চাঁদপুর সদর উপজেলার ১৪নং রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের বেশ কটি ওয়ার্ডে উজান থেকে নেমে আসা পানির প্রবল স্রোতে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এসব এলাকার বাড়ি-ঘর ভেঙ্গে যাচ্ছে। গতকাল ১৭ আগস্ট বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসকের নির্দেশে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। সেখানে গিয়ে ৬নং ওয়ার্ড লগ্গীমারা চরে গৃহহীন হয়ে পড়া মানুষদের সাথে তিনি সাক্ষাৎ করেন এবং শুকনো খাবার বিতরণ করেন। এ সময় তিনি গৃহহীনদের উদ্দেশ্যে বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য ডাঃ দীপু মনি এবং জেলা প্রশাসন আপনাদের ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রণয়ন করে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করবেন।
হঠাৎ পদ্মা ও মেঘনায় উত্তরাঞ্চলের বন্যার পানি নেমে আসায় নদীতে প্রবল স্রোত বহমান। যার ফলে ১৬ আগস্ট রাত ১২টার পর থেকে এবং গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার পর থেকে রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের লগ্গীমারার চর হাজী কুদ্দুস বেপারী কান্দির আশ্রয়ন প্রকল্পে ভাঙ্গন দেখা দেয়। এই আশ্রয়ন প্রকল্পটি ডাঃ দীপু মনি এমপি ২০১২ সালের ৯ মার্চ উদ্বোধন করেন। এখানে শতাধিক পরিবার বসবাস করে। বুধবার রাতে ভাঙ্গন শুরু হলে এ আশ্রয়ন প্রকল্পের একটি বৃহৎ অংশ মেঘনা নদীতে তলিয়ে যায়। সকাল ১১টায় হাজী কুদ্দুস বেপারী কান্দি জামে মসজিদটি আচমকা মেঘনায় তলিয়ে যায়। এ মসজিদটিতে অর্ধ শতাধিক মুসলি্ল পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতো বলে মসজিদের ইমাম মাওলানা মোঃ আল-আমিন জানান।
উপজেলা নির্র্বাহী কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা সাংবাদিকদের জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে পুনর্বাসন করা হবে। তবে তাদের পুনর্বাসন করা হবে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে। তিনি আরও বলেন, উত্তরাঞ্চল থেকে উজানের পানি চাঁদপুরের নদী সীমানার উপর দিয়ে নামতে শুরু করায় রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নে হঠাৎ এ ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। তিনি অসহায় নদী ভাংতি মানুষের মাঝে শুকনো খাবার ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙ্রে মাধ্যমে ঔষধ বিতরণ করেন।
এদিকে গতকাল নদী ভাঙ্গন শুরু হলে আশ্রয়ন প্রকল্প থেকে অর্ধ শতাধিক পরিবারকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এরা হলো নূরতারা, দিদার দর্জি, খলিল তাঁতী, সেকুল বেপারী, নূরে আলম গাজী, সালাউদ্দিন মাঝি, আলী হোসেন বেপারী, আইয়ুব আলী গাজী, আব্দুর রহিম বেপারী, কামাল বেপারী, ইউসুফ আলী বেপারী, সাত্তার বেপারী, ওমর আলী বেপারী, নবী বেপারী, আনোয়ারা বেগম, ইমান মাঝি, আহমেদ আলী, শরবত প্রধানীয়া, জমির আলী বেপারী, তপিল কাজী, আহছান পাটওয়ারী, মাওলানা হাছান, জিন্দা গাজী, ওচমান প্রধানীয়া, আবুল কাজী, মজিব বেপারী, নেকমত হোসেন, তৈয়ব সরকার, ওছমান দেওয়ান, নূরুল হক শেখ, রহমত কুড়ালী, রুস্তম কুড়ালী, সেকান্তর মাল, জান শরিফ কুড়ালী, মনির খালাসী, খালেক পাটওয়ারী, নূরুল ইসলামসহ আরও অনেকে। এদেরকে আশ্রয়ন প্রকল্প থেকে বলিয়ারচর ও মান্দের বাজার এলাকায় সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
যাদের ঘর-বাড়ি নদীর স্রোতে বিলীন হয়ে গেছে ও জীবন রক্ষার্থে যারা অন্যত্র উঁচু স্থানের সন্ধানে গিয়েছে তাদেরকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘর নির্মাণের জন্যে স্থানীয় সংসদ সদস্যের সাথে আলোচনা করে ত্রাণের টিন দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান সদর ইউএনও। এছাড়া উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের ঘর নির্মাণের জন্যে যা যা করণীয় তাই করা হবে। শুধু তাই নয়, অবহেলিত রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নবাসীকে প্রবল স্রোতের হাত থেকে রক্ষা করতে মাটির কেল্লা তৈরি করে সেখানে তাদেরকে বসবাস করার পরিবেশ সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হবে।
রাজরাজেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাজী হযরত আলী বেপারী জানান, গত ১ মাস পূর্বে আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে এ ইউনিয়নে এ ধরনের ভাঙ্গনের বিষয়ে আশঙ্কার কথা জানিয়েছি। ১৬ আগস্ট রাত ১২টা থেকে লগ্গীমারা, বলিয়ার চর, গোয়ালনগর ও মান্দেরবাজার এলাকার দেড় শতাধিক পরিবার স্রোতের তোড়ে তাদের ঘর-বাড়ি ভেঙ্গে শরীয়তপুর জেলার পদ্মা নদীর চরে জেগে উঠা রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের বাঁশগারির চরে আশ্রয় নিয়েছে। এছাড়াও অনেকে রাজরাজেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন স্থানের উঁচু জায়গাতে এসে ঘর-বাড়ি ভেঙ্গে স্তূপ করে রেখেছে। এদেরকে ইউনিয়নের বিভিন্ন উঁচু স্থানে থাকার জন্যে আমরা ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা করার চেষ্টা চালাচ্ছি।
তিনি আরো জানান, লগ্গীমারা চরে গতকালই প্রায় ৩০টি বসতঘর নদীতে ভেসে গেছে। অন্যদেরকে ঘর ভেঙ্গে উঁচু স্থানে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। বর্তমানে স্রোতের যে অবস্থা তাতে যে কোনো মুহূর্তে অন্য ঘরগুলো ভেসে যেতে পারে। শুধু লগ্গীমারা নয়, পুরো ইউনিয়নটির নদীর পাড় সংলগ্ন বসবাসকারী আরও ৫ শতাধিক পরিবার অজানা আতঙ্কে রয়েছে।
শিরোনাম:
শনিবার , ২৮ জানুয়ারি, ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ , ১৫ মাঘ, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।