জীবিকার তাগিদে নয়ন সরকার মাত্র ২৭ বছর বয়সে পাড়ি জমান সৌদি আরবে। সেখানে গিয়ে মালিকের মামলার দায় কাঁধে নিয়ে নিজ রুমে রয়েছেন বহু দিন ধরে। রুমবন্দী থাকার কারণে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে নিজ রুমে বিনা চিকিৎসায় মরতে বসেছেন নয়ন সরকার। পুলিশের ভয়ে রুম থেকে রেব হতে না পারার কারণে হাসপাতালেও যেতে পারছেন না। একদিকে মামলা, মারাত্মক অসুস্থ, অপরদিকে রুমবন্দী নয়ন, এমতাবস্থায় স্বাভাবিক ফ্লাইট বন্ধ থাকার কারণে দেশেও আসতে পারছেন না। এমন নানা সমস্যার মাঝে নিজ রুমেই মরতে বসেছেন নয়ন সরকার। দেশে বিধবা মা আদরের ছোট সন্তানের জন্যে কাঁদতে কাঁদতে চোখের পানি অনেকটাই শুকিয়েছেন। ভাই-বোনদের কান্না থামছেই না ছোট ভাইটির জন্যে। এমন অবস্থায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে সৌদি আরবস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস এগিয়ে আসলে হয়তো নয়ন দেশে আসতে পারবে। বিশেষভাবে চলাচলকারী ফ্লাইটে নয়নকে দেশে পেঁৗছে দিলে হয়তো তার পরিবার জায়গা-জমি বিক্রি করে হলেও পরিবারের ছোট সন্তানকে চিকিৎসা করাবে বলে জানান সয়ন সরকারের সত্তর বয়সের বৃদ্ধা মা মুকুল রাণী সরকার।
হাজীগঞ্জের বাকিলা ইউনিয়নের বোরখাল সরকার বাড়ির মৃত ননী গোপাল সরকারের ২ ছেলে ৩ মেয়ের মধ্যে নয়ন সরকার সবার ছোট। প্রায় ৪ বছর পূর্বে ৬ লাখ টাকা খরচ করে ফ্রি ভিসায় পাড়ি দেন সৌদি আরবে। রাজধানী রিয়াদ থেকে ৬শ’ কিলোমিটার দূরে হাইল সিটিতে কাজ জুটে। প্রথমদিকের কয়েক মাস মালিক ভালো ছিলো। এরপরেই শুরু হয় মুকুলের জীবনে দুর্যোগ। হঠাৎ করে কোনো কারণ ছাড়া মালিক তার নামে নিখোঁজ মামলা করে। নিখোঁজ মামলার খবর পেয়ে ফ্রি ভিসার কারণে মুকুল পুলিশের ভয়ে পালিয়ে যায়। টাকার চিন্তা, মামলা আর কাজ না থাকার কারণে মূলত এর পর থেকে মুকুল অসুস্থ হতে শুরু করে। শরীরের অবস্থা এতোটাই খারাপ মনে হচ্ছে যে, যেকোনো সময় রুমেই মরে যাবে। তবে তার আকামার মেয়াদ রয়েছে। এসব কথাগুলো হোয়াটসআ্যাপের মাধ্যমে চাঁদপুর কণ্ঠকে জানান মুকুল নিজে।
মুকুল আরো জানান, অসুস্থ থাকার পরেও রুমের কিংবা পাশের রুমের অন্য সকল বাংলাদেশীর সহায়তায় পালিয়ে থাকার কিছু দিন পর পর্যন্ত লুকিয়ে লুকিয়ে কাজ করেছেন। কিন্তু লকডাউন শুরুর পর থেকে পুলিশের অতিরিক্ত চেক আর বেশি অসুস্থ হওয়ার কারণে একেবারে রুমবন্দী হয়ে পড়েন তিনি। শারীরিক হাজারো সমস্যার মাঝেই লকডাউন আর মামলার কারণে বিনা চিকিৎসা আর স্বাভাবিক খাবার না পাওয়ার কারণে রুমে মরতে বসেছেন মুকুল। তবে বিমান চলাচল স্বাভাবিক হলে নিজেই ধরা দিয়ে দেশে চলে আসতে পারতেন। এখন আটক হলে যতদিন ফ্লাইট চলাচল স্বাভাবিক না হবে ততদিন তাকে সেখানে জেলে থাকতে হবে বলে জানান। তবে দূতাবাস সুনজর দিলে বিশেষভবে যে সকল ফ্লাইট চলমান রয়েছে, এ জাতীয় ফ্লাইটে তাকে দেশে পেঁৗছে দিলে হয়তো কিছুটা হলেও চিকিৎসা নিয়ে মায়ের কোলে থাকতে পারতেন তিনি।
সরজমিনে মুকুলের গ্রামের বাড়িতে গেলে দেখা যায়, জরাজীর্ণ বসতঘরে তার বয়স্ক মা বসবাস করছেন। সেখানেই বিছানায় বসে প্রতিনিয়ত ছোট ছেলের কল্যাণ কামনা করে কান্নাকাটি করেই চলছেন। বাড়িতে যে যায় তার কাছেই আবদার করছেন তার ছেলেটাকে তার কোলে ফিরিয়ে দিতে। এ মায়ের একটাই দাবি ও কথা, শেখের বেটি শেখ হাসিনা যদি আমার ছেলেটাকে আমার কোলে ফিরিয়ে এনে দেয়, তাহলে তার জন্য আমি উপরওয়ালার কাছে দুহাত তুলে দোয়া করবো। সন্তানের বিপথগ্রস্ততায় কাতর মাকে সান্ত্বনা দিতে ২/১ দিন পর পর বোনেরা নিজেদের স্বামী-সংসার রেখে বাবার বাড়িতে ছুটে আসেন, কিন্তু কিছুতেই মাকে বুঝানো যাচ্ছে না।
মুকুল সরকারের বড় ভাই সুখরঞ্জন সরকার জানান, জাতির জনকের কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটু সুদৃষ্টি দিলে আমার ভাইটাকে হয়তো বাঁচানো সম্ভব। সৌদি আরবস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে বিশেষভাবে চলাচলকারী ফ্লাইটের মাধ্যমে দেশে এনে পেঁৗছানোর ব্যবস্থা করে দিলে আমরাই আমাদের ভাইয়ের চিকিৎসা করাবো। সরকার যদি একটা কিছু না করে তবে আমার ভাইটা রুমেই কোনো একদিন মরে থাকবে। দূতাবাস কিংবা কোনো সহৃদয়বান বাংলাদেশী আমার ভাইটাকে দেশে আসার বিষয়ে সহযোগিতা করতে চাইলে ০০৯৬৬০৫৭৮২৫৫৯১৩ নাম্বারে যোগাযোগ করতে অনুরোধ করা হলো।