এ বছর কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে এইচএসসির ফলাফলে ইংরেজি বিষয়ে ফলাফল বিপর্যয় শিক্ষা সচেতন সকলকেই ভাবিয়ে তুলেছে। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে মানসম্মত উত্তরপত্র মূল্যায়ন নিয়ে। মানসম্মত পরীক্ষক দিয়ে যদি উত্তরপত্র মূল্যায়ন করা না হয় তবে এর খেসারত দিতে হয় ছাত্র-ছাত্রীদের। তারই একটি নমুনা ফেসবুকের পাতা থেকে তুলে ধরা হলো।
চাঁদপুর পুরানবাজার ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ রতন কুমার মজুমদারের ফেসবুকের একটি পোস্ট ইতোমধ্যে ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। যা শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ভাবিয়ে তুলেছে। এমন যদি হয় পরীক্ষকের মান, তবে অনেক ছাত্র-ছাত্রীর শিক্ষা জীবন অঙ্কুরেই শেষ হয়ে যাবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং কুমিল্লা বোর্ড কর্তৃপক্ষ এর দায় কি এড়াতে পারেন? রতন কুমার মজুমদারের ফেসবুক পোস্ট এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মন্তব্য পাঠকদের জন্যে তুলে ধরা হলো :
“স্ট্যাটাস : আমার মেয়েটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খ ইউনিটে চান্স পেলো। কুমিল্লা বোর্ডের ইংরেজি পরীক্ষকের দায়িত্বে অবহেলা ও খামখেয়ালিপনার কারণে তার উপর দিয়ে যে ঝড় বয়ে গেছে তা কাটিয়ে উঠে সে আবার নিজেকেই প্রমাণ করলো। ছোটবেলা থেকেই তার ইচ্ছে ছিল ইংরেজি সাহিত্য পড়বে। নিজেকে তৈরিও করেছিল সেভাবে। কিন্তু এ বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পরীক্ষকের খামখেয়ালিপনা তাকে বিপর্যস্ত করে ফেলে। ইংরেজি ২য় পত্রে ৮০, ১ম পত্রে ৩৩ নাম্বার। কী পরিমাণ আন্ডারমার্কিং হলে এমনটা হতে পারে আমার বোধগম্য নয়। যেহেতু রিএঙ্ামিনের কোনো সুযোগ নেই তাই পরীক্ষকের খামখেয়ালিপনার কাছে তাকে হার মানতে হলো। সেদিনই সে বলেছিলো, এর জবাব আমি দেবো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে। সে তা-ই করে দেখালো। ঢাবির ভর্তি পরীক্ষায় ইংরেজি ২৫ নাম্বারে সে পেয়েছে ২১ নাম্বার। সেদিন এই মেয়েটি হতবাক করার মতো রেজাল্ট (৩৩ নাম্বার) দেখে কষ্টের হাসি দিয়ে বলেছিলো, ‘স্যার আমি এর জবাব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে দেবো। যদি রিএঙ্ামিনের সুযোগ থাকতো তাহলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস আমি ৮০ পাবো। তো যাই হোক, আমি তো পাস করেছি। আমার অনেক সহপাঠী তো ইংরেজি ১ম পত্রে ফেল করেছে। তাদের জীবন থেকে তো একটি বছর চলে গেলো পরীক্ষকের খামখেয়ালিপনার কারণে। সেদিন সে আরো বলেছিলো, আমি হয়তো বিসিএস দেবো, ভাগ্য হয়তো আমাকে অনেক উপরে নিয়ে যাবে। কিন্তু আমার মার্কশীটে তো ৩৩ নাম্বার থেকে যাবে। এটি তো আমার জন্যে অনেক কষ্টের, বেদনার। আর কোনো শিক্ষার্থীর ভাগ্যে যেনো এমন দুর্ঘটনা না ঘটে কোনো পরীক্ষকের খামখেয়ালিপনার কারণে।
এ মেয়েটির অভিভাবক হিসেবে কুমিল্লা বোর্ড কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি থাকবে, এ রকম অপদার্থ, অযোগ্য, মস্তিষ্ক বিকৃত ইংরেজি শিক্ষককে যেনো আর পরীক্ষক বা প্রধান পরীক্ষক করা না হয়। সারা জীবনের একজন ছাত্র-ছাত্রীর প্রচেষ্টা এই সমস্ত অযোগ্য ইংরেজি শিক্ষকের কারণে শেষ হয়ে যেতে পারে। (ইংরেজি শিক্ষকদের সাতকাহন পরে লিখবো)।
তার জীবনের আরেকটি অধ্যায় শুরু হলো। কোলে পিঠে করে ওরে গড়ে তুলেছি। পূজোর সময় জন্ম বলে তার নাম রেখেছিলাম পূজা।”
এই স্ট্যাটাসে বিভিন্নজনের মন্তব্য :
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান জনাব আবদুল মান্নান স্যারের মন্তব্য ছিল এমন-
Anupam Roy : যতদিন পর্যন্ত না সংশ্লিষ্ট অযোগ্য শিক্ষকের দেখা না মিলবে (অর্থাৎ ওই পরীক্ষকের নাম প্রকাশ না করবে) ততোদিন ‘কুমিল্লা বোর্ড’ এজন্যে দায়ী থাকবে। জানা মতে একই কলেজ থেকে ইংরেজিতে অনেকেই এই অবিচারে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাই কুমিল্লা বোর্ড কর্তৃপক্ষ চাইলেই ওই শিক্ষককে খুঁজে বের করতে পারেন। আজ দুর্গা পূজার শুরু। অসুরবিনাশিনী দশভূজা আমাদের সন্তানদের কল্যাণ করুন। আমাদের মামণি সাহসিকা তোমার জন্যে অতলান্ত আশীষ।
Asit Baran Das : অভিনন্দন ও শুভ কামনা। আশা করি বোর্ড কর্তৃপক্ষ এসব ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখবেন যাতে আর কোনো শিক্ষার্থীর জীবন নষ্ট না হয়। কারণ এটা বোর্ডের ভাবমূর্তি নষ্টের একটা চক্রান্তও হতে পারে ।
Md Mohiuddin : যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডমিশনে ২৫ এ ২১ পেতে পারে, সে বোর্ড পরীক্ষায় ১০০ তে ৩৩ পাওয়াটা হাস্যকর বটে। ঠিকই বলেছেন স্যার। কিছু অপদার্থ নামধারী শিক্ষকের কারণে অনেক ছেলে-মেয়ের জীবন থেকে এবার একটি বছর হারিয়ে গেলো। ঢাবিতে চান্স পাওয়ার জন্যে অভিনন্দন।
Shahriar Polash : স্যার, পূজার কাছে একটি কথাই বলার আছে। ক্ষমা চাইছি, পূজা। এটা আমাদের সম্মিলিত ব্যর্থতা। আমরা তোমার মেধাকে পঙ্গু করে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তুমি প্রমাণ করেছো, আমাদের মানসিক পঙ্গুত্ব তোমার মেধাকে আটকাতে পারেনি।
Biplob Majumder : ফুলে সৌরভ থাকলে ছড়াবেই। তবে ফুল ফোটার আগেই যদি মুকুল নষ্ট করা হয় তবে কী হবে? কেন এ অবহেলা? কেন এ কা-জ্ঞানহীন অপকর্ম? কারণ অনুসন্ধান জরুরি এবং তদন্ত করে খুঁজে বের করা দরকার, এ অপকর্মের মূল হোতা কে? যারা সম্ভাবনাকে ধ্বংস করতে দায়িত্বে অবহেলা করে। বিপরীত অন্য কিছুওতো ঘটতে পারতো। তার দায় কে নিতো? অতএব অবহেলা নয়। ভবিষ্যতের স্বার্থে এ ধরনের অপকর্মকারী দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যক্তির এ ধরনের পেশায় থাকার অধিকার নেই।
Rudro Saiful : আহা আমাদের কন্যা, অনেক অনেক ভালোবাসা মায়ের জন্য; শুভ কামনা রইল। সে সাথে জন্মদিনের শুভেচ্ছা। শুভ জন্মদিন। সু-স্বাস্থ্য, দীর্ঘায়ু হোক। সাফল্যময় উজ্জ্বল ভবিষৎ হোক-এ দোয়া করি।
Monirul Islam Monu : যোগ্যদের আটকে দেয়া যায় না। ওর জন্যে অভিনন্দন। পূজাকে বিজয়ের শুভেচ্ছা।
Mostafa Zaman Swapon : Welcome and heartfelt congratulations to my Department মামণি। You will get the best teachers. A new horizon is going to be opened.
Ferdousi Khanm Rojy : পরীক্ষকদের খামখেয়ালিপনার শিকার অনেক স্টুডেন্ট, এর কোনো প্রতিকার নেই : (শুভ কামনা মেয়ের জন্য)।
Nur Islam Khan Osi : ঐ পরীক্ষকের দোষ অথবা অন্য কোনো কারণ আছে কিনা তা আদালতের মাধ্যমে সমাধান করা উচিত।
Riton Das : পূজাকে অভিনন্দন ও শুভ কামনা । আশা করি বোর্ড কর্তৃপক্ষ এসব ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখবেন, যাতে আর কোনো শিক্ষার্থীর জীবন নষ্ট না হয়।
Albert Newton : God bless puja…জিপিএ কাউকে কিছু দেয় না, কিছু কেড়ে নিতেও পারে না। আগামী দিনগুলো সুন্দর হোক।
Mahafuz Alam Sarker : দায়িত্বজ্ঞানহীন কিছু কুলাঙ্গারের অসততার কারণে বেশ কিছু ছাত্র-ছাত্রী আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে এবং অনেকের শিক্ষা জীবন পঙ্গু হয়েছে।
Hafizur Rahman Dulu : পূজার মানসিক যন্ত্রণার দায়ভার বহনকারী সেই অপদার্থ শিক্ষকের পরিচয় বের করা গেলে ভালো হতো।
Sumona Akter Lily : শুভ কামনা। যে পাথরে আগুন জ্বলে সে পাথর অতল সমুদ্রে থাকলেও ভেসে উঠবে। এটাই হবেই।
Bimal Kanti Dey : পূজার জন্য শুভ কামনা। কিন্তু কুমিল্লা বোর্ডের পরীক্ষকের কিছু হবে না। এই ঘটনার কথা অন্য কেউ মনেও করবে না। মনে করবে শুধু ভুক্তভোগী।
Ranjit Kumar Datta : পূজা মা মণির জন্য শুভ কামনা। প্রতিষ্ঠিত হবেই। তোমার দ্বারা সম্ভব। মনের জেদ তোমাকে অনেক দূরে নিয়ে যাবে। নিন্দা জানাই ঐ Examiner লোকটিকে ।
Ananta Kumar Mondal : শিক্ষক নামের কুলাঙ্গারটির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে মানসিক যন্ত্রণা থেকে জাতি মুক্তি পাবে না ।
Abu Zafar : এ রকম অপদার্থ, অযোগ্য, মস্তিষ্ক বিকৃত ইংরেজি শিক্ষককে যেন আর পরীক্ষক বা প্রধান পরীক্ষক করা না হয়। সারা জীবনের একজন ছাত্র-ছাত্রীর প্রচেষ্টা এই সমস্ত অযোগ্য ইংরেজি শিক্ষকের কারণে শেষ হয়ে যেতে পারে।