হজ প্যাকেজের উচ্চমূল্যের প্রভাবে নিবন্ধনে ভাটা
- গত বছরের মতো কোটা পূরণ নিয়ে শঙ্কা
- দফায় দফায় সময় বৃদ্ধি করেও সাড়া মিলছে সামান্য
- ৯৪ হাজার কোটা ফাঁকা এখনো
- সৌদি আরব সরকারের সাথে গতকাল সোমবার বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক হজ চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে। জেদ্দায় সম্পাদিত এই চুক্তি অনুযায়ী চলতি বছর ১ লক্ষ ২৭ হাজার ১৯৮ জন বাংলাদেশি হজপালনের সুযোগ পাবেন। এদিকে হজ প্যাকেজের উচ্চমূল্যের প্রভাবে চলতি মৌসুমেও গত বছরের মতো এবারও সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ গমনেচ্ছুদের নিবন্ধনে ভাটা পড়েছে। গত বছরের ১৫ নভেম্বর থেকে এখন অবধি তিন দফা নিবন্ধনের সময় বৃদ্ধি করা হলেও গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত সরকারি ব্যবস্থাপনায় নিবন্ধন করেছে মাত্র ৩ হাজার ১৫৭ জন ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় নিবন্ধন করেছে ৩০ হাজার ৫৯৮ জন। নিবন্ধনের শেষ সীমা আগামী ১৮ জানুয়ারি। সব মিলিয়ে নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন ৩৩ হাজার ৭৫৫ জন। এখনো ৯৪ হাজারের বেশি হজ গমনেচ্ছুদের আসন ফাঁকা রয়েছে। ফলে গত গত বছরের মতো এবারও কোটা পূরণ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
-
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হজ প্যাকেজের উচ্চমূল্যের কারণে হজ গমনেচ্ছুদের অনেকের বাজেটে কুলাচ্ছে না। চলতি ২০২৪ সালে সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যাওয়ার দুইটি প্যাকেজ নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সর্বনিম্ন প্যাকেজের মূল্য ৫ লাখ ৭৮ হাজার ৮৪০ টাকা। আর বিশেষ প্যাকেজের মূল্য ৯ লাখ ৩৬ হাজার ৩২০ টাকা। অপরদিকে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় দুইটি প্যাকেজের মূল্য যথাক্রমে ৫ লাখ ৮৯ হাজার ৮০০ টাকা এবং ৮ লাখ ২৮ হাজার ৮১৮ টাকা। যদিও গত বছরের চেয়ে এ বছর সর্বনিম্ন প্যাকেজের মূল্য ১ লাখ ৪ হাজার ১৬০ টাকা কমানো হয়েছে, তবুও বর্তমান হজ প্যাকেজের মূল্যকে অনেক বেশি মনে করছেন হজে যেতে আগ্রহীরা।
জানা যায়, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোয় হজের খরচ তুলনামূলক অনেক কম। এই প্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার ২০২৪ সালের হজ প্যাকেজে অতিরিক্ত খরচ নির্ধারণ করা কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত হবে না তা, জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। দুই সপ্তাহের মধ্যে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক ও হজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশকে (হাব) এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী পারভেজ হোসেন। তিনি জানান, প্যাকেজে বাড়ি ভাড়া, বিমান ভাড়া, সৌদি আরবে যাতায়াত খরচ অতিরিক্ত ধরা হয়েছে। সেই সঙ্গে ট্যাক্সও অতিরিক্ত। এগুলো কমাতে রিট করা হয়েছে। পাশাপাশি নির্ধারিত এয়ারলাইন্স ছাড়া হজযাত্রী পরিবহন করা যায় না। এই মনোপলির বৈধতাও চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। আদালত প্রাথমিক শুনানি নিয়ে রুল জারি করেছেন। রুলে ২০২৪ সালের হজ প্যাকেজে অতিরিক্ত খরচ নির্ধারণ করা কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত হবে না এবং হজযাত্রী পরিবহনে সব আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্সকে কেন অনুমতি দিতে নির্দেশনা দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়েছেন আদালত।
জানা গেছে,আমাদের পার্শ্ববর্তী ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ কোন দেশেই হজ করতে এমন উচ্চমূল্য দিতে হয় না। এক্ষেত্রে হজ যাত্রীদের জন্য সাধারণভাবে বিমান ভাড়া প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধির কথা বলা হয়ে থাকে। তবে অভিযোগ আছে, হজকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে নানা সিন্ডিকেট। এসব সিন্ডিকেটের কাছে অধিকাংশ হজযাত্রী জিম্মি। হজ নিয়ে বাণিজ্য করার জন্য গড়ে উঠেছে হজকেন্দ্রিক মার্কেটিং অফিসার, কমিশন বাণিজ্য, এজেন্সির সিন্ডিকেট এবং হজযাত্রী পরিবহণ সিন্ডিকেট। সৌদি আরবে বাসা ভাড়া কেন্দ্রিক প্রতারণা, কখনো কখনো হজযাত্রীদের জমা দেওয়া টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়াসহ নানা অবৈধ বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে হজ এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে। হজের মতো মুসলমানদের গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত নিয়ে এই ব্যবসা চলছে বছরের পর বছর। আকাশচুম্বী প্যাকেজমূল্যের কারণে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে পবিত্র হজ।