মাহমুদ আজহার
এক হাজারের বেশি নেতা-কর্মী জেলে মামলা ২৬ হাজার
কারাগারে ভালো নেই বিএনপি নেতারা। দীর্ঘদিন ধরেই কারান্তরীণ দলের হাই প্রোফাইলের বেশ কয়েকজন নেতা। তাদের একেকজনের বিরুদ্ধে অন্তত ডজন খানেক মামলা রয়েছে। একইভাবে বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার হয়ে সারা দেশে আরও অন্তত সহস্রাধিক নেতা-কর্মী কারাগারে রয়েছেন। এ ছাড়া প্রায় ২৬ হাজার মামলায় জর্জরিত বিএনপির অন্তত ৫ লাখ নেতা-কর্মী। এখনো হুলিয়া নিয়ে নেতা-কর্মীদের অনেকেই আত্মগোপনে।
বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত হয়ে বিএনপির প্রভাবশালী নেতাদের মধ্যে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস সালাম পিন্টু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু ও ব্যবসায়ী নেতা গিয়াসউদ্দিন আল মামুন কারাগারে অন্তরীণ। এর মধ্যে সাকা চৌধুরী মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি।নেতা-কর্মীদের কারান্তরীণ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘মিথ্যার ওপর ভিত্তি করে লাখ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় অনেককে কারাগারেও পাঠানো হয়েছে। শুধু রাজনৈতিকভাবে হয়রানির জন্যই এটা করা হয়েছে। সামগ্রিকভাবে দেশে এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আজ বিরোধী মত ও পথের মানুষকে সভা-সমাবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। গণতান্ত্রিক অধিকারকে সম্পূর্ণভাবে অগ্রাহ্য করা হচ্ছে। এর পরিণতি শুভ হবে না।’বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার জানান, সারা দেশে প্রায় ২৬ হাজার মামলা দায়ের হয়েছে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। এতে আসামি করা হয়েছে অন্তত ৫ লাখ নেতা-কর্মীকে। এসব মামলায় অনেকেই কারাগারে রয়েছেন। সব মামলাই ‘মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে দাবি করেন তিনি। জানা গেছে, নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া বেশির ভাগ মামলা ‘রাজনৈতিক।’ বিশেষ করে বিগত ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে এসব মামলা দায়ের করা হয়। অবশ্য কেউ কেউ দুর্নীতি কিংবা অন্য মামলায়ও কারাগারে রয়েছেন। তবে দেশের বিভিন্ন জেলার কারাগারে থাকা নেতা-কর্মীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা করতে পারেনি বিএনপি। তবে তাদের পক্ষে আইনি লড়াইয়ে বিএনপির ‘লিগ্যাল এইড কমিটি’ কাজ করছে। এ প্রসঙ্গে দলের সহ-দফতর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনি বলেন, প্রতিদিনই নতুন নতুন মামলায় অনেকে গ্রেফতার হচ্ছেন। আবার কেউ কেউ জামিন নিয়ে বের হচ্ছেন। তাই কারাগারে থাকা নেতাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করা কষ্টকর। তারপরও বিভিন্নভাবে কারাগারে থাকা নেতা-কর্মীদের খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। প্রায় নয় মাস ধরে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অর্থপাচার মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন কারাগারে অন্তরীণ। তাকে গ্রেফতার করা হয় চলতি বছরের ১২ মার্চ। তিনি বর্তমানে কাশিমপুর কারাগার পার্ট-২-তে রয়েছেন। ড. মোশাররফের পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, বিভিন্ন কাগজপত্রের অজুহাত দেখিয়ে বার বার জামিন চেয়েও পাওয়া যাচ্ছে না। কারাগারে লেখালেখি করে আর বই পড়েই সময় কাটছে বিএনপির প্রভাবশালী এই নেতার। মহান মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীকে ফাঁসির আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। সীতাকুণ্ডে হরতালে গাড়ি পোড়ানোসহ নাশকতার মামলায় ২০১০ সালের ১৬ ডিসেম্বর সাকা চৌধুরীকে গ্রেফতার করা হয়। পরে ১৯ ডিসেম্বর একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। তার যুদ্ধাপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডের আদেশের বিরুদ্ধে করা আপিলের এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা ও ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার আসামি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের প্রভাবশালী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর। এর মধ্যে ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে লুৎফুজ্জামান বাবরকে। বর্তমানে তিনি কাশিমপুর কারাগারে অন্তরীণ। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে গ্রেনেড হামলা মামলায় কারাগারে অন্তরীণ বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস সালাম পিন্টু। একই মামলায় তার ভাই মাওলানা তাজউদ্দিনও আসামি হয়ে কারাগারে রয়েছেন।বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় ২০০৯ সালে গ্রেফতার হন বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু। এতে নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টুর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী বিডিআর জওয়ানদের পালিয়ে যেতে সহযোগিতার অভিযোগ আনা হয়। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে বোমা হামলার অভিযোগে ২০০১ সালের ১৭ জুন মামলা করা হয়। এ মামলায় আবদুস সালাম পিন্টুকে গ্রেফতার দেখানো হয় ২০০৯ সালের ৯ নভেম্বর। বর্তমানে তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে অন্তরীণ রয়েছেন। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ২০০৭ সালের ৩০ জানুয়ারি যৌথবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন তারেক রহমানের বন্ধু আলোচিত ব্যবসায়ী গিয়াসউদ্দিন আল মামুন। এরপর তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, অর্থপাচার, করফাঁকিসহ বিভিন্ন অভিযোগে ২০টিরও বেশি মামলা হয়। বর্তমানে তিনি কাশিমপুর কারাগারে রয়েছেন। বিএনপির গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, ‘বিএনপি নেতা-কর্মীদের রাজনৈতিক মামলায় জড়িয়ে কারাগারে নেওয়া হচ্ছে। ন্যায়বিচার হলে কোনো মামলারই ভিত্তি থাকবে না।’
সূত্র– বাংলাদেশ প্রতিদিন –২৩/১২/১৪