জাতীয় সংসদে প্রকাশ করা হয়েছে দেশের শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপির নাম। গতকাল জাতীয় সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ তালিকা উপস্থাপন করেন। তালিকা অনুযায়ী এ ২০ খেলাপির মোট ঋণের পরিমাণ ১৯ হাজার ২৮৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা, যার মধ্যে খেলাপি ঋণ হচ্ছে ১৬ হাজার ৫৮৭ কোটি ৯২ লাখ টাকা।
অর্থমন্ত্রীর কাছে সরকারি দলের সংসদ সদস্য মো. শহীদুজ্জামান সরকার বর্তমানে দেশে ঋণখেলাপির সংখ্যা জানতে চেয়েছিলেন। একই প্রশ্নে তিনি শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপির নাম-ঠিকানাসহ বিস্তারিত জানতে চান। এ প্রশ্নের জবাবে ঋণখেলাপির সংখ্যা ও শীর্ষ ২০ খেলাপির নাম-ঠিকানাসহ অন্যান্য তথ্য সংসদে উপস্থাপন করা হয়। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এ প্রশ্নোত্তর টেবিলে উপস্থাপিত হয়।
জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রীর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশে মোট ঋণখেলাপির সংখ্যা ৭ লাখ ৮৬ হাজার ৬৫। শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপির মধ্যে সিএলসি পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের ঋণের স্থিতি ১ হাজার ৭৩২ কোটি ৯২ লাখ টাকা। তাদের খেলাপি ঋণ ১ হাজার ৬৪০ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড লিমিটেডের ঋণের স্থিতি ১ হাজার ৮৫৫ কোটি ৩৯ লাখ টাকা, খেলাপি ১ হাজার ৫২৯ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। রিমেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের ঋণের স্থিতি ১ হাজার ৭৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। তাদের পুরোটাই খেলাপি ঋণ। রাইজিং স্টিল কোম্পানি লিমিটেডের ঋণের স্থিতি ১ হাজার ১৪২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা, খেলাপি ৯৯০ কোটি ২৮ লাখ টাকা। মোহাম্মদ ইলিয়াস ব্রাদার্স (প্রা.) লিমিটেডের ঋণের স্থিতি ৯৬৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা। তাদেরও পুরোটাই খেলাপি। রূপালী কম্পোজিট লেদারওয়্যার লিমিটেডের স্থিতি ও খেলাপি ঋণের পরিমাণ একই। তাদের খেলাপি ঋণ ৮৭৩ কোটি ২৯ লাখ টাকা। ক্রিসেন্ট লেদারস প্রডাক্ট লিমিটেডের স্থিতি ও খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৮৫৫ কোটি ২২ লাখ টাকা। কোয়ান্টাম পাওয়ার সিস্টেমস লিমিটেডের স্থিতি ও খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৮১১ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। সাদ মুসা ফ্যাব্রিকস লিমিটেডের ঋণের স্থিতি ১ হাজার ১৩১ কোটি ৮৩ লাখ টাকা, খেলাপি ৭৭৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। বি আর স্পিনিং মিলস লিমিটেডের স্থিতি ও খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৭২১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। এসএ অয়েল রিফাইনারি লিমিটেডের ঋণের স্থিতি ১ হাজার ১৭২ কোটি ৬৯ লাখ টাকা, খেলাপি ৭০৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। মাইশা প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের ঋণের স্থিতি ৬৮৬ কোটি ১৪ লাখ টাকা, খেলাপি ৬৬৩ কোটি ১৮ লাখ টাকা। রেডিয়াম কম্পোজিট টেক্সটাইল লিমিটেডের ঋণের স্থিতি ৭৭০ কোটি ৪৮ লাখ টাকা, খেলাপি ৬৬০ কোটি ৪২ লাখ টাকা। সামান্নাজ সুপার অয়েল লিমিটেডের ঋণের স্থিতি ১ হাজার ১৩০ কোটি ৬৮ লাখ টাকা, খেলাপি ৬৫১ কোটি ৭ লাখ টাকা। মানহা প্রিকাস্ট টেকনোলজি লিমিটেডের ঋণের স্থিতি ও খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬৪৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা। আশিয়ান এডুকেশন লিমিটেডের ঋণের স্থিতি ৬৫৩ কোটি টাকা, খেলাপি ৬৩৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। এসএম স্টিল রি-রোলিং মিলস লিমিটেডের ঋণের স্থিতি ৮৮৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা, খেলাপি ৬৩০ কোটি ২৬ লাখ টাকা। এ্যাপোলো ইস্পাত কমপ্লেক্স লিমিটেডের ঋণের স্থিতি ৮৭২ কোটি ৭২ লাখ টাকা, খেলাপি ৬২৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। এহসান স্টিল রি-রোলিং লিমিটেডের ঋণের স্থিতি ৬২৪ কোটি ২৭ লাখ টাকা, খেলাপি ৫৯০ কোটি ২৩ লাখ টাকা এবং সিদ্দিকী ট্রেডার্সের ঋণের স্থিতি ৬৭০ কোটি ৬৮ লাখ টাকা, খেলাপি ৫৪১ কোটি ২০ লাখ টাকা।
সিএসআর কার্যক্রমে শীর্ষ ১০ ব্যাংক: ২০২২ সালের জানুয়ারি-জুনভিত্তিক করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) কার্যক্রমের পরিপ্র্রেক্ষিতে এ খাতে ব্যয়কারী শীর্ষ ১০ ব্যাংকের নাম ও তাদের ব্যয়ের পরিমাণ জাতীয় সংসদে এক প্রশ্নোত্তরে তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমামের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, মহামারীর শুরুতে সব তফসিলি ব্যাংককে সিএসআর কার্যক্রমের আওতায় বিশেষ সিএসআর কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেয়া হয়। ২০২০ সালে অর্জিত নিট মুনাফার ১ শতাংশের বিপরীতে বিশেষ সিএসআর খাতে ব্যাংকগুলোর বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ১০৫ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। এ খাতে ব্যাংকগুলো বিতরণ করে ১০৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের প্রায় ১০০ দশমিক ৪৮ শতাংশ।
নির্ধারিত এ সময়ের সিএসআর কার্যক্রমের পরিপ্র্রেক্ষিতে শীর্ষ ব্যয়কারী ১০টি ব্যাংকের মধ্যে ইসলামী ব্যাংক ব্যয় করেছিল ২০২ কোটি ১৯ লাখ টাকা, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ব্যয় ৩৯ কোটি ৭ লাখ, দ্য প্রিমিয়ার ব্যাংক ২৯ কোটি ৯৫ লাখ, এক্সিম ব্যাংক ২৮ কোটি ৩৯ লাখ, মার্কেন্টাইল ব্যাংক ২২ কোটি ১৬ লাখ, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ২১ কোটি ৬৫ লাখ, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক ১৯ কোটি ৮১ লাখ, ঢাকা ব্যাংক ১৪ কোটি ৯৬ লাখ, প্রাইম ব্যাংক ১৪ কোটি ৬৩ লাখ ও ব্র্যাক ব্যাংক ১৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ব্যয় করে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, কৃষিঋণের সুদ মওকুফের কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই। সংরক্ষিত আসনের সদস্য নাজমা আকতারের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ব্যাংক আমানতকারীদের কাছ থেকে সংগৃহীত অর্থ দিয়ে কৃষকদের ঋণ দেয়। আমানতকারীদের ব্যাংকের সুদ দিতে হয় বলে প্রচলিত নিয়মে ব্যাংকের পক্ষে কৃষকদের মাঝে দেয়া ঋণের সুদ মওকুফ করা সম্ভব হয় না।’
সরকারি দলের হাবিবর রহমানের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে এখন পর্যন্ত কোনো ঋণ পাওয়া যায়নি। একটি ঋণের বিষয়ে আইএমএফের সঙ্গে আলোচনা চলমান। এছাড়া চলতি অর্থবছরে বিশ্বব্যাংক থেকে ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ পাওয়া গেছে, যা পাঁচ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ৩০ বছরে পরিশোধযোগ্য।
এম আব্দুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়নে চলতি অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত জাপান সরকার ৯২১ দশমিক ৬১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড় করেছে।