জান্নাতুল ফেরদৌসী (নিলু):অতীতের ফেলে আসা দিন গুলি আজ নতুন ভাবে নতুন করে মনে পড়ে গেল। সেই ছোট বেলায় বন্ধু বান্ধবী দের কে নিয়ে খেলা ধূলায় ছোটা ছুটি করা। নিজের সাজানো বাগান থেকে ফুল ছিড়ে ছোট ছোট হাড়ি পাতিল দিয়ে সকল কে নিয়ে একটি ছোট রুমে বসে নিজের মতো করে খেলা ধুলায় মগ্ন থাক। কখনো বাড়ির পুকুরের পাড়ে ঝোপ জঙ্গল থেকে বিভিন্ন নতুন নতুন গাছের পাতা এনে, মিছামিছি তর কারি রান্না করা। বালু দিয়ে ভাত রান্না করা, শাড়ী কাপড়ের পতুল দিয়ে সবাই মিলে পুতলের বিয়ে দেওয়া কতইনা আনন্দ করে ছিলাম। আমরা বন্ধু বান্ধবী মিলে, কখনো ঝম, ঝম বারি ধারা বৃষ্টি হলে বন্ধু বান্ধবী সবাই মিলে বৃষ্টিতে ভিজতাম মনের আনন্দে। মা, বাবা, দাদু দেখে ফেললে চুপি চুপি ঘরে এসে জামা কাপড় পাল্টিয়ে নিতাম। কখনো কখনো এই সব দুষ্টমির জন্য মায়ের বকা শুনতে হত। মাঝে মাঝে আমার ছোট কাকার নিকট মা, অভিযোগ করতেন আমার বিরুদ্ধে আমি খুব দুষ্ট, আমি বৃষ্টি এলে বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে হৈ, চৈ করি। কাকা আমাকে কাছে ডেকে নিয়ে, এই নিয়ে এই সব দুষ্টমির জন্যে শাস্তি দিতেন, আমাকে বিশবার কানে ধরে উটবস করাতেন। আর পাঁচ বার আমার কান মলে দিতেন। আমি রাগে কষ্টে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভিষন কান্না করতাম, আমার বয়স তখন ৭ কিংবা ৮। আমার শাসনের অবস্থা দেখে দাদু মাঝ খান থেকে কাকা কে বকা দিতেন। কাকা বলত মেয়েটা শুধু তোমার জন্য খারাপ হবে। দাদু বলত জা-জা নিলুতো শুধু বৃষ্টি এলে ভিজে আর বন্ধু বান্ধবী নিয়ে খেলাধুলা করে। আর তুই তো ছোট বেলায় কাহারো গাছের একটা ফলও রাখিসনা। এখন বড় হয়ে এক বাড়ে ওস্তাদ হয়ে গেছিস। তুই কখনো আমার নাতনীকে কান মলা দিবিনা। কাকা বলল এ তো নষ্ট হয়ে যাবে। দাদু বলল দেখে নিস বড় হলে সব ঠিক হয়ে যাবে। কাকা বলল তার আগে তো তুমি মারা যাবে, তখন কাকে বলব? দাদু একটু তৃপ্তি হাসি হেসে বলল ওরে গাদা তোরা তো থাকবি, সবাই তো আর এক সাথে মারা যাবো না। কাকা বলল ঐ বড় হওয়া পর্যন্ত যদি অপেক্ষা করতে হয় তাহলে দেখবে ওকে বিয়ে দেওয়া যাবেনা, দাদু বলল কারণ কি? কাকা বলল যেই ঘরে তোমার মত দাদু থাকে নাতনীকে শুধু আদর করে, শাসন করেনা ঐ ঘরের মেয়েদেরকে ভাল বিয়ে দেয়া যায়না। দাদু বলল ওর একদিন বড় ঘরে বিয়ে হবে তুই দেখে নিস। ওকে নিয়ে তোর এত চিন্তা করা লাগবে না। দাদু আরো বলল ছোট বেলায় কম বেশি সবাই দুষ্টমি করে। কাকা একটু মূদুহেসে দাদু কে বলল বড় ঘরের প্রয়োজন নেই বড় ভাল বরের প্রয়োজন আছে। দাদু কাকা কে বলল এই নিয়ে তুই চিন্তা করে ঘুম হারাম করিস না। কাকা বলল কারন কি তুমি এমন ভাবে কথা বলো যে মনে হয় আগে থেকে তুমি তার বিয়ের ব্যপারে সব জানা শুনা আছে। দাদু কাকা কে বলল ওরে বোকা সুন্দুরী মেয়েদের বরের অভাব হয়না। কাকা বলল এর তো আরো দোষ আছে, চব্বিশ ঘন্টা টিভি দেখে ভূল করে ও চোখের পলক ফেলেনা, একটি ব্তিুাপন পযর্ন্ত বাধ দেয় না। এরে তো সামলাতে সমস্যা হবে, দাদু কাকার প্রশ্নের উত্তর দিল তা ঠিক আছে টিভি দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়বে তার পরে ও টিভি দেখা বন্ধ করেনা। আর ভাত ও খাবেনা,এইটা নিয়া আমি চিন্তাকরি,টিভি দেখবে তো ভাল কথা, তাই বলে কি খাওয়া দাওয়া বন্ধকরে দিয়ে, সব সময় আমাকে নিয়ে দাদুর সাথে কাকার এই নিয়ে ঝগড়া হতো। এই সব কথা তর্ক বির্তকের মাঝে আমার বেড়ে উঠা। পরিবারের প্রতিটা মানুষের কাছে আমি ছিলাম খুব প্রিয় কারন পরিবারে তখন আমি একমাত্র ভাগ্যবতী আদরের দুলালী। একটা সময় দেখা গেল আমি স্কুলে আসা যাওয়া করতেছি, হঠাৎ করে পড়ালেখা নিয়ে ব্যস্ত, খেলা ধুলার প্রতি এতটা আগের মতো আগ্রহ নেই। পরিবারের সকলে আমার আচরণে চলা ফেরায় মুগ্ধ, তাঁদের মনে যেই ভয় ছিল আমাকে নিয়ে আমি খুব ছোটা ছুটি করি টিভি দেখার প্রতি খুব নেশা, আমার পড়া লেখা ভাল হবে কিনা। এই ভয়টা চলে গেল তাদের মন থেকে। ঐ দিকে আমার আচার আচরণে দাদুর মুখে বড় বড় কথা। কিরে বলেছিলাম না ও বড় হলে একদিন ঠিক হয়ে যাবে। কাকা দাদুকে মজা করে হাসতে হাসতে বলল ভাল হয়ে চলাফেরা করে বলেইতো বেচে গেছি। না হয় ওর পরিবর্তে তোমার মুখ দেখে বিয়ের পিরীতে বসাতে হতো। দাদু উচ্চ স্বরে হেসে বলল ভালই হতো। এক সাথে দুই জনের বিয়ে হতো। আমাদের পরিবারের সবাই ছিল খুব রোমান্টিক সবাই সবার সাথে মজা করে কথা বলত। এই দৃশ্য গুলো আজো মনে পড়ে। আজ আর আমি সেই ছোট কিশোরী নই,। আজ অনেক বড় হয়ে যখন বিয়ে করেছি, সংসার মুখী হয়েছি, স্ত্রীর দায়িত্ব এবং মায়ের ভূমিকা পালন করতেছি, তখন আমার মনে হলো আজ আর ছোট্ট খুকি নই। বয়সের চাপে সংসারের দায়িত্ববোধ থেকে আমি অনেক সচেতন এবং অটল। একটা সময় ছিল ছোট বেলায় মা,বাবা, দাদু এবং কাকার নিকট অনেক চাওয়া পাওয়া বায়না থাকত। আমার আজ এইটা আর কাল ঐটা এখন তার উল্টা। এখন পাওয়ার চেয়ে দিতে হয় বেশী। কারণ অতীতের ঐ স্থান থেকে বদলে গেছে আমার জীবনতরী। তবে ভাল লাগে ভাবতে কারণ পাওয়ার চেয়ে দেয়ার আনন্দটা কোন অংশে কম নয়। আমি আমার শশুর বাড়ীতে প্রতিটা পরিবারের ছোট বড় সকলকে খুব ভাল ভাবে সব কিছুতে সহজেই বুঝার চেষ্টা করি। কারণ ছোটবেলা যখন আপন জনের নিকট চেয়ে কোন কিছু চেয়ে পেতাম না, তখন ভিষন খারাপ লাগত। ঐ স্মৃতিটা যখন আমার মনে পড়ে তখন আপন পর কাউকে কোন কারণে কোন কিছুতেই দেবনা এই শব্দটা ব্যবহার করিনা, কারণ আমি সকলকেই আমার নিজের মত করে ভাবি। তাই আমার সাধ্যমত আমি চেষ্টা করি সকলের চাওয়া পাওয়ার দাবি টুকু পূরণ করতে। তাতে হয়তো কিছুটা পারি হয়তো বা পারিনা। তবে আর যাই হোক কাউকে মন খারাপ করতে দেইনা। ছোট বড় সকলকে কাছে ডেকে আদরে, আদরে বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করি। আজ হয়তো তোমার শখ, ইচ্ছা পূরণ করতে পারি নাই দেখে নিও কোন এক দিন তোমাদের চাহিদা পূরণ করতে পারবো। তবে মিথ্যা সান্তনা ও কাউকে দেইনা। কারন মিথ্যা বাদিকে কেউ ভাল বাসেনা। আমি কাহারো ভাল বাসা থেকে বিশ্বাস থেকে বঞ্চিত হতে চাইনা। কারন ভালবাসা ছাড়া জীবন অর্থহীন জীবন চলার পথে ভাল বাসার বড় প্রয়োজন। কেউ কাউকে সম্মান করলে তাঁর সম্মান আরো বাড়ে তেমনি করে কোন মানুষ যদি কাউকে ভালবাসে সে ও বিনিময়ে ভালবাসা পায়। ভালবাসা বলতে প্রেম বলতে শুধু প্রেমিক, প্রেমিকা নয়, সবাই সবাই কে ভাল বাসতে পারে, যদি কেউ পরিচ্ছন্ন ভাল বাসতে জানে। ভাল বাসার কোন সীমাবদ্ধতা নেই, নেই কোন দাড়ি, কমা, ভালবাসা হল হৃদয়ের গোলাপী রঙ মিছানো আলতো ্আলতো ছোয়াঁ, ভালবাসা হল সীমাহীন নীল আকাশের বারি ধারা রাশি রাশি জল। ভালবাসা হল সবুজ পাতায় পাতায় চলা চাঞ্চলা এক ঝাক রঙিন প্রজাপতি। তাড়ি ধারা বাহিকতায় যদি বলি তাহলে বলতে হয় ভালবাসার সৃষ্টি কর্তার সবচেয়ে প্রিয় জীব হল মানুষ। আর তাড়ি পাশা পাশি সৃষ্টি কর্তা আমাদের জন্য আরো কিছু সুন্দর উপহার দিয়েছেন, আমাদের এই ধরনীতে। সুন্দর করে রোপন করে দিয়েছে আমাদের প্রকৃতিকে। আমরা যেমন নিজেকে ভালবাসতে শিখেছি। তেমনি করে ভালবাসি আমাদের দেশকে ভালবাসি প্রকৃতিকে। আমাদের দেশের রূপ আমাদের চারি পাশের প্রকৃতির সৌন্দর্য যখন দু চোখ ভরে দেখি তখন আর আমার চোখের পলক পড়ে না। দেশের কথা লিখতে গেলে কলমের কালি যেন আর থামেনা। তাই তো দেশকে নিয়ে আমার এই লেখা কবিতা:
তুমি আমার কত আপন কেমন করে বুঝাই
তোমার জন্য হৃদয় আমার কেমন করে সাজাই।
বাংলাদেশ তোমার বুকে যখন আমি মাথা রেখে ঘুমাই
মনে হয় আমার যেন স্বর্গে বসবাস।
তোমার রূপে ঘিরে আছো আমার চারি পাশ।
রাত পোহালে সকাল হলে আখি খূলে দেখি।
তোমার বুকে কত পাখি করছে ডাকা ডাকি।
তোমার রূপে আমি পাগল, পাগল দেশে প্রেমিক
তাই তো তোমায় আমরা সবাই এতো ভালবাসি।
বাংলাদেশ তোমার বুকে হাসি খেলি, তোমার বুকে দাঁড়াই।
তোমার বুকে মাথা রেখে আমরা যখন ঘুমাই।
মনে হয় দেশটা যেনো স্বপ্নপুরী
ভালবাসার রঙে ঘেরা নীল পরী।
তোমার বুকে মাথা রেখে
আমি যেন মরতে পারি।
তুমি আমার খেলার সাথি
তুমি আমার আপন
তোমার জন্য দিতে পারি
জীবনটা যখন তখন।
তুমি আমার কত আপন
কেমনে তোমায় বুঝাই
তোমার জন্য হৃদয় আমার
কেমন করে সাজাই।
ছোট বেলায় খেলতে গিয়ে অযথা অকারনে অনেক ফুল, পাতা বিভিন্ন গাছ নষ্ট করতাম, তখন দেশের প্রতি দেশের মানুষের প্রতি প্রকৃতির প্রতি এতটা মায়া মমতা জাগতনা, কারণ আমার বয়স কম ছিল দশ কিংবা বার দেশের প্রেম আমাকে ছুঁইতে পারে নাই, আমার বাবা ছিল একজন মুক্তিযোদ্ধা দেশের জন্য যুদ্ধ করেছেন। দেশকে নিয়ে যখন বিভিন্ন সময় কাছে ডেকে নিয়ে দেশের বিভিন্ন গল্প শুনাতো আমি তখন খুব বিরক্তি বোধ করতাম। কারণ দেশকে নিয়ে বুঝার আমার বয়স হয়নি তখন। আর এখন যখন পড়া লেখা করতে গিয়ে দেশ সম্পর্কে অনেক কিছু না জানা কথা জানতে পারি, তখন দেশের প্রতি মায়া মমতা আরো বেড়ে যায়। তখন অতীতের ফেলে আসা দিন গুলির কথা মনে পড়ে। হৃদয়কে ভিষন ভাবে নাড়া দেয়। অতীতের যেই খারাপ অভ্যাস গুলো আমার মাঝে ছিল তা আর আজ আমার মাঝে নেই। আজ আমি বয়সের দিক দিয়ে অনেক বড় হয়ে গেছি। অনেক কিছু ভাল মন্দ বুঝতে শিখেছি। এখন আর মা-বাবা, কাকা,দাদুর শুনতে হয়না বকা, মানতে হয়না শাসনের বেড়া জাল। আজ আমি নিজে সচেতন সকল কাজে অটল, এখন আর আমার শাসন নিতে হয়না, উল্টো আমাকে শাসন করতে হয়, আমার দুই ছেলের। এইটাই হয়তো জীবনের পথ চলা এবং জীবনের পরিবর্তন।
আসুন অবশেষে আলোচনার প্রেক্ষাপটে হাতে হাত রেখে পণ করি আমরা সবাই সবাইকে ভালবাসি, ভালবাসব তাহলে আমরা আমাদের দেশকে আমাদের চারি পাশের প্রকৃতিকে ভালবাসতে পারব। আজ যখন লিখতে বসলাম আমার পাশের ঘরের একটি জানালা খোলা আমি কিছুক্ষণ হাতের কলমটা পড়ার টেবিলে রেখে মগ্ন হয়ে দেখেছিলাম আমার বাংলার রূপ, আমার বাংলা যেন এক গুচ্ছ, সিগ্ধ আকাশের ছায়া সবুজ গাছের মায়া। আমার বাংলা যেন ঘন বর্ষায় থৈ, থৈ বৃষ্টিতে নৃত্যের ছন্দের ছোঁয়া। আমার বাংলা যেন সূর্যের আলোয় ঢেকে দেওয়া এক সাদা মেঘের পালক।
আমার বাংলা যেন নানা রঙের ফুলের অপরুপা সাজ। আমার বাংলা যেন হরেক রকমের কিচিরমিচির শব্দে গান গাওয়া পাখি।
আমার বাংলা যেন নদী মাতৃক মায়া মমতায় ভরা হৃদয় ছোঁয়া শান্তি। আমার বাংলা যেন বনহরীণির মতো মায়াবী, রুপসী বন্যা। আমার বাংলা যেন কালো কুকিলের কুহু-কুহু ডাকে মায়াবী কান্না। অতিতের সেই ফেলে আসা দিন গুলির মাঝে আমার বাংলার রুপ, সৌন্দর্য ছিল আমার চোখে বহমান। তখন কার দেখা আর বর্তমানের দেখা এবং বুঝার মাঝখানে অনেক পার্থক্য। এখন যখন বুঝতে শিখেছি বারে বার একটি কথাই মনে পড়েছে। আমার বাংলাকে ভালবাসলে, বাংলার মানুষকে ভালবাসতে পারবো। আপন পর সকল জাতিকে ভালবাসতে পারবো। তাহলে আমাদের সকলের মাঝে থাকবে না হিংসা, বিদ্বেষ, থাকবে না আমাদের মাঝে কাউকে খুন করার চিন্তাভাবনা। ছোট্র একটি কথায় যদি বলি তাহলে বলতে হয় অতীত কে নিয়ে বর্তমান আর বর্তমানকে নিয়েই ভবিষ্যত, তাই বলবো আর জ্বালাও পুড়াও ও ভাংচুর নয়। দেশের সম্পদকে নষ্ট না করে আমরা দেশকে ভালবাসি, দেশের মানুষকে ভালবাসি, আপন পর সব ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে নারী পুরুষ সবাই সবার হাতে হাত, রেখে কাজ করি। দেশের সমাজের ভাল কাজে মনোযোগী হই মন্দ কাজকে বর্জন করি। দেশের সম্পদকে রক্ষা করি। তবে আমরা ভাল থাকতে পারবো।