আন্দোলন সংগ্রামে রাজনৈতিক দলগুলোর সর্বশেষ অস্ত্র হলো হরতাল। সেখানে এক বা একাধিক দাবির উপর ভিত্তি করে দলগুলো জনস্বার্থ বিচার করে হরতালের মতো কর্মসূচির ঘোষণা দেয়। আর জনগণ সে দাবিকে সমর্থন করে তারা হরতালের দিন দোকানপাট খোলে না। কোর্ট আদালত, ব্যাংক-বীমা প্রতিষ্ঠানে যায় না। গাড়ী চালকরা গাড়ী চালান না। শ্রমিক কারখানায় যায় না। সময়ের পরিবর্তনে রাজনৈতিক দলগুলো সে হরতালকে রূপ দিয়েছে ভয়তালে। কেন্দ্রীয় নেতাদের মুখ থেকে একবার হরতাল শব্দটা বের হলেই হলো শুরু হয় গাড়ি পোড়ানো ও মানুষ পোড়ানো, আর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর।
গত হরতালে সারাদেশে ত্রিশ হাজার গাড়ি পোড়ানো হয়। ৯ জন অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যায়। আর অবরোধ রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচির মধ্যে হরতালের তুলনায় শিথিল। অবরোধ অনেকটা সীমাবদ্ধতার মধ্যে থাকে। সড়ক অবরোধের ক্ষেত্রে সমর্থক নেতাকর্মীরা বাসস্ট্যান্ড শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান নেবে এবং যাতে যানবাহন চলাচল করতে না পারে। রেল ও নৌপথ অবরোধের ক্ষেত্রে এমনই হবে।
কিন্তু গত ২৫ নভেম্বর ১০ম জাতীয় সংসদের নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পরপরই বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট ২৬ তারিখ থেকে ২ দিনের অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে। নেতাকর্মীরা ২৬-২৭ তারিখের অবরোধকে সফল করতে, হরতালের মতো আগের দিন রাতেই শুরু করে তাণ্ডব। আর সেই তাণ্ডব থেকে রেহাই পায়নি শান্তির শহর খ্যাত চাঁদপুর। হাজীগঞ্জে শুরু হয় যানবাহনের উপর হামলা। বাকিলা, মঠখোলা রাস্তার মধ্যে গাছের গুড়ি ফেলে অবরোধ শুরু হওয়ার আগেই শুরু হয় অবরোধ। চিত্রলেখার মতো ব্যস্ততম এলাকায়ও সড়কের উপর আগুন দিয়ে আগাম জানান দেয় অবরোধ কতটা নির্মম হবে। অবশ্য নির্মম হয়েছেও। দৈনিক আলোকিত চাঁদপুরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক জাকির হোসেনের উপর হয়েছে নির্মম হামলা। রাস্তায়, রাস্তায় ফেলা হয়েছে গাছের গুড়ি। কাটা হয়েছে শত-শত গাছ। জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে তেলবাহী গাড়ীসহ অন্যান্য গাড়ী। অনেকস্থানে খুলতে দেয়া হয়নি দোকানপাট। ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুলে যাওয়ার পথে শিকার হন প্রতিবন্ধকতার। ফলে শহরের বেশিরভাগ স্কুলে অনুষ্ঠিত হয়নি সমাপনি পরীক্ষা। চাঁদপুর সরকারি কলেজের বেশীর ভাগ শিক্ষার্থীরা ক্লাস ও ভর্তি ফরম তুলতে আসতে পারে নি আতঙ্কে। কারণ কলেজের সামনেই পিকেটাররা আগুন জ্বালিয়ে আতঙ্ক ছড়ায়। আর সে সাথে ককটেল এবং চুন ভর্তি বোতল কিছুক্ষণ পরপরই ফুটছে। তার উপর গতকাল আবার সাংবাদিকদের উপর হামলা। সময় টেলিভিশন ও এস এ টেলিভিশন প্রতিনিধিদের লক্ষ করে ছোড়া হয় ককটেল। উপড়ে ফেলা হয় রেলপথ। হরতালের মতো ১৮ দলীয় জোটকে অবরোধ কর্মসূচি পালন করতে দেখে অনেকে বিস্মিত হয়ে প্রশ্ন করেন ভাই হরতাল আর অবরোধের মধ্যে পার্থক্য কোথায়?
শিরোনাম:
সোমবার , ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ , ২৫ ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।