ফরিদ উদ্দিন আহমেদ
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কিছুটা কমে এলেও এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বর্ষা মৌসুম শুরুর পর থেকেই ঢাকাসহ সারা দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হয়। মশাবাহিত এই ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ৪০ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আক্রান্ত হয়ে
এ পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন প্রায় ৯ হাজার ডেঙ্গু রোগী। আগস্ট মাসে জুলাই মাসের চেয়ে তিনগুণের বেশি ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আগস্টে ২৫ দিনে ৬ হাজার ১৯৫ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। এক জরিপে দেখা গেছে, এডিস মশার ঘাঁটি মগবাজার, ইস্কাটন, বাসাবো ও গোড়ান এলাকায়। এই অবস্থায় স্বাস্থ্য বিভাগ এই রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসায় আলাদা হাসপাতাল নির্ধারণ করেছে।
কিন্তু দু-একটি ছাড়া বেশির ভাগ হাসপাতাল সম্পর্কে জানেন না রোগী ও তার স্বজনরা। তাছাড়াও এসব হাসপাতালে সেরকম চিকিৎসার যন্ত্রপাতিও নেই। গুরুতর অসুস্থ এসব হাসপাতালে চিকিৎসার সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে জনমনে। তাহলে কেন ডেঙ্গুর জন্য ডেডিকেটেড এসব হাসপাতাল।
ডেঙ্গু ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলো হচ্ছে-ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল, মিরপুরের লালকুঠি হাসপাতাল, রেলওয়ে হাসপাতাল, টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতাল, আমিনবাজার ২০ শয্যা হাসপাতাল এবং কামরাঙ্গীরচর ৩১ শয্যা হাসপাতাল।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোল রুম সূত্র জানায়, ডেঙ্গু ডেডিকেটেড হাসপাতাল ঘোষণা করলেও মিরপুরের লালকুঠি হাসপাতাল, রেলওয়ে হাসপাতাল, আমিনবাজার ২০ শয্যা হাসপাতাল এবং কামরাঙ্গীরচর ৩১ শয্যা হাসপাতালে এখনো ডেঙ্গু রোগী ভর্তির তথ্য নেই। রোগীরা জানেন না তাই সেখানে যাচ্ছেন না। ফলে রোগী ভর্তির তথ্যও আসে না। অন্যদিকে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল, টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা হচ্ছে। তার তথ্যও আসছে কন্ট্রোল রুমে।
ডেঙ্গু ডেডিকেটেড হাসপাতাল ঘোষণা হয়েছে কিন্তু রোগী নেই, মানুষ জানেন না- এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. ফরিদ হোসেন মিয়া মানবজমিনকে বলেন, ওই হাসপাতালগুলো পুরোপুরি প্রস্তুত না। এগুলো প্রস্তুত করতে পারিনি। তাছাড়া জনবলেরও সংকট রয়েছে। মিরপুরের লালকুঠি হাসপাতাল পরিবার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করে। তাই প্রস্তুত না হাসপাতালটি। আমিনবাজার ২০ শয্যা হাসপাতালেরও প্রস্তুতি নেই। কামরাঙ্গীরচর ৩১ শয্যা হাসপাতালে আউটডোর (বহির্বিভাগ) রয়েছে। ইনডোর নেই। রেলওয়ে হাসপাতালেও জনবল সংকট। ওটা রেলের হাসপাতাল। তিনি আরও বলেন, এখন করোনা কমে যাচ্ছে হয়তো এসব হাসপাতাল নাও লাগতে পারে।
ডেঙ্গুতে এখন পর্যন্ত ৪০ জনের মৃত্যু: স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, দেশে ডেঙ্গুতে চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে আগস্টের ২৫ দিনেই মারা গেছেন ২৮ জন। আর জুলাইতে ১২ জন। আক্রান্ত হয়ে গত মাসের চেয়ে চলতি মাসে তিনগুণ বেশি রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ঢাকার বাইরেও ডেঙ্গু বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ২৭৮ জন নতুন ডেঙ্গু রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে রাজধানীতেই রয়েছেন গত ২৪ ঘণ্টায় ২৩০ জন। আগস্ট মাসের ২৫ দিনে ৬ হাজার ১৯৫ জন ডেঙ্গু রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। গত জুলাই মাসেই ভর্তি হয়েছিলেন ২ হাজার ২৮৬ জন ডেঙ্গু রোগী। তার আগের মাসে এই সংখ্যা ছিল ২৭২ জন।
ঢাকার বাইরেও ডেঙ্গু বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকার বাইরে নতুন ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৪৮ জন। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মোট ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৯০ জন। ঢাকার ৪১টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে মোট ভর্তি রোগী আছেন ৯৮৭ জন। অন্যান্য বিভাগে বর্তমানে ভর্তি আছেন ১০৩ জন। চলতি বছরে এ পর্যন্ত মোট ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৮ হাজার ৮৫৩ জন। সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন ৭ হাজার ৭২১ জন।
এডিস মশার ঘাঁটি মগবাজার-ইস্কাটন-বাসাবো-গোড়ান: দেশে মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কিছুটা কমে এলেও এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার গত ২৯শে জুলাই থেকে ৭ই আগস্ট পর্যন্ত এক জরিপে দেখা গেছে, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির যথাক্রমে পাঁচটি করে সর্বমোট ১০টি ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় সর্বোচ্চ এডিস মশার ঘনত্ব পাওয়া যায়। ঢাকা উত্তরের পাঁচটি ওয়ার্ডের মধ্যে মগবাজার, নিউ ইস্কাটনে মশার ঘনত্ব শতকরা ৫৬ দশমিক ৭ ভাগ, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, নিকুঞ্জে ৪৮ দশমিক ৪ ভাগ, কল্যাণপুর, দারুস সালামে ৪৬ দশমিক ৭ ভাগ, মিরপুর-১০, কাজীপাড়ায় ৪৩ দশমিক ৩ ভাগ, মহাখালী, নিকেতনে ৪০ ভাগ ব্রুটেক্স ইনডেক্স পাওয়া যায়। অপরদিকে ঢাকা দক্ষিণের বাসাবো, গোড়ানে ৭৩ দশমিক ৩ ভাগ, এলিফ্যান্ট রোড, সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় ৬৬ দশমিক ৭ ভাগ, আর কে মিশন রোড, টিকাটুলিতে ৫০ ভাগ, বনশ্রীতে ৪০ ভাগ, মিন্টো রোড, বেইলী রোডে ৪০ ভাগ এডিস মশার ঘনত্ব পাওয়া গেছে। তবে উত্তর সিটির আফতাবনগর ও মেরুল বাড্ডা এবং দক্ষিণে বংশালে ব্রুটো ইনডেক্স শূন্য পাওয়া গেছে।