সিনিয়র ফুটবলে এক হাজারতম ও আর্জেন্টিনার অধিনায়ক হিসেবে শততম ম্যাচে গোল করলেন লিওনেল মেসি। কাতারের আহমাদ বিন আলী স্টেডিয়ামে গতকাল রাতে শেষ ষোলোর ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার জালে গোল উৎসব করেন আর্জেন্টিনার জুলিয়ান আলভারেজও। সকারুরা লড়াই করলেও শেষ পর্যন্ত ২-১ গোলের জয় তুলে নিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে নাম লেখায় দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। এতে আগামী শুক্রবার লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে আর্জেন্টিনা-নেদারল্যান্ডস হাইভোল্টেজ কোয়ার্টার ফাইনালের মঞ্চ তৈরি হলো। গতকাল শেষ ষোলোর প্রথম ম্যাচে যুক্তরাষ্ট্রকে ৩-১ গোলে হারিয়েছে ডাচরা।
গতকাল শুরু থেকেই আর্জেন্টিনাকে হতাশ করতে থাকে অস্ট্রেলিয়ার রক্ষণভাগ। তাদের একাধিক গোল প্রচেষ্টা নস্যাৎ করতে থাকেন সকারু ডিফেন্ডাররা। অবশেষে ৩৫ মিনিটে ডেডলক ভাঙেন মেসি। তার প্রথম প্রচেষ্টা অস্ট্রেলিয়ার ডি বক্স থেকে ফিরে এলেও সেই আক্রমণেই মাটি কামড়ানো শটে আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে দেন তিনি। এটা বিশ্বকাপে মেসির নবম গোল। তবে নকআউটে এ প্রথম। এর আগে কখনই নকআউট পর্বে তিনি গোল করতে পারেননি।
৫৭ মিনিটে ব্যবধান ২-০ করেন আলভারেজ। অস্ট্রেলিয়ার গোলকিপার ম্যাট রায়ানের ভুলে গোলটি করেন ম্যানসিটি ফরোয়ার্ড। ব্যাক পাসের বলটি ঠিকমতো ক্লিয়ার করতে পারেননি রায়ান। সেই ভুলের সুযোগ নিয়ে গোল করেন আলভারেজ। ৭৭ মিনিটে এক গোল পরিশোধ করে অস্ট্রেলিয়া। আজিজ বেহিচের ক্রসে হেড নিলে বল চলে যায় ক্রেগ গুডউইনের কাছে। সেই বলে ২৫ গজ দূর থেকে তিনি যে শট নেন তা বারের অনেক বাইরে দিয়েই চলে যেত, তবে এনজো ফার্নান্দেজের গায়ে লেগে তা আর্জেন্টিনার জালে প্রবেশ করে (২-১)। এর ৫ মিনিট পর আজিজ বেহিচ টুর্নামেন্টের সেরা গোল করতে যাচ্ছিলেন। অবিশ্বাস্য রানিং ও ড্রিবলিং শেষে নিকোলাস ওতামেন্দিকে কাটিয়ে তিনি শট নেন, যদিও শেষ মুহূর্তে লিসান্দ্রো মার্টিনেজ আর্জেন্টিনাকে সেভ করেন। তাতে ২-২ হলো না। নির্ধারিত ৯০ মিনিট শেষে যোগ করা সময়ের সপ্তম মিনিটে অস্ট্রেলিয়ার ১৮ বছর বয়সী গারাং কুয়োলের শট রুখে দেন আর্জেন্টিনার গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্টিনেজ।
বিশ্বকাপে দুইবারের চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। ১৯৭৮ সালে ঘরের মাঠে ও ১৯৮৬ সালে মেক্সিকো আসরে দিয়েগো ম্যারাডোনার জাদুকরী পারফরম্যান্সে ভর করে দ্বিতীয় বিশ্ব মুকুট জয় করে আলবিসেলেস্তেরা। এছাড়া, ১৯৩০, ১৯৯০ ও ২০১৪ সালের রানার্সআপ আর্জেন্টিনা। বিশ্বকাপ ছাড়াও মহাদেশীয় আসর কোপা আমেরিকায় তারা যুগ্মভাবে সর্বোচ্চ ১৫ বারের চ্যাম্পিয়ন ও ১৪ বারের রানার্সআপ, পাঁচবারের তৃতীয় স্থানধারী ও দুইবারের চতুর্থ স্থানধারী।
এর আগে গতকাল আল রাইয়ানের আল থুমামা স্টেডিয়ামে শেষ ষোলোর প্রথম ম্যাচে কর্তৃত্ব করেই জিতেছে নেদারল্যান্ডস। দশম মিনিটে ডাচদের এগিয়ে দেন মেম্ফিস ডিপাই। ডাচ রক্ষণ থেকে আক্রমণের শুরু। সম্মিলিত আক্রমণের পর ডান প্রান্ত থেকে ডেনজেল ডামফ্রাইস পুল ব্যাক করলে ডিপাই জোরালো শটে লক্ষ্যভেদ করেন। সব মিলিয়ে ২০ পাসে এ গোলটি করে ডাচরা।
প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ের প্রথম মিনিটে গোল ব্যবধান দ্বিগুণ করেন ড্যালি ব্লিন্ড। এটা যেন প্রথম গোলেরই কার্বন কপি। ডান প্রান্ত দিয়ে ডামফ্রাইসের করা পুল ব্যাকে বল পেয়ে মাটি কামড়ানো শটে লক্ষ্যভেদ করেন ম্যানইউর সাবেক ডিফেন্ডার ব্লিন্ড। গোলের পর তার আনন্দই বলছিলাম, ডাচরা এখন নিরাপদ। হলোও তাই।
৭৬ মিনিটে এক গোল পরিশোধ করে যুক্তরাষ্ট্র। ক্রিস্টিয়ান পুলিসিকের পাস থেকে গোল করে ব্যবধান কমান স্ট্রাইকার হাজি আমির রাইট। চলতি আসরে অঘটনের পর অঘটন হয়েছে। তাই যুক্তরাষ্ট্রের ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছিল। যদিও ৮৩ মিনিটে সেই ডামফ্রাইস যুক্তরাষ্ট্রের সব আশা শেষ করে দেন। ড্যালি ব্লিন্ডের ক্রসে ভলি করে দুর্দান্ত এক গোল করেন তিনি। এ গোলে ২০০২ সালের পর আমেরিকানদের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার স্বপ্নও শেষ হয়ে যায়।
ডামফ্রাইস-ব্লিন্ড যুগলবন্দিতে এটা ডাচদের দ্বিতীয় গোল। প্রথমে ব্লিন্ডকে দিয়ে গোল করান ডামফ্রাইস, এরপর ডামফ্রাইসকে দিয়ে করান ব্লিন্ড। ডাচদের প্রথম গোলটিতেও অ্যাসিস্ট করেন ডামফ্রাইস। সব মিলিয়ে ২৬ বছর বয়সী এ রাইট ব্যাকই ডাচদের জয়ের নায়ক।
নেদারল্যান্ডস ‘এ’ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে ও যুক্তরাষ্ট্র ‘বি’ গ্রুপ রানার্সআপ হিসেবে নকআউট পর্বে ওঠে। বিশ্বকাপে এ প্রথম নেদারল্যান্ডস-যুক্তরাষ্ট্র লড়াই হলো। তাতে ডাচদের সঙ্গে আমেরিকানরা পেরে উঠল না। এর আগে পাঁচটি প্রীতি ম্যাচে মুখোমুখি হয় দল দুটি, যাতে ডাচরা চারটিতে ও আমেরিকানরা একটিতে জিতেছে।
১৯৭৪, ১৯৭৮ ও ২০১০ বিশ্বকাপ ফাইনালে পরাজিত ডাচরা রাশিয়া বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পায়নি। লুই ফন গালের অধীনে এবার আলো ছড়াচ্ছে অরেঞ্জ আর্মিরা। যদিও গ্রুপ পর্ব ও শেষ ষোলো শেষে এবার অগ্নিপরীক্ষায় পড়তে যাচ্ছে ডাচরা।