
২০০৭ সলের ১ নভেম্বর নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের মাধ্যমে সারাদেশের ন্যায় চাঁদপুরেও জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসি গঠন করা হয়। কিন্তু এখানে প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিচারক নিয়োগ দেয়া হয়নি। ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত এখানে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ১০ হাজার ১৮০ টি। অথচ এখানে বর্তমানে বিচারক কর্মরত আছেন মাত্র ৫ জন। উল্লেখিত বিপুলসংখ্যক মামলা মাত্র ৫ জন বিচারকের পক্ষে পরিচালনা করা খুবই কঠিন। তার উপর আবার ৮৮ জন কর্মচারীর মধ্যে ১৫টি কর্মচারীর পদ শূন্য পড়ে আছে দীর্ঘদিন।
এখানে এজলাসের তীব্র সঙ্কট রয়েছে। ফলে বিচারকদের সকাল বিকাল ভাগাভাগি করে একই এজলাসে বিচারকার্য পরিচালনা করতে হচ্ছে। যে ক’টি পুরানো এজলাস রয়েছে তার বেশির ভাগই উঁই পোকার ঢিবিতে ভরপুর। জীর্ণ এজলাস ও খাস কামরাগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী। তারপরও সেখানেই প্রতিকূল পরিবেশে বিচারকদের বিচারিক কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। এছাড়া প্রয়োজনীয় চেয়ার-টেবিল, নথি রাখার র্যাক ও আলমারি নেই।
২০১৩ সালে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি কর্তৃক চাঁদপুরে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন নির্মাণ করার জন্যে আনুষ্ঠানিকভাবে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। কিন্তু এ ভবন নির্মাণের প্রাথমিক কার্যক্রমটি এখনও শুরু করা হয়নি।
কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ফৌজদারি মামলার বিচার ব্যবস্থায় কোর্ট পুলিশ দপ্তরটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এ দপ্তরটিতে নানামুখী সমস্যা বিরাজ করছে। সেখানে আসামি নেয়ার জন্যে কোনো প্রিজন ভ্যান বা গাড়ি নেই। স্থান স্বল্পতাও একটা বড় সমস্যা। একই কক্ষে ঠাসাঠাসি করে বসতে হচ্ছে অনেককে। এখানে সরকারি নির্ধারিত ছাপানো ফরম ও সরঞ্জামের তীব্র অভাবে প্রায়ই সংশ্লিষ্ট সকলকে বিপাকে পড়তে হচ্ছে। অনেক সময় এসব ফরম ফটোকপি করে কাজ চালিয়ে নিতে হচ্ছে।
বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের সময়কালে চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কয়েকটি স্মারকে কেবল বিচারাধীন নথিসমূহ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে প্রেরণ করা হয়। কিন্তু ২০০৭ সালের ১ নভেম্বরের পূর্বে নিষ্পত্তিকৃত মামলার কোনো নথি প্রেরণ করা হয়নি। এতে বড় ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। অনেক সময় বিচার বিভাগ পৃথক হওয়ার আগে সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামীকে পুলিশ ধরে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে উপস্থাপন করেন। তখন সংশ্লিষ্ট নথি না থাকায় এবং সাজা পরোয়ানা যুক্ত না থাকায় ধৃত আসামীদের বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানা দেয়া যায় না। অনেক সময় হাইকোর্ট হতে এরূপ নথি তলব করা হয়। এ সব ক্ষেত্রে নথি না পাওয়ায় আদেশ দেয়া যায় না। ইতোমধ্যে উচ্চ আদালত হতে এরূপ কয়েকটি নথি তলব করা হয়েছে। কিন্তু সময়মত পাঠানো সম্ভব হয়নি।
পুলিশ প্রতিবেদন সময়মত না আসায় মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করা যাচ্ছে না। তার উপর পুলিশ প্রতিবেদন, চার্জশিট, ইনজুরি ও ময়না তদন্ত প্রতিবেদনগুলো বেশিরভাগ সেই পুরানো আমলের ন্যায় হাতে লিখে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে দাখিল করা হয়। এসব হাতের লেখা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অস্পষ্ট এবং সরকারি নির্ধারিত ফরমের যে ছক থাকে তার নিয়মনীতি অনুসরণ করে তৈরি হয় না। আবার অনেক সময় ডাক্তারী পরীক্ষার সার্টিফিকেট প্রদানের ক্ষেত্রে ডাক্তারের সিল, স্বাক্ষর, তারিখ ইত্যাদি থাকে না, আবার থাকলেও তা অনেকাংশে বোধগম্য হয় না। ফলে সেক্ষেত্রে মামলাটি নিষ্পত্তির অপেক্ষায় ঝুলে থাকে। উপরন্তু রয়েছে সাক্ষীদের সময়মত উপস্থিত না হওয়া, বিভিন্ন সময়ে সমনজারিতে বিলম্ব, ভিন্ন জেলায় ওয়ারেন্ট, পিএন্ডএ জারি ইত্যাদি ক্ষেত্রে অনেক সময় জটিলতা থাকায় মামলা নিষ্পত্তিতে বিলম্ব হয়।
২০১৬ সালের প্রথম ম্যাজেস্ট্রেসি কনফারেন্সে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটসহ অন্য বিচারকগণ এসব সমস্যার কথা তুলে ধরেন। বিচারকগণ আরও বলেন, এতোসব সমস্যার মধ্যেও চাঁদপুরে বিগত বছরগুলোতে প্রচুর মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। তাঁরা মনে করেন উল্লেখিত সমস্যাগুলোর সমাধান করা গেলে চাঁদপুর হতে পারে বিচারিক ব্যবস্থায় একটি মডেল।