হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা ২০৩টি মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করার উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ। সরকারের হাইকমান্ড থেকে নির্দেশনা পেয়ে পুলিশও কাজ শুরু করে দিয়েছে। গত এক মাসের ব্যবধানে অন্তত ১০ নেতা জামিন পেয়েছেন। তারা যে কোনো সময় কারামুক্ত হবেন বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির নেতারা। তবে হেফাজতে ইসলামের সাবেক যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক আপাতত মুক্ত হচ্ছেন না। তার বিষয়ে সরকারের ইতিবাচক মনোভাব পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, জামিন পাওয়ার পর আবারও নানারকম কথা বলে সরকারকে বিব্রত করতে শুরু করবেন মামুনুল হক। এ কারণে তার মুক্তি পাওয়ার বিষয়টি ঝুলে গেছে।
২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে জড়ো হয়েছিলেন হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা। ঐ দিন রাজধানী জুড়ে ব্যাপক সহিংসতা হয়। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ, বাগেরহাট, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ সাত জেলায় হেফাজতের কর্মীদের সঙ্গে সহিংসতা ঘটে। এসব ঘটনায় ঢাকাসহ সাতটি জেলায় ৫৩টি মামলা দায়ের হয়। ৫৩টি মামলার মধ্যে ৪৯টি মামলা ঝুলে আছে। আবার ২০২১ সালের ২৬ মার্চ রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ এলাকায় বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় হেফাজতের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রামের হাটহাজারী, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, কিশোরগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। এসব ঘটনায় সারা দেশে ১৫৪টি মামলা দায়ের করা হয়। সব মিলিয়ে হেফাজতের সহিংসতার ঘটনায় ২০৩টি মামলা এখনো রয়েছে।
হেফাজতের কেন্দ্রীয় এক নেতা বলেন, রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে আমরা গত ১৭ ডিসেম্বর বৈঠক করেছি। ঐ বৈঠকে সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা মুহাম্মদ ইয়াহিয়ার নেতৃত্বে ১১ সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নেন। প্রায় ১ ঘণ্টা ১০ মিনিট বৈঠকটি হয়। বেশ কয়েকটি দাবি নিয়ে কথা হয়েছে বৈঠকে। নেতাকর্মীদের মুক্তি, মামলা প্রত্যাহার এবং মাদ্রসার শিক্ষার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বেশকিছু প্রস্তাব অনুরোধ করা করা হলে তিনি নিজেই নোট নেন। মাওলানা মামুনুল হকসহ হেফাজতের সব নেতাকর্মীর মুক্তি দাবি করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, সমঝোতা ছাড়া কোনো কিছুই সমাধান হয় না। আমরা চাই না সরকারের সঙ্গে আমাদের কোনো ধরনের ভুলবুঝাবুঝি হোক।
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, হেফাজতের মামলাগুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করছি। দেখি কী করা যায়। ২০২১ সালে মার্চ মাসে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর নিয়ে অফিস আদালতসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো ধ্বংসলীলা চালিয়েছিল তারা। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলছে। আমরাও চাচ্ছি মামলাগুলো দ্রুত সময়ে নিষ্পত্তি হোক।
পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, হেফাজতের মামলাগুলো নিষ্পত্তি করতে মৌখিক নির্দেশনা পাওয়া গেছে। মূলত মামলাগুলো প্রত্যাহার বা চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই বিষয়গুলো নিষ্পত্তি করার পরিকল্পনা আছে আমাদের। ইতিমধ্যে তদন্তকারী সংস্থাগুলোকে কাজ করতে বলা হয়েছে। তাছাড়া গত এক মাসে হেফাজতের অন্তত ১০ নেতা জামিন পেয়েছেন।
জানতে চাইলে হেফাজত ইসলামীর কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব ও মুখপাত্র মাওলানা মহিউদ্দিন রব্বানী বলেন, মাস খানেক আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমরা একটি বৈঠক করেছি। বৈঠকে কেন্দ্রীয় কমিটির প্রায় সবাই ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর আমাদের বক্তব্য ধৈর্যসহকারে শোনেন। এর আগে আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেও দেখা করেছি। প্রধানমন্ত্রী তাৎক্ষণিক তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করার পাশাপাশি কারাগারে আটক নেতাদের জামিন ও মুক্ত করার নির্দেশনা দেন। আমরা প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে খুবই আশাবাদী। তিনি আরো বলেন, মামলায় আদালতে আমাদেরকে হাজিরা দিতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। আমরা কোনো ধরনের রাজনীতি করি না। ইসলাম নিয়ে কাজ করছি। একটি মহল আমাদের নামে অপবাধ রটাচ্ছে। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকেও অবহিত করেছি। তিনি আমাদেরকে আশ্বাস দিয়েছেন। এখন দেখা যাক, আমরাও আশা করছি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়ন হবে।