স্বাস্থ্য ও পরিবেশ ঝুঁকি বিবেচনায় মোবাইল টাওয়ারের বিকিরণের আন্তর্জাতিক মাত্রা ১০ ভাগের ১ ভাগ নির্ধারণ করা যৌক্তিক কিনা, সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। এর জন্য বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের সাবেক সদস্য মো. কামরুজ্জামানকে আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এর পরিচালক মো. গোলাম রাজ্জাককে সদস্য সচিব করে সাত সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করে দিয়েছেন আদালত। এ কমিটিকে চার মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) এর আবেদনে আজ সোমবার এ আদেশ দেন বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের বেঞ্চ।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
বিকিরণ দুই ধরনের, আয়োনাইজিং ও নন-আয়োনাইজিং। এর মধ্যে আয়োনাইজিং রেডিয়েশন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। পারমাণবিক বর্জ্য, সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি, গামা রশ্মি (এক প্রকার উচ্চ কম্পাঙ্কের খুব ছোট তরঙ্গদৈর্ঘ্য তড়িৎ-চুম্বকীয় বিকিরণ) বা রঞ্জনরশ্মি (এক্স-রে) শরীরে ডিএনএ পর্যায়ে পরিবর্তন আনতে সক্ষম। মোবাইল টাওয়ারের রেডিয়েশন নন-আয়োনাইজিং। মোবাইল টাওয়ারের যন্ত্রপাতির ইলেক্ট্রো-ম্যাগনেটিক ফিল্ড (ইএমএফ) বিকিরণের আন্তর্জাতিকভাবে মানদণ্ড আছে।
ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অন নন-আয়োনাইজিং রেডিয়েশন প্রোটেকশনের (আইসিএনআইআরপি) পক্ষ থেকে ইলেকট্রিক অ্যান্ড ম্যাগনেটিক ফিল্ডস (ইএমএফ) রেডিয়েশনে যে মাত্রায় ক্ষতিকর প্রভাব পাওয়া গেছে, তার ৫০ ভাগের এক ভাগকে নিরাপদ সীমা হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। আইসিএনআইআরপি নির্ধারিত বিকিরণমাত্রা প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৪ দশমিক ৫ ওয়াট। বাংলাদেশে নিরাপদ সীমারও অনেক কম মাত্রায় বিকিরণ পাওয়ার কথা বলে আসছে বিটিআরসি।
আইনজীবী মনজিল মোরসেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যেসব দেশের ভিত্তিতে বিকিরণমাত্রা প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৪ দশমিক ৫ ওয়াট করা হয়েছে সেসব দেশ শীত প্রধান। সেখানে জনবসতি কম, কিন্তু বাংলাদেশ উষ্ণ ও ঘনবসতিপূর্ণ। ‘
ভারতের সুপ্রিম কোর্টের একটি রায় তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘ওই রায়ের পর আন্তর্জাতিক মাত্রা নির্ধারণের পর ভারত নিজ দেশের প্রেক্ষাপটে মাত্রা দশমিক ৪৫ মাত্রা অর্থাৎ আন্তর্জাতিক মাত্রার ১০ ভাগের ১ ভাগ করেছে। কিন্তু আমাদের দেশে তা করা হয়নি। ‘
মোবাইল টাওয়ার বিকিরণের ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন হলে সেসব প্রতিবেদন যুক্ত করে ২০১২ সালে উচ্চ আদালতে এইচআরপিবির পক্ষে রিট আবেদন করা হয়। এই রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্টের নির্দেশের পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে।
ওই বিশেষজ্ঞ কমিটি ঢাকার মতিঝিল, গুলশান ও মিরপুর এলাকায় ৬টি মোবাইল কম্পানির ১৮টি টাওয়ারের বিকিরণ পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ করে ২০১৩ সালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে তিন দফা সুপারিশ করে প্রতিবেদন দেয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব টাওয়ারের মধ্যে মাত্র একটি টাওয়ারে মাত্রাতিরিক্ত রেডিয়েশন পাওয়া গেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের দেওয়া নির্দেশনার আলোকে বিটিআরসি নীতিমালা করে।
পরবর্তীতে আদালতের দেওয়া আদেশে কয়েক দফা এই নীতিমালা সংশোধন করে বিটিআরসি। এই প্রেক্ষাপটে মামলাটি চলমান রেখে ২০১৯ সালের ২৫ এপ্রিল রায় দেন উচ্চ আদালত। রায়ে ১১ দফা নির্দেশনা দিয়ে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের আগে বিকিরণের সম্ভাব্যতা যাচাই করতে বলেন আদালত।
বিটিআরসি সম্ভাব্যতা যাচাই না করে নীতিমালা চূড়ান্ত করে তা আদালতে দেয়। বিটিআরসির চূড়ান্ত নীতিমালায় বিকিরণের মাত্রা আগের মত রাখা হয়। পরে এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ মত নিতে গত ১৬ অক্টোবর হাইকোর্টে আবেদন করা হয়।