার দেয়া হবে। এছাড়া র্যাবের একটি টিমও সেখানে থাকবে। প্রয়োজনে খবিরের লাশ দাফনের পরও ২/৪ দিন নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হবে ।
শিরোনাম:
বৃহস্পতিবার , ১৬ জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ৩ মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আরও সংবাদ
বিশ্ব ইজতেমায় ‘মানবতার ফেরিওয়ালা’ মালয়েশিয়ান ইবিট লিও
টঙ্গীর তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নেন, মালয়েশিয়ার ‘মানবতার ফেরিওয়ালা’ ইবিট লিও। বিশ্ব... বিস্তারিত
পেঁয়াজের দাম বাড়ল কেজিতে ২০-৩০ টাকা
দেশে আগাম জাতের মুড়িকাটা পেঁয়াজ এরই মধ্যে ঘরে তুলেছেন কৃষক। মূল মৌসুমের পেঁয়াজ বাজারে আসতে... বিস্তারিত
রমজান মাসে প্রাথমিকে ক্লাশ ১০ দিন, মাধ্যমিকে ১৫…
আগামী রমজান মাসের প্রথম ১০ দিন দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো খোলা রাখার সিদ্ধান্ত... বিস্তারিত
পরকীয়ায় নাশ সংসার
দেশে বিয়ের হার বৃদ্ধির পাশাপাশি বিবাহবিচ্ছেদ বা তালাকও বেড়েছে। বিবাহবিচ্ছেদের প্রধান দুটি... বিস্তারিত
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।