স্টাফ রিপোর্টার:॥
সরকারি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে দপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সহযোগিতা করার কথা থাকলেও চাঁদপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে তার উল্টো। সরকারি গুরুত্বপূর্ণ এ দপ্তরে সেবা নিতে আসা গ্রাহকরা হয়রানির শিকার হন এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন, নবায়ন ইত্যাদি কাজ ছাড়া কোন সেবা গ্রহিতা এ দপ্তরে আসেন না। একান্ত প্রযোজনেই আসা শহর ও গ্রামাঞ্চের মানুষ এ দপ্তরের কিছু কর্মকর্তা ও দালালের খপ্পরে পড়ে দীর্ঘ জটিলতার মধ্যে পড়ছেন। তবে সাধারণ মানুষ এসব বিষয়ে প্রতিবাদ না করলেও কেউ কেউ প্রতিবাদ করে সেবা নিচ্ছেন। কিন্তু মূল সমস্যা থেকেই যাচ্ছে। এর মধ্যে অধিক হয়রানির শিকার হন বিদেশগামী গ্রামাঞ্চলের সহজ সরল লোকজন।
চাঁদপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে সরেজিমন একাধিকবার পর্যবেক্ষণ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেবা গ্রহিতাদের ক্ষোভ এবং সেবা নিতে আসা অনেকের সাথে আলাপ করে জানাগেছে, পাসপোর্ট আবেদন করার জন্য এ অফিসে যে সব কর্মকর্তা রয়েছেন এবং যারা সংশ্লিষ্ট কাজগুলো করেন, তাদের মধ্যে অনেকেই এসব হয়রানি করেন। আবেদন ফরমে সামান্য ভুল হলেও বিষয়টি সেবার মনমানসিকতা নিয়ে না বলে ভিন্ন ভঙ্গিতে আচরণ করেন। আবার টাকা দিলে সব ভুলই মুহুর্তে ঠিক হয়ে যায় এমন অভিযোগ সেবা গ্রহিতাদের। এ অফিস দালালমুক্ত এবং দূর্নীতিমুক্ত বলা হলেও সব কাজ চলে নিরবে। অফিস সময়ের মধ্যে দুপুর পর্যন্ত দালালদের আনাগোনা দেয়ালের বাহিরে থাকলেও দুপুরের পরে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে দালালদের কাজের ডেলিভারি। এ সময় দালাল চক্র ও এ অফিসের অসাধু কর্মকর্তারা সেবা গ্রহিতাদের কাছ থেকে ১হাজার ২শ’ থেকে শুরু করে অধিক অংকের টাকা নিয়ে কাজ করেন।
অনেক সেবা গ্রহিতা জামেলা ও হয়রানির কারণে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে পাসপোর্ট করেন। কর্মকর্তাদের নিযুক্ত দালাল চক্র গ্রাম থেকে আসা সাধারণ মানুষকে অফিসে প্রবেশের পূর্বেই বলেন, আমাদের মাধ্যমে পাসপোর্ট করালে হয়রানি শিকার হবেন না। আর না হয় অনেক জামেলায় পড়বেন। এভাবে চলে তাদের অর্থ বাণিজ্য।
গত ৭ ডিসেম্বর চাঁদপুর সদরের একজন প্রভাষক সালেহ উদ্দিন জিন্নাহ তার ব্যাক্তিগত ফেসবুকে চাঁদপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সেবার চিত্র তুলে ধরেন। যা তুলে ধরা হলো: “পাসপোর্ট অফিসে যারা চাকরি করে তারা কি মানুষ? আমার পাসপোর্টের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় নিয়ম জানতে চাঁদপুর পাসপোর্ট অফিসে আজ ৭.১২.২০১৭ তারিখে গেলাম। আমার সংগী ২ জন শিক্ষক বললেন স্যার আমরাও হজ্বের উদ্দেশ্যে পাসপোর্ট করবো, কাগজ পত্র রেডি চলুন। আমাকে এক সাংবাদিক ছোট ভাই বলল জিন্না ভাই এখন পাসপোর্ট অফিসে হয়রানি নেই। অনেক লেখালেখির পর এলআর ফান্ডের টাকা নেওয়া বন্ধ। আমি খুশি হলাম। আমার ২ সহকর্মী লাইনে দাঁড়িয়ে জমা দিলেন। ১ জনকে ছবি তুলতে পাঠালেন ১০৬ নং রুমে, অন্যজনকে ২০৮ নং রুমে। ২০৮ নং রুমের অফিসার জানালেন আপনার পেশা ভুল লিখেছেন। ঠিক করে নতুন ফরমে লিখে আনুন। বুঝে আসল না। একই সাথের শিক্ষক, একই পেশা (প্রাইভেট সার্ভিস) লেখা। ১ জনেরটা গ্রহন করলেন আরেকটা ফেরত দিলেন। উনি ফেরত আসার পর এক ভদ্রলোক বললেন নির্দিষ্ট পরিমান টাকা দিলে কোন প্রকার ভুল ধরবে না। আমি বিশ্বাস করলাম না। পাশ থেকে একজন বললেন ‘আমার তিনবার ভুল ধরেছে। পরবর্তিতে ২৫০০ টাকা বেশি দিয়ে আজ জমা দিলাম। আরো কয়েকজন এরকম বললেন। শেষে আমি শিক্ষকের হয়রানি কমাতে নিজে ২০৮ নং রুমে গেলাম। উনি খুব রাগ করলেন বললেন একজন শিক্ষককে কতবার বুঝাতে হয়! আমি বললাম এ ছাড়া অন্য কোন ভুল আছে কিনা? উনি বললেন সেটা আবার রবিবার আসলে বলা যাবে। কথার ঢংয়ে মনে হল উনার কাছে একজন শিক্ষক মানে নিকৃষ্ট জন্তু। আমরা বড় কর্তার রুমে গেলাম, এজন্য যে একি লেখা, একি পেশা একজনের হয়, অন্য জনের কেন নয় ? উনি ব্যস্ততা দেখালেন যে নামাজ পড়ব পরে আসেন। অনুরোধ করে বলতে যাব এমন সময় একজন ধমক দিয়ে বললেন, একজন অফিসার না করেছে তার পর আবার আরেক অফিসারের কাছে নিয়ে আসলেন কেন? বড় কর্তা বললেন উনি যা বলেছে তা করেন। আমরা থ হয়ে গেলাম। প্রশ্ন একটাই এই ঘুষখোরদের নামাজ কি লোক দেখানো?” সালেহ উদ্দিন জিন্নাহ এর ফেসবুকের এ স্টাটাসে বিভিন্ন পেশার লোকজন কমেন্টস্ করেন এবং তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করতেও দেখাগেছে। যাদের মধ্যে অনেকেই সচেতন এবং শহরের বাসিন্দা।
এ বিষয়ে সালেহ উদ্দিন জিন্নাহ এ প্রতিবেদককে বলেন, আমি ফেসবুকে যা লিখেছি তা আমার কাছে প্রমাণ আছে এবং আদালতে বিচারকের কাছেও দাঁড়িয়ে বলতে পারবো। খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, বর্তমানে অত্র অফিসের উপ-পরিচালক মুনতাকিম মোঃ ইব্রাহীম বদলী হয়েছেন। তবে সহকারী উপ-পরিচালকই এ পদের দায়িত্ব পালন করেন, তিনিও এসেছেন অল্পকিছুদিন পূর্বে। যোগাযোগ করেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. মাসুদ হোসেন এর সাথে এ বিষয়ে কথা হয়, তিনি জানান সরকারি সকল দপ্তরের সেবা গ্রহন ও কোন সমস্যা হলে ওই অফিসের প্রধানই সমাধান করবেন। তারপরেও যদি কোন সেবা গ্রহিতা জেলা প্রশাসক এর নিকট অভিযোগ করেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসক ওই দপ্তর প্রদানের অভিযোগের জবাব চাইতে পারেন।