শওকত আলী ঃ
বর্তমান সরকারের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি চাঁদপুর জেলা কমিটি গত এক বছরে তিনবার আহবায়ক কমিটি দিলেও সম্মেলন করতে পারেনি। আগামী নির্বাচনকে ঘিরে দল গোচানোতো দূরের কথা অন্তকোন্দলে জড়িয়ে পড়ছে শীর্ষ পর্যায়ের কিছু নেতা। নিজেদের মাঝে গ্রুপিং, মতের অমিল এবং অনৈক্য প্রকট আকার ধারণ করেছে। দলটির অভ্যান্তরে সৃষ্টি হয়েছে হ-য-ব-র-ল অবস্থা। আর তাই হতাশ এবং নিষ্কৃয় হয়ে পড়েছে স্থানীয় বেশির ভাগ নেতা কর্মী। যদিও এখনো তৃণমূল পর্যায়ের অনেক নেতা কর্মী আশায় বুক বেধে অপেক্ষার প্রহর গুণছেন সু-সময়ের। যখন সবাই কোন্দল ভুলে এক বৃন্তে এসে দল ও দেশের স্বার্থে কাজ করার প্রতিজ্ঞা করবেন।
চাঁদপুর জাতীয় পার্টি কার্যলয় সূত্রে জানা যায়, গত ২০০২ সালে মাহাবুব পাটওয়ারীকে সভাপতি ও মিজানুর রহমান খানকে সাধারণ সম্পাদক করে একটি কমিটি করা হয়। ২০০৫ সালে সভাপতি মাহাবুব পাটওয়ারী মারা যাওয়ায় সিনিয়র সহ-সভাপতি নূরুল হক বাচ্চু মিয়াজী ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তারপর ২০০৯ সালে সভাপতি নূরুল হক বাচ্চু মিয়াজী ও সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান খান নির্বাচিত হন। কমিটি গঠনের পর দীর্ঘ ৭ বছরেও এ কমিটি একটি মিটিং করতে পারেনি। যার অন্যতম কারণ সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান খান ঢাকা বসবাস করেন। তিনি সময় না দেয়াতে জাতীয় পার্টির উল্লেখযোগ্য কোনো কর্মকান্ড করতে দেখা যায়নি। এ কমিটি তিন বছরের স্থলে ৭ বছর পদ দখল করে থাকলেও সম্মেলন করতে ব্যর্থ হওয়ায় কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। পরে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে নুরুল হক বাচ্চু মিয়াজীকে আহবায়ক করে ৬৯ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করে দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। যদিও সদস্য সচিব পদে কাউকে কোনো প্রকার দায়িত্ব দেয়নি। এর একমাস পর অর্থাৎ ২০১৬ সালের মার্চ মাসে চাঁদপুর জেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সহ-সভাপতি আবদুল মান্নান শেখকে আহবায়ক ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক সেই মিজানুর রহমান খানকে সদস্য সচিব করা হয়। তখন থেকে একবছর তিন মাস পর অর্থাৎ গত ২৭ মে ২০১৭ তারিখে নতুন আরেকটি আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এ কমিটিতে ঢাকায় বসবাসকারী মিজানুর রহমান খানকে আহবায়ক ও শওকত আখন্দ আলমগীরকে সদস্য সচিব করে ৫৯সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। যদিও এ কমিটিকে সানন্দে গ্রহণ করতে পারেনি চাঁদপুর জাতীয় পার্টির তৃণমূল কর্মীরা। বিশেষ করে মিজানুর রহমান খানকে উদ্দেশ্য করে কটাক্ষ করছেন অনেক ত্যাগী নেতা কর্মী। তিনি বছরের মধ্যে ১০দিনও চাঁদপুরে অবস্থান করেন না। মোদ্দাকথা, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন এবং কেন্দ্রীয় জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান এমরান হোসেন মিয়া প্রকাশ্যেই গ্রুপ তথা ব্লক তৈরি করতে উঠে পড়ে লেগেছে। যা ভবিষ্যৎ জাতীয় পার্টি চাঁদপুরকে সাংগঠনিক ভাবে দূর্বল হওয়ার অন্তরায় হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কর্মী জানান, আমরা এখন মুরব্বিহীন হয়ে পড়েছি। আমরা চাঁদপুরের ত্যাগী প্রবীন নেতাদের কাছে কৃতজ্ঞ ও ঋণী। অথচ ঢাকায় অবস্থানরত দুই নেতার ব্যক্তিস্বার্থের কারণে তাদের কৃতজ্ঞতার সাথে বিদায় জানানো সম্ভব হয়নি। যা অত্যান্ত দুঃখজনক।
চাঁদপুর সদর উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক এড. মহসীন খান জানান, দীর্ঘদিন সম্মেলন না হওয়ায় আমার প্রিয় এ দলটিতে বিশৃংখলা সৃষ্টি হয়েছে। যা নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া জরুরী হয়ে পড়েছে। আমরা বিশ্বাস করি চাঁদপুরের শীর্ষ নেতারা এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবেন।
বর্তমান জাতীয় পার্টির আহবায়ক মিজানুর রহমান খানকে কয়েক দফায় যোগযোগ করার চেষ্টা করা হলেও সম্ভব হয়নি।
জাতীয় পার্টির সাবেক আহবায়ক আবদুল মান্নান শেখ জানান, আমি শারীরিক ভাবে অসুস্থ্য হওয়ার কাজ করতে পারি না। তাই অব্যাহতি নিয়েছি। খুব বেশি অসুস্থ্য হওয়ায় দলের খোঁজ খবরও নেয়া সম্ভব হয় না।
চাঁদপুর জেলা জাতীয় পার্টিও প্রবীণ নেতা ও সাবেক সভাপতি নুরুল হক বাচ্চু মিয়াজীর সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলেও অসুস্থ্যতার কারণে তিনি কথা বলতে পারেননি।
এমরানের সাথে কোন্দল প্রসঙ্গে বলেন কেন্দ্রীয় জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান জানান, ওর সাথে আমার কিসের দ্বন্দ? ওর সাথে আমার লেভেল মিলে না। সেহেতু ওর সাথে আমার দ্বন্দ্ব হওয়ার প্রশ্নই আসে না। চাঁদপুর জাতীয় পার্টির কমিটি প্রসঙ্গে বলেন, কাউকে দায়িত্ব দিলে কেউ যদি কাজ না করে তাহলে আমাদের কি করার আছে? তাহলেতো বিকল্প চিন্তা করতেই হবে। ঈদের পরে বর্তমান আহবায়ক কমিটিকে মিটিং করে দ্রুত সম্মেলন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যদিও বর্তমানে রাজনৈতিক পরিবেশ না থাকার কারণে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে।
শিরোনাম:
বৃহস্পতিবার , ২৮ মার্চ, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ , ১৪ চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।