চাঁদপুর জেলা আইনশৃঙ্খলা সমন্বয় কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মোঃ আব্দুস সবুর মণ্ডল। সভায় চাঁদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভঁূইয়া বলেন, চাঁদপুর জেলা ভৌগোলিক দিক থেকে সৌভাগ্যবান। এ জেলায় আমরা অনেক প্রভাবশালী মন্ত্রী ও এমপি পেয়েছি। এ জেলা শুধু মন্ত্রী অথবা এমপি দিয়েই সৌভাগ্যবান নয়। প্রশাসন দিয়েও এ জেলা সৌভাগ্যবান। তিনি বলেন, বর্তমানে জেলার বিভিন্ন স্থানে সরকারি সম্পত্তি দখলের উৎসব চলছে। এটা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের কারণেই হচ্ছে বলে আমি মনে করি। তবে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে সাথে প্রশাসনেরও দোষ রয়েছে। প্রশাসনের নজরদারী না থাকার কারণেই এ সব কর্মকাণ্ড হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, উপজেলাগুলোতে পল্লীবিদ্যুৎ গ্রাহক সেবায় সাধারণ মানুষ সন্তুষ্ট নয়। কারণ, পল্লী বিদ্যুৎ পেতে তাদের অতিরিক্ত টাকা গুণতে হচ্ছে। দালালদের কাছে সাধারণ গ্রাহকরা জিম্মি হয়ে রয়েছে। কর্মকর্তারা ঠিকাদারদের ঠিক না রেখে, তারা নিজেরাই ঠিকাদারদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায় এটা দুঃখজনক। তিনি আরো বলেন, সিএনজি স্কুটার সন্ত্রাসে আমরা সবাই আক্রান্ত। সিএনজি স্কুটার মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নের নামে বেশ কটি কমিটি রয়েছে। তারা নামে বেনামে চাঁদাবাজি করে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, তারা বিভিন্ন বাজারে ও উপজেলায় কমিটি দিয়ে লাখ লাখ টাকা চাঁদবাজি করে যাচ্ছে। এ সব কর্মকাণ্ড আমাদের জন্য হুমকি। তাদের কোনো লাইসেন্স কিংবা অনুমোদন নেই। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। চাঁদপুরে টোল আদায় সন্ত্রাস বন্ধ হচ্ছে না। তা বন্ধ করতে হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাগণ যদি তৎপর হন, তাহলে উপজেলাগুলোতে মাদক নির্মূল করা সম্ভব হবে।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক বলেন, শিশুদের দিয়ে একদল দুষ্কৃতকারী চুরি ও ছিনতাইয়ের কাজ করাচ্ছে। এ ব্যাপারে অভিভাবক ও শিক্ষকদের ভূমিকা রাখতে হবে। মাদক ও ইভটিজিংয়ের বিষয়ে আমরা জিরো টলারেন্সে রয়েছি। পুলিশ সুপার এ বিষয়গুলোর উপর সাহসী ভূমিকা পালন করছেন এবং নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছেন। তিনি বলেন, একটি সিন্ডিকেট ব্যক্তি স্বার্থের জন্যে দ্রব্য সামগ্রীর দাম বাড়াচ্ছে। সেই সিন্ডিকেটই বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়েছে। এর সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ব্যাপারে কারো কোনো তদবির শুনবো না এবং কারো সাথে কোনো আলাপ করবো না। জড়িতদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।
তিনি আরো বলেন, ইদানিংকালে একদল প্রতারক চক্র মোবাইল ফোনের মাধ্যমে চাঁদা দাবি করে সাধারণ মানুষদের ধোকা দিচ্ছে এবং হয়রানি করছে। আমার নাম করেও চাঁদা দাবির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে আমাদের সকলকে সচেতন হতে হবে। কেউ যদি কোনো উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার নাম দিয়ে চাঁদা দাবি করে তাহলে আপনারা ওই কর্মকর্তার সাথে সরাসরি যোগাযোগ করে বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে নেবেন অথবা পুলিশকে অবহিত করবেন। তিনি বলেন, সরকার প্রথমে ৪টি জেলাকে মোবাইল কোর্টের আওতায় এনেছে। এখন নতুন করে আরো ১২টি জেলাকে অন্তর্ভুক্ত করার কাজ চলছে। সেখানে চাঁদপুর জেলাকে ১ নাম্বার স্থানে রাখা হয়েছে। আগামীতে চাঁদপুরে মোবাইল কোর্ট বহু গুণে বেড়ে যাবে। সুশাসন নিশ্চিত করতে হলে মোবাইল কোর্টের প্রয়োজন রয়েছে। এজন্য আমি সকলের কাছে সহযোগিতা কামনা করছি।
জেলা প্রশাসক আরো বলেন, সব ভালো প্রচেষ্টা সবসময় সফল করা সম্ভব হয় না। সরকার স্বচ্ছতা চায়। স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্যেই আমরা প্রশাসনের হয়ে কাজ করে যাচ্ছি। জেলা প্রশাসন কোনো অনৈতিক কাজে কাউকে সহযোগিতা করবে না। বরং অনৈতিক কাজের সাথে জড়িতেদের আইনের আওতায় এনে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমাদের সকলের মাঝে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। প্রশাসনকে সঠিক সময়ে, সঠিক জায়গায় সহযোগিতা করতে হবে। আমি আশা করছি এ জেলার মানুষ শতভাগ সেবা পাবে। সারা বাংলাদেশের ভেতরে আইন-শৃঙ্খলা ও প্রশাসনিক দিকসহ সকল দিক থেকে আমরা অনেক ভালো আছি। কীভাবে আরো ভালো করবো সেদিকে আমাদের সকলকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার বলেন, রিক্সায় মোটর স্থাপন, সিএনজি স্কুটার চালকের পাশে যাত্রী বসানো ও অতিরিক্ত ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সার বিষয়ে মেয়রের সাথে বসে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। পুলিশের অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে, তারপরও আমরা কাজ করে যাচ্ছি। একটি সমস্যার সমাধান করতে না করতে আরেকটি সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। এতে করে আমরা হয়তো মাদক ও ইভটিজিংয়ের ব্যাপারে খুব একটা অভিযান পরিচালনা করতে পারছি না। তারপরও আমরা থেমে নেই। মাদক ও ইভটিজিংয়ের বিরুদ্ধে অমাদের নিয়মিত অভিযান চলছে। মাদকসহ ব্যবসায়ী ও ইভটিজারদের আটক করে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, আমাদের পুলিশ সদস্য সংকট রয়েছে। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী টহলে রাখা সম্ভব নয়। তাই এ ব্যাপারে সবাইকে সমাজের দায়বদ্ধতা থেকে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা সবাই যদি সচেতন হই তাহলে এসব সমস্যা সমাধান করতে বেশি সময় লাগবে না।
এছাড়াও সভায় আরো বেশ কিছু সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে, তা হচ্ছে : যতগুলো আইন রয়েছে সবগুলো আইনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করার নির্দেশ, গত সপ্তাহে বিআরটিসির বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চাঁদপুর জেলার সকল সিএনজির একটি নির্দিষ্ট কালার করা হবে, যাতে অন্য জেলার সিএনজি স্কুটার চাঁদপুরে প্রবেশ করলে বুঝা যায় এটা চাঁদপুরের নয়, অন্য জেলার। তাহলেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হবে। সকল চালকের প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে হবে, ১৮ বছরের নিচে চালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে, চালকদের সামনে কোনো যাত্রী নেয়া যাবে না।
সভায় বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল, যুগ্ম-সম্পাদক অ্যাডঃ জহিরুল ইসলাম, পল্লী বিদ্যুতের জিএম মোঃ ইউসুফ, শাহরাস্তি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন মিয়াজী, চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আলহাজ্ব মোঃ জাহাঙ্গীর আখন্দ সেলিম, মহিলা আওয়ামী লীগের সদস্য সচিব অধ্যাপিকা মাসুদা নূর খান, কচুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হোসেন চৌধুরী সোহাগ, ট্রাফিক ইন্সপেক্টর আঃ রহমান, ফরিদগঞ্জ এ আর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ রফিকুল আমিন কাজল, ফায়ার সার্ভিসের এডি আনোয়ারুল হক প্রমুখ।
সভায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আমির আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ মঞ্জুরুল করিমের পরিচালনায় স্ব-স্ব বিভাগের বিভিন্ন দিকের বর্তমান অবস্থান তুলে ধরেন বিভাগের কর্মকর্তাগণ।
উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুহাম্মদ লুৎফর রহমান, স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত নারী মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী, সিভিল সার্জন ডাঃ রথীন্দ্রনাথ মজুমদার, নৌ-পুলিশের এএসপি নুরুজ্জামান, চাঁদপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. এএসএম দেলওয়ার হোসেন, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান মোঃ সফিকুজ্জামান, চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজের উপাধ্যক্ষ মাসুদুর রহমান, কোস্টগার্ড স্টেশন কমান্ডার লেঃ নুরুজ্জামান শেখ, বিআইডবিস্নউটি-এর বন্দর কর্মকর্তা মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান, সমাজসেবা কর্মকর্তা মোবারক হোসেন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক হিরণ বেপারী, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সফিউদ্দিনসহ সকল বিভাগের কর্মকর্তা।