শওকতআলী ॥ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালনে চাঁদপুরে মুক্তিযুদ্বের সময় নৌ-পথে যুদ্ব করা পদ্মা নামক জাহাজটি সর্বসাধারন ও নতুন প্রজন্মকে মুক্তি যুদ্বের চেতনায় উদ্বুর্ধ করার জন্য জাহাজটি চাঁদপুর ডাকাতিয়া নদীতে অবস্থান নেয়। নৗ-বাহিনীর যুদ্ধ জাহাজ ‘পদ্মা’য় চাঁদপুরের শত-শত দর্শনার্থীর ভিড় করতে দেখা গেছে। এ পদ্মা যুদ্ব জাহাজটিতে পরিদর্শন শেষে প্রতিক্রীড়া ব্যাক্ত করেন বিল্লাল শিকদার। পেশায় তিনি শিক্ষক। চাঁদপুর ডাকাতিয়া নদীতে পুরতন লঞ্চঘাটে নৌবাহিনী পরিচালিত যুদ্ধ জাহাজ ‘পদ্মা’ দেখতে এসে অনুভুতি প্রকাশ করে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পরে আমার জন্ম। যুদ্ধ দেখিনি, তবে মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত জাহাজটি দেখে নিজেকে গর্বিত মনে হয়। কারণ দেশকে ভালবেসে অনেক মানুষ প্রাণ দিয়েছে একটি স্বাধীন দেশের জন্য। তাঁদের প্রতি আজকের স্বাধীনতা দিবসে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি।
সোমবার (২৬ মার্চ) দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সর্বসাধারণের উন্মুক্ত করে দেয়া হয় জাহাজটি। সকাল থেকেই অনেক মানুষ জাহাজটি দেখার জন্য এসে ভীড় জমায় চাঁদপুর পুরাতন নৌ-টার্মিনালের বাহিরে। ঠিক দুপুর ২টার পর থেকেই ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে জাহাজে প্রবেশ করে সাধারণ মানুষ। এ সময় সব বয়সের মানুষই জাহাজটি দেখতে আসেন। তবে সংখ্যা বেশী স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী। জাহাজটিতে ৩জন অফিসার ও ৬০ জন নাবিক নিয়ে জাহাজটির আগমন হয় খুলনা থেকে চাঁদপুর আসে এ এলাকার মানুষ জাহাজটি পরিদর্শনের জন্য। এ জাহাজের নাবিক ও কর্মকতারা জাহাজটি দিয়ে দেশের সমুদ্রসীমা রক্ষা,জাটকা রক্ষা,কর্মসূচি সকল প্রকার সামুদ্রিক নৌ-মহড়া,নদী ও সমুদ্র পথে চোরা চালান,মানব পাচার রোধ,দূযোর্গপূর্ন উদ্বার তৎপড়তা সহ গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখছে বলে নাবিকরা জানান।
শহরের আক্কাছ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেনীর ছাত্র আবু বকর ছিদ্দিক জানান, ভাল লেগেছে জাহাজাটি দেখে। এটি চাঁদপুরে না আসলে কখনো দেখা সম্ভব হতনা। আরেক শিক্ষার্থী হাসানুল হক হিমেল জানান, অনেক অজানা জিনিস দেখতে পেলাম। যুদ্ধে ব্যবহৃত এবং নৌ-বাহিনীর নিজস্ব কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি দেখার সুযোগ পেলাম। প্রতিবছর জাতীয় দিবসগুলোতে জাহাজটি আসলে ভাল হবে। দর্শনার্থী আঃ রাইয়ান ও মো. কামাল উদ্দিন জানান, নৌপথে যুদ্ধের কথা শুনেছি। এবার প্রথম দেখে খুবই ভাল লাগল। নতুন প্রজন্ম জাহাজটি দেখে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারবে।
ব্যবসায়ী শাজাহান কবির খোকা জানান, আমি জাহাজটি দেখে আবেগ আপ্লুত। কারণ এ ধরনের জাহাজে প্রবেশ করা সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ এটি দেশ রক্ষার কাজেই শুধুমাত্র ব্যবহৃত হয়। এটি দেখে নতুন প্রজন্ম নৌ-বাহিনীর প্রতি ভাল ধারনা পাবে।
চাঁদপুর জেলা জর্জ কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী নিজাম উদ্দিন জানান, স্বাধীনতা দিবসে সর্বসাধারণের জন্য এ ধরনের একটি জাহাজ উন্মুক্ত করে দেয়া নৌ-বাহিনী এবং সরকারের ভালো উদ্যোগ। এটি দেখে মহান মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সম্পর্কে নতুন প্রজন্ম ধারণা নিতে পারবে। কারণ জাহাজে দায়িত্বরত কর্মকর্তাগণ শিক্ষার্থীদেরকে জাহাজে রক্ষিত অনেক কিছুর সাথে পরিচয করিয়ে দিয়েছেন।
দৃস্টিনন্দন জাহাজটিতে জেলা প্রশাসন,জেলা পুলিশ সুপার,পৌর মেয়র, মুক্তিযোদ্বাগন,এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিসহ আপামর জনসাধারনের ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দিপনায় পরিদর্শন করতে দেখা যায়।
পদ্মা জাহাজের অধিনায়ক কমান্ডার নেছার আহম্মেদ জুলিয়াস জানান, চাঁদপুর এসে অনেক ভাল লেগেছে। কারণ এ জেলার মানুষের জাহাজটি দেখার আগ্রহ দেখে নাবিকরা খুবই গর্বিত। সর্বসাধারাণের মাঝে স্বাধীনতা যুদ্ধে নৌ-বাহিনীর ভূমিকা ও তাৎপর্য তুলে ধরাই এর মূল উদ্দেশ্য। মহান মুক্তিযুদ্ধে সর্বপ্রথম পদ্মা ও পলাশ নামে দু’টি যুদ্ধ জাহাজ যুদ্ধে সরাসরি অংশ গ্রহন করে। সে সময় ব্যবহৃত যুদ্ধ জাহাজ পদ্মা ১৯৮০ সাল পর্যন্ত নৌ-বাহিনীর কার্যক্রমে ছিল। বর্তমানে বানৌজা পদ্মা জাহাজটি ২০১৩ সালে বাংলাদেশ খুলনা শিপইয়ার্ড লিঃ কর্তৃক তৈরীকৃত আধুনিক প্রযুক্তির পেট্টোল ক্রাফ্ট। এ জাহাজটি মুক্তিযুদ্বের স্মৃতি ধরে রেখে তার কার্যক্রম চালিয়ে যাচেছ। এটি ৬টি আধুনিক বিমান বিধ্বংসি কামান বহন করে আছে। রাতেই জাহাজটি নিজ গন্তব্য খুলনার উদ্দেশ্যে চাঁদপুর ত্যাগ করবেন।